Advertisement
০২ মে ২০২৪

শিবসেনা-এনসিপি সঙ্গে এলেও হাতছাড়া কেজরী

নোট বাতিলের বিরোধিতায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দেখা করার অভিযানে কংগ্রেস, বাম-সহ অন্য বিরোধীরা যে সামিল হবে না তা গত কালই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

দিল্লি যাওয়ার আগে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী। — নিজস্ব চিত্র।

দিল্লি যাওয়ার আগে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২২
Share: Save:

নোট বাতিলের বিরোধিতায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর দেখা করার অভিযানে কংগ্রেস, বাম-সহ অন্য বিরোধীরা যে সামিল হবে না তা গত কালই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এক মাত্র পাশে পাওয়ার আশ্বাস জুটেছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল ও জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার থেকে। এই পরিস্থিতিতে ‘আপ্রাণ চেষ্টা করে’ উদ্ধব ঠাকরেকে মমতা আজ বন্ধু হিসাবে পেলেন ঠিকই, কিন্তু শিবসেনা সঙ্গী হওয়ায় কর্মসূচি থেকে সরে গেল কেজরীবালের আম আদমি পার্টি। সুতরাং বলাই যায়, মোদী-বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টায় শুরুতেই ধাক্কা খেল তৃণমূল। তবে রাতের খবর, শরিক শিবসেনাকে বুঝিয়ে নিবৃত্ত করার সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। কাল শেষ মুহূর্তে তারা যদি সরে যায়, কেজরীবালের দলের কেউ যাতে মমতার সঙ্গী

হন, সে বিষয়ে তৎপর হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

কাল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার জন্য আজ বিকেলে দিল্লি পৌঁছন মমতা। রাজধানীর উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে কলকাতায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘দেখুন আমি সবার সঙ্গে কথা বলছি। রাহুল গাঁধী, মুলায়ম সিংহ, নীতীশ কুমার, লালু প্রসাদ সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। বলেছি, ইগো বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চলুন। ওঁরা কেউ নেতৃত্ব দিতে চাইলে সমস্যা নেই। আমি পিছনে থেকেই লড়ব।’’

পরে দিল্লি পৌঁছে তৃণমূল নেত্রী জানান, ‘‘শিবসেনার সঙ্গে কথা হয়েছে। ওরাও চলতি পরিস্থিতির প্রতিবাদে আমাদের সঙ্গে কাল রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে।’’ সন্ধ্যায় মণীশ শিসৌদিয়াকে নিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। দু’তরফের মধ্যে কেন্দ্র-বিরোধী রাজনীতির কৌশল নিয়ে কথা হয়। কিন্তু শিবসেনা সঙ্গী হচ্ছে শুনে বেঁকে বসেন কেজরীবাল। মমতা তাঁকে বোঝান, এটা কোনও জোট নয়, এমনকী মঞ্চও নয়। মানুষের অসুবিধার বিষয়টি শুধু তুলে ধরা উদ্দেশ্য। তাতে এনডিএ জোটের মধ্য থেকে কেউ এগিয়ে এলে তো ভালই। কিন্তু কেজরীবালের দল রাতে জানিয়ে দেয়— কাল তারা রাষ্ট্রপতি ভবনে যাচ্ছে না। তবে, এটা আসল কারণ কি না, তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কেজরীবালকে উপরোধ-অনুরোধ পর্ব অবশ্য রাতেও জারি রয়েছে। এমনকী কেজরীর বদলে অন্য কোনও আপ নেতা গেলেও এখন আপত্তি নেই তৃণমূলের।

সন্দেহ নেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার কর্মসূচি থেকে কেজরীবাল সরে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। কারণ, এই কর্মসূচি ঘোষণার সময় যে রকম আবহ তৈরি হয়েছিল, তা ক্রমশই স্তিমিত হচ্ছে। শুরুতে আশা করা হয়েছিল, কংগ্রেস, সপা, আরজেডি, সংযুক্ত জনতার মতো দাপুটে বিরোধীরা পাশে থাকবেন। কিন্তু এখন অন্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে মমতার বিভাজন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কংগ্রেস, জেডিইউ-সহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি যেখানে কাল থেকে শুরু হওয়া সংসদে সরকারকে বিঁধতে চাইছেন, সেখানে মমতা কাল যাবেন রাষ্ট্রপতির দরবারে। শিবসেনা ছাড়া তাঁর সঙ্গে থাকবেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা এবং এনসিপি নেত্রী সুপ্রিয়া সুলে।

প্রশ্ন হল, অন্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে তৃণমূলের কেন এই বিভাজন তৈরি হল। কারণ, অধিকাংশ বিরোধী দল নোট বাতিলের নীতির পক্ষে। তাঁরা কেন্দ্রের সমালোচনা করছেন মানুষের হয়রানির জন্য। কিন্তু তৃণমূল নোট বাতিলের নীতিরই বিরোধিতা করছে। রাহুল গাঁধী আজও টুইটে বলেন— ‘‘এক বার যা হয়ে গিয়েছে, আমরা তা ফিরিয়ে নিতে বলছি না। কিন্তু মানুষের সমস্যার তো সুরাহা হওয়া দরকার!’’ আবার সংসদে ১১টি বিরোধী দলের বৈঠকে আজ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে তা তাড়াহুড়ো করে নেওয়া। কিছু দিনের জন্য একে বাতিল করা হোক।’’ বৈঠকে উপস্থিত কংগ্রেস, বাম, সপা, বসপা নেতারা কিন্তু এই দাবি তোলেননি। তাঁরা সরব ছিলেন এই ঘটনায় মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি নিয়ে। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘সরকার যে অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি করেছে সংসদে সম্মিলিত ভাবে তার প্রতিবাদ জানানো হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়াই যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে— ভারতে রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রিক গণতন্ত্র নয়, সংসদীয় গণতন্ত্র চালু রয়েছে।’’

মহারাষ্ট্রে বিজেপি এবং শিবসেনার মধ্যে সম্পর্ক মোদী জমানায় কোনও দিনই মসৃণ হয়নি। এক বার ছাড়াছাড়িও হয়ে গিয়েছিল। ফের জোড়া লাগলেও বাল ঠাকরে পরবর্তী জমানায় বিজেপিই এখন ‘দাদা’। সেই গাত্রগাহ থেকে উঠতে বসতে নানা বিষয়ে শিবসেনা হুমকি ছাড়ে। নোট বাতিলের বিরোধিতাও সে কারণেই। তবে এনডিএ-র নেতাদের কথা শুনে তারা শেষ পর্ষন্ত মমতার সঙ্গে না-যেতেও পারেন উদ্ধবরা।

তবে আপাতত তৃণমূলের চিন্তা কালকের কর্মসূচি সফল করা। সে দিক থেকে নাটকীয় পরিবেশ তৈরির চেষ্টায় ত্রুটি রাখতে চাইছেন না সুদীপ-ডেরেক ও’ব্রায়েনরা। ঠিক হয়েছে, দুপুর ১টা নাগাদ সংসদে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে তৃণমূল, শিবসেনা ও এনসিপি সাংসদরা জড়ো হবেন। তার পর মমতার নেতৃত্বে তাঁরা মিছিল করে যাবেন রাইসিনা পাহাড়ের দিকে। তার আগে আজ রাতে মমতা ফের বলেন, ‘‘এটা অর্থনৈতিক বিপর্যয়। আমরা মনে করি আর অপেক্ষা করার সময় নেই। রুগি মারা যাওয়ার পর ডাক্তার ডেকে লাভ কী!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation AAP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE