আদালতের রায় আসেনি এখনও। জেএনইউ কর্তৃপক্ষ শুনিয়ে দিলেন নিজেদের রায়। ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হল কানহাইয়া কুমারকে। অপরাধ, সংসদ হানায় যুক্ত আফজল গুরুর ফাঁসির বিরুদ্ধে এক অনুষ্ঠানে হাজির থাকা। এই একই অপরাধে এবিভিপি-র ছাত্রনেতা সৌরভ শর্মারও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারির ওই ঘটনায় শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে মোট ১৪ জন ছাত্রের। তালিকায় রয়েছেন উমর খালিদ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যও। আর্থিক জরিমানা ছাড়াও আগামী এক বা একাধিক সেমেস্টারের জন্য এই দু’জনকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কানহাইয়া বরাবরই বলে এসেছেন, ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি গিয়েছিলেন অনুষ্ঠানটির আয়োজক ও বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র প্রতিনিধিদের মধ্যে ঝামেলা থামাতে। তবু তাঁকে শাস্তি দেওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, ক্যাম্পাসে কোথাও অশান্তি ঠেকাতে এগিয়ে যাওয়াও কি তবে জেএনইউ কর্তৃপক্ষের চোখে অপরাধ? যদিও এই প্রশ্নকে আমল দিচ্ছেন না এবিভিপি নেতারা। তাঁদের দাবি, ঠিক বলছেন না কানহাইয়া। ওই অনুষ্ঠানের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোত ভাবেই জড়িত ছিলেন।
আজ অবশ্য শাস্তি নিয়ে মুখ খোলেননি কানহাইয়া। আর উমর বলেছেন, ‘‘একতরফা সিদ্ধান্ত। তদন্তের সময় আমরা জেলে ছিলাম। নিজেদের বক্তব্য রাখার সুযোগ পাইনি।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের অভিযোগ, শাসক দলের চাপেই ছাত্রদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই শাস্তি ঘোষণা করা হল। পরের পদক্ষেপ ঠিক করতে ছাত্র সংগঠনগুলি রাতেই আলোচনায় বসে। বৈঠক হবে কাল।
আফজল গুরুর ফাঁসির প্রতিবাদ অনুষ্ঠানে হাজির ও জড়িত থাকার অভিযোগে একে একে কানহাইয়া, অনির্বাণ, উমরকে গ্রেফতার করেছিল দিল্লি পুলিশ। আপাতত তাঁরা জামিন মুক্ত। ঘটনার ক’দিন পরেই গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গড়ে জেএনইউ। অভিযুক্ত ছাত্ররা তদন্ত কমিটির সামনে না এলেও, তদন্তে দেখা যায়, কর্তৃপক্ষের বারণ উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ওই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দেয় এ মাসের প্রথম সপ্তাহে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম জগদীশ কুমারের।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আজ জানা গিয়েছে, অনুষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ছিলেন উমর খালিদ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য, মুজিব গাট্টুরা। উমরকে এক সেমেস্টারের জন্য বরখাস্ত করার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনির্বাণকে জুলাই মাস পর্যন্ত বরখাস্ত করা হয়েছে। আগামী পাঁচ বছর তিনি ক্যাম্পাসে থাকতে পারবেন না। ওই অনুষ্ঠানে ভারত- বিরোধী স্লোগান দেওয়ায় কাশ্মীরের ছাত্র মুজিব গাট্টুকে দুই সেমেস্টারের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের দাবি, ‘একতরফা শাস্তি ঘোষণার পিছনে রাজনীতি রয়েছে। সংগঠনের সহসভাপতি শীলা রশিদের কথায়, ‘‘বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি সদস্যদের একতরফা বয়ানে এই শাস্তি। সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠের মতো কেন্দ্রের হুকুম তামিল না করে এক জন শিক্ষাবিদ হিসেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল উপাচার্যের।’’
কানহাইয়া শুরু থেকেই বলে এসেছেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আফজলের সমর্থনে অনুষ্ঠান করার বিরোধী ছিলেন। অনুষ্ঠানটির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে এবিভিপি-র প্রতিনিধিদের ঝামেলা বাধলে তিনি তা মেটাতে সেখানে যান। সূত্রের খবর, কানহাইয়ার যুক্তিতে মোটের উপরে সন্তুষ্ট তদন্ত কমিটি। তবু অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে নিয়ম ভেঙেছেন— এই যুক্তিতে কানহাইয়া ও এবিভিপি-র সৌরভকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জেএনইউ ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি আশুতোষ কুমারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে। হোস্টেলের দরজার বন্ধ থাকবে তাঁর জন্য। ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে রাম নাগা, অনন্ত কুমার, শ্বেতা রাজ, রুবিনা ও চিন্টু কুমারীর। এ ছাড়া পাঁচ বছর জেএনইউ হস্টেলে ঢোকা বারণ বনজ্যোৎস্না লাহিড়ী ও দ্রৌপদী ঘোষের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy