Advertisement
০২ মে ২০২৪

ব্যাঙ্ক সকলের, আজ শুরু জন-ধন যোজনা

দেশের সাড়ে সাত কোটি পরিবারের প্রতিটিতে অন্তত দু’জনের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে নরেন্দ্র মোদী আগামিকাল সূচনা ঘটাবেন ‘প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা’র। লক্ষ্য, প্রথম দিনেই এক কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা। মোদী সরকারের এই প্রথম বড় প্রকল্পকে সফল করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, এমনকী মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলিকেও মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়ে দিয়েছে, এখন থেকে কোনও নথিপত্র ছাড়াই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০০
Share: Save:

দেশের সাড়ে সাত কোটি পরিবারের প্রতিটিতে অন্তত দু’জনের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে নরেন্দ্র মোদী আগামিকাল সূচনা ঘটাবেন ‘প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনা’র। লক্ষ্য, প্রথম দিনেই এক কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা। মোদী সরকারের এই প্রথম বড় প্রকল্পকে সফল করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, এমনকী মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলিকেও মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়ে দিয়েছে, এখন থেকে কোনও নথিপত্র ছাড়াই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। অ্যাকাউন্ট খোলার ছ’মাসের মধ্যে নথিপত্র জমা দিলেই হবে। ব্যাঙ্কের পরিষেবা নেওয়া যাবে যে কোনও মোবাইল ফোন থেকে। ইন্টারনেটের প্রয়োজন পড়বে না, স্রেফ এসএমএসেই হাতের মুঠোয় আসবে ব্যাঙ্ক। কাল সেই পরিষেবারও সূচনা ঘটাবেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রকল্পে গতি আনতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আজ কেওয়াইসি শর্ত শিথিল করেছে। কাল থেকে সাধারণ মোবাইলের মাধ্যমেই জানা যাবে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কত টাকা রয়েছে। বদলে ফেলা যাবে এটিএম-এর পিন। নতুন চেক বইয়ের জন্যও আবেদন করা যাবে। এমনকী, এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকাও পাঠানো যাবে। এত দিন মোবাইল থেকে এ সব করতে গেলে ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন পড়ত।

সকলের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে মোদী সরকারকে দু’দিকে চেষ্টা চালাতে হয়েছে মাস আড়াই ধরে। এক দিকে চেষ্টা চলেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তাদের পাশে পাওয়ার। এ জন্য রির্জাভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি দেশের ৭ লক্ষ ২৫ হাজার ব্যাঙ্ক অফিসারকে ব্যক্তিগত ভাবে ইমেল পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্য দিকে সব মোবাইলে ব্যাঙ্কের পরিষেবা চালু করতে চাপ তৈরি করা হয়েছিল মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলির উপরেও। প্রকল্প শুরুর আগে দু’দিকেই সফল মোদী সরকার। আজ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য যে সব নথিপত্র প্রয়োজন হয়, সেই ‘কেওয়াইসি শর্ত’ (নো ইয়োর কাস্টমার নর্মস) শিথিল করেছে। অন্য দিকে মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলিও এসএমএসের মাধ্যমেই ব্যাঙ্কের বেশ কিছু সুবিধা দিতে রাজি হয়েছে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আজ জানিয়েছে, যারা কোনও নথিপত্র ছাড়াই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে চান, তাদের অ্যাকাউন্ট খোলার ছ’মাসের মধ্যে কেওয়াইসি সংক্রান্ত নথি জমা দিতে হবে। যাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কোনও নথিপত্রই নেই, তাঁরাও ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। নিজের সই করা ছবি এবং আবেদনপত্রে ব্যাঙ্কের অফিসারের সামনে সই করলেই অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। এই অ্যাকাউন্টগুলি ‘স্মল অ্যাকাউন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত হবে। এই অ্যাকাউন্ট থেকে মাসে ১০ হাজার টাকার বেশি তোলা যাবে না। একসঙ্গে ৫০ হাজার টাকার বেশি রাখাও যাবে না। ঠিকানা ও পরিচয়পত্র সংক্রান্ত নথি জমা দিতে না পারলেও প্রথম এক বছর চালু থাকবে অ্যাকাউন্টগুলি। অ্যাকাউন্টের মালিক যদি দেখাতে পারেন যে, তিনি প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, কিন্তু এখনও হাতে পাননি, সে ক্ষেত্রে আরও এক বছর চালু থাকবে ব্যাঙ্কের খাতা।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আরও জানিয়েছে, ঠিকানা ও পরিচয়পত্র হিসেবে আর আলাদা দু’টি নথির প্রয়োজন নেই। ভোটার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, আধার কার্ড, ১০০ দিনের কাজের জব কার্ড, পাসপোর্টের মতো যে সব নথিতে ছবি-সহ পরিচয় ও ঠিকানা রয়েছে, সেগুলির যে কোনও একটি থাকলেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যুক্তি, যাঁরা রুটিরুজির জন্য এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যান, তাঁদের নথিপত্র জোগাড় করতে ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে অসুবিধেয় পড়তে হয়। যদি নথিতে থাকা ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা আলাদা হয়, তবে এ বিষয়ে শুধু নিজের সই করা একটি হলফনামা জমা দিলেই চলবে।

ক্ষমতায় আসার পর লালকেল্লা থেকে প্রথম বক্তৃতায় এই প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মোদী। প্রত্যেক ভারতবাসীকে দেশের আর্থিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে এই প্রকল্পের স্লোগান হল ‘মেরা খাতা ভাগ্যবিধাতা’। এই কাজে কতটা এগোনো গিয়েছে, পরের ভোটের আগে মোদী শেষ বার লালকেল্লা থেকে তার খতিয়ান দেওয়ার সুযোগ পাবেন ২০১৮-র অগস্টে। তার আগেই পরিবারপিছু দু’জনের ব্যাঙ্ক-খাতা খোলার কাজ সেরে ফেলার লক্ষ্য নিয়েছেন মোদী। এর মধ্যে বেশির ভাগ কাজ প্রথম বছরেই সেরে ফেলা হবে। পরে পার্বত্য, জঙ্গলে ঘেরা ও অন্যান্য দুর্গম এলাকার মানুষদের ব্যাঙ্ক পরিষেবার আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা হবে।

কাজে নামার আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাছে এটা স্পষ্ট ছিল যে, এ জন্য মোবাইলে ব্যাঙ্কের পরিষেবা চালু করাটা অত্যন্ত জরুরি। তা-ও ইন্টারনেটের সুবিধে থাকা মোবাইল নয়, সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সাধারণ মোবাইলেই সেই সুবিধা দিতে হবে। তাই গত ক’মাসে মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলিকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে মোদী সরকার। গত দু’মাসে ‘ন্যাশনাল পেমেন্ট কর্পোরেশন’-এর সঙ্গে ১০টি মোবাইল পরিষেবা সংস্থা চুক্তি সই করেছে। নতুন ব্যবস্থার জন্য পরিকাঠামোও তৈরি হয়ে গিয়েছে।

এ ভাবে আটঘাট বাঁধার পরেই প্রধানমন্ত্রী কাল নিজে বিজ্ঞান ভবন থেকে এই প্রকল্পের সূচনা করবেন। প্রতিটি রাজ্যের রাজধানীতেও প্রকল্প-সূচনার অনুষ্ঠান হবে। বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীদের পাশাপাশি সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন নিজের নিজের লোকসভা কেন্দ্রে এই অনুষ্ঠানে হাজির থাকেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি দেশ জুড়ে কাল ৬০ হাজার শিবির খুলতে চলেছে সাধারণ মানুষের জন্য ‘স্মল অ্যাকাউন্ট’ খুলে দেওয়া হবে সেখান থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bank Pradhan Mantri Jan Dhan Yojana narendra modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE