বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা সেই শহিদ স্মারক। করিমগঞ্জে। ছবি: শীর্ষেন্দু সী।
১৯৮৬ সালের ভাষা শহিদদের স্মরণ করল করিমগঞ্জ। কিন্তু ভাষার অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ ভাষা সংগ্রামীকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণই জানানো হল না। পাশাপাশি স্মারক নির্মাণের খরচ নিয়েও উঠল প্রশ্ন।
২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবস এ ভাবেই জড়াল বিতর্ক। গত কাল শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানের রেশ তাই থেকে গেল আজও। শহিদ দিবসের আলোচনা নিয়ে সরগরম থাকল গোটা করিমগঞ্জ। ভাষা সার্কুলারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন জগন্ময় দেব ও দিব্যেন্দু দাস। ভাষাশহিদের আত্মবলিদানের পর করিমগঞ্জ শহরে প্রথম শহিদ বেদি তৈরি করে ছাত্র মোর্চা সংগঠন। পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি শহিদ বেদি গড়ে উঠেছিল করিমগঞ্জ শহরে। বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন কেন্দ্রীয় ভাবে ২০০৫ সালে শম্ভুসাগর পার্কে একটি শহিদ স্মারক নির্মাণ করে।
প্রায় উনিশ বছর পর উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের তৎপরতায় মুখ্যমন্ত্রী তহবিল থেকে পাওয়া ১০ লক্ষ টাকায় তৈরি করা হয় আরও একটি শহিদ স্মারক। করিমগঞ্জের জেলাশাসককের বাসভবনের কাছেই তৈরি করা হয় স্মারকটি। শহিদ পরিবারের সদস্য, মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা গৌতম রায় গত কাল সেটি উন্মোচন করেন। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানেই বিতর্কের সূত্রপাত।
বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের শহর সমিতির প্রাক্তন সভাপতি রথীন্দ্র ভট্টাচার্য স্পষ্ট জানান, শহিদ বেদি নির্মাণে ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে তা তিনি মানতে নারাজ। স্মারক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি প্রকাশ্যেই বলেন, ‘‘প্রকল্পের জন্য স্মারক নির্মাণ, নাকি স্মারকের জন্য প্রকল্প। টাকা খরচের জন্যই শহিদ স্মারককে বেছে নেওয়া হয়েছিল, না কি স্মারক নির্মাণের জন্য অনুদান নিয়ে আসা হয়েছে?’’
গত কালের সেই বিতর্কের রেশ এ দিন বাড়তে থাকে। করিমগঞ্জ শহরে এখন শহিদ স্মারকের ব্যয় নিয়ে চর্চা চলছে। রথীন্দ্রবাবু এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানান— অসম সরকার বরাকের শহিদদের সরকারি স্বীকৃতি দেয়নি ঠিকই। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর তহবিল থেকে শহিদ বেদির জন্য ১০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর হওয়া প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, শহিদ বেদি নির্মাণে ‘পুকুর চুরি’ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বেদি তৈরির জন্য ১০ লক্ষ টাকা খরচের কথা বলা হয়েছে। ওই জায়গায় আগে শিশু উদ্যান ছিল। উদ্যানের দেওয়াল আগে থেকে তৈরি ছিল। সেখানে মাটি ভরাট করতে হয়নি। জমিও কিনতে হয়নি। তার পরও ১০ লক্ষ টাকা খরচ হল কী করে?’’ শহিদ স্মারকের ব্যয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তদন্তের দাবি জানান রথীন্দ্রবাবু। তাঁর বক্তব্য, ১০ লক্ষ টাকা খরচে বরাক উপত্যকায় একটি দর্শনীয় শহিদ বেদি তৈরি করা যেত। তাতে বরাকের বাইরে থেকে আসা লোকরাও অন্তত এক বার শহিদ স্মারক দেখে যেতেন পারতেন।
এ দিকে, ভাষা শহিদদের বরাক উপত্যকা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করলেও ১৯৮৬ ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রতিবাদী শিবাশিস দাসকে ভুললেন সবাই। অসমের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্তের করিমগঞ্জ সফরের সময় হাতে কালো পতাকা নিয়ে ভাষা সার্কুলারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সরকারি স্কুলের মাঠে গিয়েছিলেন তিনি। পুলিশ এলোপাথারি গুলি চালায়। জখম হন শিবাশিসবাবু। কোমরে গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই ‘আমাদের ভাষা, বাংলা ভাষা’ স্লোগান বলে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসে ব্রাত্য থাকায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘‘শহিদ স্মারক উন্মোচন করা হল ঠিকই, কিন্তু আয়োজকরা আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর সৌজন্যও দেখালেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy