Advertisement
E-Paper

২২ ঘণ্টা খাটানো হত ২৬ শিশুকে, নইলে হাতুড়ির ঘা, খাস দিল্লির কাণ্ড

এক চিলতে ঘরে মাল রাখার মতো ঠেসে রাখা হত শিশুগুলোকে। ঘুমনোর সময় ছিল মাত্র দু’ঘণ্টা। আর তারপর টানা ২২ ঘণ্টা ধরে ঠায় বসে কাজ। কাজে সামান্য ভুলচুক হলেই বেধড়ক মার।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৭ ১৪:৩২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

এক চিলতে ঘরে মাল রাখার মতো ঠেসে রাখা হত শিশুগুলোকে। ঘুমনোর সময় ছিল মাত্র দু’ঘণ্টা। আর তারপর টানা ২২ ঘণ্টা ধরে ঠায় বসে কাজ। কাজে সামান্য ভুলচুক হলেই বেধড়ক মার। আর সবচেয়ে দেরিতে যে কাজ শেষ করবে তার জন্য ছিল আলাদা শাস্তির ব্যবস্থা। হাতুড়ির ঘা পড়ত তার শরীরে। উত্তর-পূর্ব দিল্লির সিলামপুরের এক জিনস‌ কারখানায় বছরের পর বছর এ ভাবেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল শিশুরা। সম্প্রতি পুলিশের সাহায্যে সেখান থেকেই ২০ জন শিশুকে উদ্ধার করে নোবেল জয়ী কৈলাশ সত্যার্থীর সংস্থা ‘বচপন বাঁচাও আন্দোলন’। নোবেলজয়ী কৈলাশ জানান, যখন তাদের উদ্ধার করা হয় তারা এতটাই দুর্বল ছিল যে, হাঁটতে পর্যন্ত পারছিল না। সারা শরীরে ক্ষত ছিল। এমনকী ঠিক মতো চোখ চেয়ে তাকাতেও পারছিল না। চিকিৎসার পর একটু একটু করে সুস্থ হচ্ছে তারা। পুলিশ জিনস‌ কারখানার মালিককে গ্রেফতার করেছে।

কী ভাবে সামনে এল এই ঘটনা?

কৈলাশ সত্যার্থী জানান, দিন কয়েক আগে দিল্লির আনন্দবিহার রেল স্টেশনে ৬ শিশুকে ইতিউতি ঘুরে বেড়াতে দেখতে পান তাঁর এনজিও-র কর্মীরা। ভীষণ আতঙ্কগ্রস্ত ছিল তারা। প্রথমে কর্মীদের কোনও কথারই জবাব দিচ্ছিল না। ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছিল। তার পর আস্তে আস্তে মুখ খোলে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদেই জানা যায়, সিলামপুরের ওই জিনস কারখানা থেকে সুযোগ বুঝে পালিয়ে এসেছে। কিন্তু তাদের মতো আরও অনেকেই ওই কারখানায় তখনও বন্দি হয়ে রয়েছে। কারখানায় তাদের সেই ভয়ানক অভিজ্ঞতার কথা শুনে চমকে যান এনজিও-র কর্মীরা।

ওই শিশুরা জানায়, রোজ সকাল ৭টা থেকেই শুরু হয়ে যেত তাদের কাজ। কারখানার মালিক বস্তা বস্তা জিনসের প্যান্ট তাদের দিয়ে যেত। যেগুলোর সুতো কেটে প্যাকিং করতে হত। রোজ এক একজন পাঁচ হাজার করে জিনস এই ভাবে প্যাকিং করে যেত। সকাল ৭টা থেকে পরের দিন ভোর ৫টা পর্যন্ত একই ভাবে বসে কাজ করতে হত তাদের। জল খেতে বা বাথরুমে যাওয়ারও অনুমতি মিলত না। মুহূর্তের জন্যও যদি কেউ ঝিমিয়ে পড়ত বা কাজ থামিয়ে ফেলত, তাহলে তাকে লাঠি, রড এমনকী হাতুড়ি দিয়েও পেটানো হত। আর যে দিন যে সবচেয়ে দেরিতে কাজ শেষ করত তাকে সে দিন হাতুড়ি দিয়ে আরও নির্মম ভাবে মারা হত। খাওয়া-দাওয়াও ছিল খুবই নিম্নমানের। দু’বেলা এক মুঠো করে ভাত আর কয়েক টুকরো আলুসিদ্ধ মাত্র। বিষয়টি জানতে পেরেই ওই সংস্থার কর্মীরা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের থেকে ঠিকানা জেনেই পুলিশ জিনস কারখানায় তল্লাশি চালিয়ে বন্দি থাকা বাকি শিশুদের উদ্ধার করে।

আরও পড়ুন: দেশে ফিরে যাও! বলেই ফের ভারতীয়কে গুলি আমেরিকায়, এবার কেন্টে

প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, বিহার থেকে পাচার হয়েই তারা এখানে পৌঁছেছে। কারখানার মালিককে জেরা করে ওই পাচার চক্রের সন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ। যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে শিশুগুলোর পরিবারের সঙ্গেও।

Child Trafficking Delhi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy