Advertisement
১২ ডিসেম্বর ২০২৪

খুনি কে, একমত নন ভাইবোনই

এই প্রসঙ্গেই কেউ কেউ তুলছেন লঙ্কেশ পরিবারের পুরনো অশান্তির কথা। গৌরীর বাবা, সাংবাদিক পি লঙ্কেশ ছিলেন সাপ্তাহিক কাগজ ‘লঙ্কেশ পত্রিকে’-র মালিক।

প্রতিবাদ: গৌরী লঙ্কেশ খুনের ঘটনায় বিক্ষোভ দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

প্রতিবাদ: গৌরী লঙ্কেশ খুনের ঘটনায় বিক্ষোভ দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৪৫
Share: Save:

গত সপ্তাহে মা ইন্দিরার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন গৌরী লঙ্কেশ। বর্ষীয়ান সাংবাদিক মা আর বোন কবিতাকে বলেছিলেন, বাড়ির আশপাশে কিছু লোককে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছেন তিনি। কবিতার দাবি, গৌরীকে তাঁরা বলেছিলেন, ঘটনাটা পুলিশকে জানাতে। কিন্তু গৌরী বলেন, এখনই কিছু জানাবেন না। আবার যদি লোকগুলোকে দেখেন, তখন বলবেন। এর পর গত মঙ্গলবার রাত ৮টা ২৬ মিনিটে অচেনা একটি নম্বর থেকে ফোন পান ইন্দিরাদেবী। জানতে পারেন, রক্তে ভাসছেন তাঁর বড় মেয়ে।

কে করেছিল ফোন? জানা যায়নি। ওই নম্বরের মালিককে খুঁজছে পুলিশ। ধরা পড়েনি আততায়ীও। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া জানিয়েছেন, পুলিশের শীর্ষ কর্তার সঙ্গে বেশ কয়েক বার দেখা করলেও কোনও অভিযোগ জানাননি গৌরী। তাঁর প্রাণসংশয়ের কোনও খবরও ছিল না পুলিশের কাছে। ধোঁয়াশা এখানেই। কারণ, গৌরীর ভাই ইন্দ্রজিতের দাবি, মাওবাদীরা হুমকি দিচ্ছিল তাঁর দিদিকে। কিন্তু অনেকে তো গৌরীর বিরুদ্ধেই মাওবাদী-ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলতেন? ইন্দ্রজিতের দাবি, কর্নাটক সরকারের সঙ্গে জোট বেঁধে মাওবাদীদের মূল স্রোতে ফেরাচ্ছিলেন গৌরী। জঙ্গিদের একাংশ এটা ভাল ভাবে নেয়নি। গোপন সূত্রে তিনি জেনেছিলেন, গৌরীর প্রাণের ঝুঁকি আছে। অথচ কবিতার দাবি, গৌরীর খুনের সঙ্গে মাওবাদীদের কোনও যোগ নেই। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ইন্দ্রজিৎ এত জানলেন কী করে? তিনি তো গৌরীর সঙ্গে থাকতেনই না!

এই প্রসঙ্গেই কেউ কেউ তুলছেন লঙ্কেশ পরিবারের পুরনো অশান্তির কথা। গৌরীর বাবা, সাংবাদিক পি লঙ্কেশ ছিলেন সাপ্তাহিক কাগজ ‘লঙ্কেশ পত্রিকে’-র মালিক। একটি সূত্রের দাবি, ২০০০ সালে বাবার মৃত্যুর পরে গৌরী-ইন্দ্রজিতের মধ্যে কাগজের মালিকানা ও মতাদর্শ নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। অতি-বাম রাজনীতির প্রতি গৌরীর ‘সহানুভূতিশীল’ দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করতেন না ইন্দ্রজিৎ। সূত্রটির দাবি, ২০০৫ সালে দিদি ও ভাই পরস্পরের বিরুদ্ধে পুলিশেও অভিযোগ করেন। অফিস থেকে একটি কম্পিউটার, প্রিন্টার ও স্ক্যানার খোয়া যাওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন ইন্দ্রজিৎ। গৌরী পাল্টা অভিযোগ করেন, ইন্দ্রজিৎ তাঁকে রিভলভার নিয়ে শাসিয়েছিলেন।

পরে অবশ্য নিজের আলাদা কাগজ শুরু করেন গৌরী। নাম দেন ‘গৌরী লঙ্কেশ পত্রিকে।’ ইন্দ্রজিতের দাবি, তাঁর ও গৌরীর মধ্যে শুধুমাত্র মতাদর্শ নিয়েই বিরোধ ছিল, সম্পত্তি নিয়ে নয়। তাঁদের সম্পর্ক মোটেও চুকে যায়নি। কিন্তু অনেকে তো ইন্দ্রজিৎকেই ‘বিজেপির সদস্য’ বলছেন! সে কথা অস্বীকার করে গৌরীর ভাইয়ের দাবি, তিনি কখনওই বিজেপিতে যাবেন না।

কেন্দ্রের শাসক দলের অস্বস্তি অবশ্য জারি। আজই ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে কর্নাটকের বিজেপি বিধায়ক জীবরাজকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আরএসএসের বিরুদ্ধে গৌরী যে ধরনের লেখা লিখতেন, তা না লিখলে হয়তো বেঁচে যেতেন তিনি।’’ একটি মার্কিন পত্রিকা লিখেছে, ‘নরেন্দ্র মোদী যদি এই হত্যাকাণ্ড এবং হিন্দু সন্ত্রাসের সমালোচকদের হেনস্থার নিন্দা না করেন, তা হলে ভারতীয় গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Murder Gauri Lankesh Journalist Bengaluru গৌরী লঙ্কেশ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy