ইঙ্গিতটা আগেই দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এখন পরিষ্কার যে জমি আইন সংস্কারের ভার কার্যত রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক পরিত্রাণের পথ খুঁজতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
কী ভাবে? বর্তমান জমি আইন রাতারাতি সংশোধন করে শিল্প করিডর থেকে শুরু করে পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের অধিকার সরকারের হাতে আনতে চেয়েছিলেন মোদী-জেটলি। সে ক্ষেত্রে কৃষকদের প্রাক সম্মতি নেওয়া ও সামাজিক প্রভাব নিরীক্ষার শর্তও অধ্যাদেশ জারি করে তুলে দিয়েছিল সরকার। মোদীর জমি নীতি নিয়ে বিরোধীদের মূল বিরোধিতার বিষয় ছিল সেটাই। এবং তা হাতিয়ার করে ‘স্যুট বুটের সরকার’ বলে লাগাতার মোদীকে কটাক্ষ করে রাজনৈতিক জমি উদ্ধারে নেমে পড়েছিলেন রাহুল গাঁধী। বিরোধিতা শুরু হয়েছিল বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের ভিতর থেকেও। সংস্কারের সাহসিকতা দেখাতে এ ভাবে রাজনৈতিক হাত পোড়ার আশঙ্কাতেই পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। গতকাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এ ব্যাপারে সবিস্তার আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী স্থির করেছেন, বর্তমানে যে সংশোধন প্রস্তাব করেছে কেন্দ্র তা রাজ্যের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। কোনও রাজ্য চাইলে কৃষকদের প্রাক সম্মতি নিয়ে জমি অধিগ্রহণ করতেই পারে। সামাজিক প্রভাব নিরীক্ষার বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ইচ্ছা অনিচ্ছা তথা নীতির ওপর নির্ভর করবে। কেন্দ্রের আইন কেবল একটি আদর্শ আইন হিসাবে থেকে যাবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী আজ বলেন,‘‘যে রাজ্য দ্রুত উন্নয়ন চাইবে তারা এই আইন অনুসরণ করবে, যারা চাইবে না তারা অনুসরণ নাও করতে পারে।’’
বর্তমান জমি আইনে যে সংশোধন প্রস্তাবগুলি করেছিল সরকার তা এখন সংসদের যৌথ কমিটির বিচারাধীন। ৩ অগস্ট ওই কমিটি চূড়ান্ত সুপারিশ পেশ করবে। সরকারের শীর্ষ সূত্র বলছে, কমিটির সুপারিশ ও জমি আইন সংশোধন নিয়ে সম্প্রতি নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীদের দেওয়া পরামর্শ মেনে সরকার নিজেই ফের একটি সংশোধন প্রস্তাব আনবে। তাতে সুস্পষ্ট ভাবে বলা হবে, ‘‘কেন্দ্রের আইনটি রাজ্যকে পথ দেখাবে মাত্র। সংবিধানের ২৫৪ (২) ধারা অনুযায়ী রাজ্যগুলি তাদের পৃথক জমি আইন প্রনয়ণ করতে পারে।’’ সূত্রের মতে, শিল্প করিডর নির্মাণের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের এক্তিয়ার সরকারের হাতে রাখার প্রস্তাবও প্রত্যাহার করে নেওয়া হতে পারে। কারণ শিল্প করিডরের নামে জাতীয় সড়কের উভয় পাশে এক কিলোমিটার করে পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে আর এস এসও।