কেন্দ্রের শ্রমিক বিরোধী নীতি এবং রেল-প্রতিরক্ষা-বিমায় বিদেশি পুঁজির বিরুদ্ধে এখনই রেল ধর্মঘট ডাকা হোক। রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মঘট ঘোষণা করা হোক।
ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের শীর্ষনেতার মুখে এ কথা শুনে চমকে উঠেছিলেন বাম ও কংগ্রেসি শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতারা। কারণ ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ বা বিএমএস সঙ্ঘ-পরিবারের অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠন। কেন্দ্রে ও রাজস্থানে, দুই জায়গাতেই বিজেপি-র সরকার। আর সেই সরকারের নীতির বিরুদ্ধেই কি না একেবারে জেহাদ ঘোষণা করতে চাইছেন বিএমএস নেতৃত্ব!
শেষে বাম ও কংগ্রেসি শ্রমিক নেতারাই নিরস্ত করলেন তাঁদের। বোঝানোর চেষ্টা করেন, সবে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এখনই ধর্মঘটের পথে গেলে তাতে নেতিবাচক বার্তা যাবে।
শ্রম আইনের সংশোধন, বিমা-প্রতিরক্ষা-রেলে বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধে রণকৌশল তৈরি করতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে বিএমএস-এর সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায় প্রস্তাব দেন, সবাই মিলে রেল ধর্মঘট করার চেষ্টা করা উচিত। শিল্প মহলের দাবি মেনে শ্রম আইনের সংশোধন করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রথমে রাজস্থানে এই সব পরীক্ষানিরীক্ষা হচ্ছে। সেখানে সফল হলে তা কেন্দ্রে অনুকরণের চেষ্টা হচ্ছে। কাজেই রাজস্থানে বন্ধের ডাক দেওয়া হোক। শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, এখনই সিদ্ধান্ত না নিয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দিল্লিতে সর্বভারতীয় সম্মেলন হবে। সেখানেই পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত হবে। বৈঠকে উপাধ্যায় বলেন, বিজেপি ও সরকারের মধ্যেও মোদী ঢেউ চলছে। প্রধানমন্ত্রী তাই কারও কথাই শুনছেন না।
সদস্য সংখ্যার হিসেবে গোটা দেশে বিএমএস এখন শীর্ষ স্থানে। মোদী সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএমএস থাকলে আন্দোলন স্বাভাবিক নিয়মেই জোরদার হবে। এআইটিইউসি নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, “মনমোহন-সরকারের জমানায় কংগ্রেসি শ্রমিক সংগঠন হলেও আইএনটিইউসি আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে নেমেছিল। এখন সঙ্ঘ-পরিবারের অনুমোদিত হলেও বিএমএস আমাদের সঙ্গে। শ্রমিকদের স্বার্থে আমরা দলমত নির্বিশেষে কাজ করছি।” শ্রমিক নেতাদেরও যুক্তি, আইন অমান্য, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা করে ধর্মঘটের মতো অনেক পথ রয়েছে। এ ছাড়া, রাজস্থানে বন্ধের বিষয়ে সেখানকার শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হবে।
সঙ্ঘ-পরিবারের সদস্য হয়েও বিএমএস মোদী-সরকারের বিরুদ্ধে এত কড়া অবস্থান নিচ্ছে কেন? ব্রিজেশ উপাধ্যায়ের যুক্তি, “কেন্দ্রে যে সরকারই থাকুক, শ্রমিকদের স্বার্থে নীতি নেওয়া হলে আমরা সমর্থন করি। নচেৎ বিরোধিতার পথে যাই।” বিজেপির একটি সূত্র অবশ্য বলছে, বিএমএস আন্দোলনে নামলে ক্ষতির কিছু নেই। গণতন্ত্রে বিরোধিতা থাকবেই। বিএমএস-ই তাতে নেতৃত্ব দিলে বিরোধিতার জায়গাটাও অন্য কারও হাতে চলে যাওয়ার বদলে সঙ্ঘ-পরিবারের হাতেই থাকবে।
সেই কারণেই বিএমএস-কে নিরস্ত করা হচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy