মুক্তির মিষ্টি। এন্টালির বাড়িতে জুডিথ ডিসুজার বোন অ্যাগনেস। শনিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
শুক্রবার রাত ১২টা। দিল্লিতে জেরম ডিসুজার ফোনটা বেজে উঠল, ‘দাদা, আমি মুক্ত। নতুন করে বাঁচতে চাই’।
কয়েক মিনিট পরেই কলকাতায় বাবা-মায়ের কাছেও ফোন এল, ‘আমি ছাড়া পেয়েছি’।
দু’টো ফোনের হাত ধরে গভীর রাতের কলকাতায় যেন একটা হালকা বাতাস ঢুকে পড়ল।
জুডিথ ডিসুজা। কলকাতার এন্টালির কাছে সিআইটি রোডের এই মেয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী
সংস্থার হয়ে নারী ও শিশুদের অধিকার নিয়ে আফগানিস্তানের কাবুলে বছরখানেক ধরে কাজ করছিলেন। গত ৯ জুন, বৃহস্পতি-সন্ধ্যায় কাবুল শহরে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে নিজের ফ্ল্যাটে ফেরার পথে তাঁকে অপহরণ করা হয়।
প্রায় ছ’সপ্তাহ পর শুক্রবার জুডিথকে মুক্তি দেয় অপহরণকারীরা। শনিবার সন্ধ্যায় কাবুল থেকে বিমানে দিল্লিতে পা রাখেন কলকাতার মেয়ে। রাজধানীর বিমানবন্দরে তখন বোনের অপেক্ষায় দাদা জেরম। রাতে, দিল্লিতে দাদার কছেই থেকে গিয়েছেন জুডিথ। পারিবারিক সূত্রের খবর, দিন দুয়েকের মধ্যে তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা।
দেড় মাসের উৎকণ্ঠা শেষে মেয়ের মুক্তির খবর পেয়ে স্বভাবতই এ দিন সকাল থেকে এন্টালির বাড়িতে উৎসবের মেজাজ। জুডিথের মুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাড়ির সামনে সকাল থেকে ছিল সংবাদমাধ্যম আর উৎসাহীদের ভিড়। খবর পেয়ে বাড়িতে হাজির হন বেশ কিছু আত্মীয় এবং বন্ধুও। যদিও ফ্ল্যাটের কাঠের দরজা পেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের ভিতরে প্রবেশের অধিকার ছিল না।
পুরোটা অবশ্য নিরাশ করেনি জুডিথের পরিবার। কাঠের দরজা খুলে কোলাপসিবল গেটের অন্য প্রান্তে দাড়িয়ে তাঁর বোন অ্যাগনেস বলেন, ‘‘আমার দাদা খবরটা প্রথম জানতে পারেন। আমরা চাইছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জুডিথ বাড়ি ফিরে আসুক। ভারত ও আফগান সরকারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’’ এ দিন দিল্লিতে নামার পরে কলকাতায় বোনের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন জুডিথ। কবে আসছেন কলকাতায়? অ্যাগনেস বলেন, ‘‘অপেক্ষা শেষের সেই দিনটা কবে, তা বলতে পারব না।’’ জুডিথের বাবা ডেনজিল ডিসুজা বলেন, ‘‘প্রায় দেড় মাস ধরে ভয়ানক মানসিক চাপের মধ্যে ছিলাম। তা থেকে আমরাও মুক্ত হলাম।’’
জুডিথের দাদা জেরম কর্মসূত্রে থাকেন বেঙ্গালুরুতে। বোনের অপহরণের খবর পাওয়ার পরের দিনই তিনি কলকাতায় চলে এসেছিলেন। গত বেশ কয়েক দিন ধরে তিনি দিল্লিতে রয়েছেন। এ দিন সেখান থেকেই ফোনে বলেন, ‘‘শুক্রবার রাতে শুধু আমার সঙ্গে নয়, সরাসরি বাবা-মায়ের সঙ্গে কলকাতায় ফোনে কথা বলেছে জুডিথ। ও মানসিক ভাবে যথেষ্ট শক্ত রয়েছে।’’
জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে জুডিথকে কাবুলে ছেড়ে দিয়ে যায় অপহরণকারীরা। প্রথমে তিনি নিজের দফতরে যান। সেখান থেকে যোগাযোগ করেন ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে। রাতেই চলে যান দূতাবাসে। জেরম বলেন, ‘‘ওর শরীর ভাল আছে। তবে ক্লান্ত। তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়।’’
লরেটোর সিস্টার সিসিলের প্রিয় ছাত্রী ছিলেন জুডিথ। সিস্টার সিসিলকে দেখেই সমাজসেবায় অনুপ্রেরণা। অপহরণের পর থেকে কলকাতার সমস্ত লরেটো স্কুলে প্রতিদিন একবার করে জুডিথের জন্য প্রার্থনা হয়েছে। সকালে স্কুল শুরুর আগে যে প্রার্থনা হয়, সেখানেই। ‘তুমি যেখানেই থাকো, সুস্থ থাকো। তাড়াতাড়ি ফিরে এসো’ — এই ছিল প্রার্থনার মূল বিষয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy