Advertisement
১৩ জুন ২০২৪
Parliament Security Breach

ললিতের দল গড়া শুরু দেড় বছর আগেই

দিল্লি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার সংসদের ভিতরে ও বাইরে রং-ভর্তি যে গ্যাস ক্যানিস্টারগুলি খুলেছিলেন অভিযুক্তেরা, সেগুলি চিনে তৈরি।

lalit jha

পাটিয়ালা হাউস কোর্টের পথে সংসদ-কাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত ললিত ঝা। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫১
Share: Save:

সংসদ কাণ্ডে ধৃত চার সঙ্গীর মতোই আজ ওই ঘটনার মূল মস্তিষ্ক ললিত ঝাকে সাত দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল পাটিয়ালা আদালত। এই ঘটনায় ললিতদের সঙ্গে ভিকি নামে আর এক যুবকের নাম উঠে এলেও তাঁকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি।

দিল্লি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বুধবার সংসদের ভিতরে ও বাইরে রং-ভর্তি যে গ্যাস ক্যানিস্টারগুলি খুলেছিলেন অভিযুক্তেরা, সেগুলি চিনে তৈরি। কোনও বদ্ধ জায়গায় সেগুলি ব্যবহার করা উচিত নয় বলে সতর্কবার্তা লেখা ছিল ওই ক্যানিস্টারের গায়েই। লোকসভার দর্শকাসন থেকে কক্ষের মধ্যে লাফ দেওয়া দুই যুবক সাগর শর্মা এবং ডি মনোরঞ্জন তাঁদের বাঁ পায়ের জুতোয় গর্ত করে ওই ক্যানিস্টার নিয়ে ঢুকেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের কাছ থেকে যে লিফলেট পাওয়া গিয়েছে, তাতে মণিপুরের সংঘর্ষের উল্লেখ রয়েছে।

সাগর ও মনোরঞ্জন যখন লোকসভার ভিতরে রঙের কৌটো খুলেছিলেন, তখন সংসদের ঠিক বাইরে একই রকম গ্যাস ক্যানিস্টার খুলে সরকার-বিরোধী স্লোগান দিয়ে গ্রেফতার হন নীলম আজ়াদ এবং অমল শিন্দে নামে আরও দু’জন। সব মিলিয়ে চার জনের যে দলটি সে দিন সংসদের ভিতরে-বাইরে হইচই বাধিয়েছিল, তাদের চালনা করার নেপথ্যে ললিতের হাত রয়েছে বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। আজ পাটিয়ালা আদালতে দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভগৎ সিংহের ভীষণ রকম ভক্ত ললিত। সেই সূত্র ধরেই বাকিদের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। ধৃত চার জনের মধ্যে সাগর, অমল ও মনোরঞ্জনের সঙ্গে প্রায় দেড় বছর আগে বেঙ্গালুরুতে দেখা করেন ললিত। সেখানে বসেই সংসদে এই কাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। শেষ ধাপে দলে যোগ দেন নীলম আজ়াদ। মূলত কৃষক আন্দোলন ও মহিলা কুস্তিগিরদের ধর্না-প্রতিবাদে নীলমের সরকার-বিরোধী মনোভাব দেখে তাঁকেও দলে টেনে নেন ললিত।

ঘটনার দিন সংসদের বাইরে রং-ভর্তি ক্যানিস্টার খোলা ও স্লোগান-প্রতিবাদের গোটা পর্বটির ভিডিয়ো করে তা পরিচিতদের কাছে পাঠানোর পাশাপাশি ও সমাজমাধ্যমে আপলোডও করেছিলেন ললিত। তার পরেই তিনি দিল্লি ছেড়ে সোজা রাজস্থানে বন্ধুর বাড়িতে চলে যান। কিন্তু গত কাল রাতে ফের রাজধানীতে ফিরে এসে সংসদ ভবন লাগোয়া কর্তব্য পথ থানায় আত্মসমর্পণ করেন ললিত। দাবি করেন যে, গোটা দেশে তাঁকে খোঁজা হচ্ছে জেনেই আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে ললিতকে গত কাল রাতেই দিল্লি পুলিশের বিশেষ শাখার হাতে তুলে দেওয়া হয়।

আজ আদালতে দিল্লি পুলিশ জানায়, সংসদের ঘটনার পুনর্নিমাণের জন্য অভিযুক্তদের লখনউ, মুম্বইয়ের মতো শহরে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তেমন দরকার হলে সংসদেও নিয়ে যাওয়া হবে তাঁদের। সেই কারণে ললিতকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়েছিল দিল্লি পুলিশ। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে অন্যদের মতোই সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় পাটিয়ালা আদালত। দিল্লি পুলিশ সূত্রের দাবি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ললিত স্বীকার করে নিয়েছেন যে, সংসদের ঘটনার মূল মাথা তিনিই। কী কারণে তাঁরা ওই কাজ করলেন, তাঁদের আসল উদ্দেশ্যই বা কী ছিল, কোথা থেকে তাঁরা অর্থসাহায্য পেয়েছিলেন, সে সবই এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে ধৃতেরা জানিয়েছেন, তাঁরা এমন কিছু কাজ করতে চাইছিলেন, যাতে সরকার নড়চড়ে বসে। সেই লক্ষ্যেই লোকসভায় রঙের ক্যানিস্টার খোলার মতো কাণ্ড ঘটিয়েছেন তাঁরা।

সূত্রের খবর, গত রাতে ললিত ও তাঁর সঙ্গী মহেশ যখন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে আসেন, তখন তাঁদের কাছে কোনও মোবাইল ফোন ছিল না। ললিত পুলিশের কাছে দাবি করেন, তিনিই বাকি চার জনের মোবাইল পুড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও মোবাইলের বিষয়ে ললিত সত্যি কথা বলছেন কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সূত্র বলছে, ওই চার জনের মোবাইলগুলি যদি নষ্ট করা না হয়ে থাকে, তা হলে এই মুহূর্তে তাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল, মোবাইলগুলি উদ্ধার করে তা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা। এই ঘটনায় ললিতের খুড়তুতো ভাই উমেশকেও আটক করেছে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকেই পুলিশ প্রথম জানতে পারে, ললিত ও মহেশ কোথায় রয়েছেন। উমেশের সঙ্গে সংসদের ঘটনায় কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Parliament Security Breach Lalit Jha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE