রেলের স্বাস্থ্য আর পরিবেশ রক্ষায় বহু কোটি টাকা খরচ করে তাকে কাজে লাগানো হয়েছিল। কিন্তু সেই ‘বায়ো-টয়লেট’ বা জৈব শৌচাগার এখন রেলকর্তা ও যাত্রী, দু’পক্ষেরই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অভিযোগ উঠছে, রেলের গাফিলতি এবং যাত্রীদের একাংশের অজ্ঞতার কারণে দূষণ দূর করার বদলে রেলের কামরা আরও দূষিত করছে জৈব শৌচাগার। কন্ট্রোলার অব অডিটর জেনারেল বা সিএজি-র রিপোর্টেও রেলের বায়ো টয়লেট ব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে।
মূলত পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নতার খাতিরে রেলে জৈব শৌচাগার চালু করা হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে রেলের খাতায় অভিযোগের তালিকা বাড়ছে। পরিস্থিতি এমনই যে, সমস্যার মোকাবিলায় রেল মন্ত্রক বলছে, বায়ো টয়লেটের বদলে এ বার ট্রেনে লাগানো হবে ‘ভ্যাকুয়াম টয়লেট’। বিমানে এই ধরনের শৌচাগার থাকে।
এই সমাধানসূত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রেলের অন্দরেই। কিছু রেলকর্তা বলছেন, ‘‘শৌচাগারে সামান্য পরিবর্তন আনতেই এই অবস্থা। এর পরে অজ্ঞতা দূর না-করে আরও বেশি প্রযুক্তি-নির্ভর শৌচাগার বানালে সাধারণ যাত্রীরা তা ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারবেন, সেই বিষয়ে সন্দেহ থাকছে।’’ কারণ, ব্যবহারের গোলমালেই বায়ো টয়লেটের দশা বেহাল হয়ে উঠেছে বলে তাঁদের দাবি।
জৈব শৌচাগারে ঠিক কী ধরনের অসুবিধা হচ্ছে? সিএজি-র রিপোর্ট বলছে, ট্রেনে বায়ো টয়লেটে দুর্গন্ধ হচ্ছে। প্যানে ময়লা থেকে যাওয়া বা উপচে ওঠা, প্যানের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়াই এখন যাত্রীদের কাছে মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় দু’লক্ষ অভিযোগ হাতে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৩২টি কোচিং ডিপোয় ৬১৩টি ট্রেনে সমীক্ষা চালিয়েছিল সিএজি। তাতেই দেখা গিয়েছে, এই মুহূর্তে ৪৫৩টি ট্রেনে মোট ২৫ হাজার বায়ো টয়লেট রয়েছে। ১৬টি ট্রেনে বায়ো টয়লেট নেই। টয়লেট প্যানের মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অধিকাংশ যাত্রীর অভিযোগ এটাই। আছে শৌচাগারের ভিতরে কোনও ডাস্টবিন না-রাখা এবং বাজে গন্ধের অভিযোগও। শৌচাগারের ভিতরে মগ মেলে না বলেও অনেক যাত্রীর অভিযোগ।
প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০১৪ সালে বায়ো টয়লেট বসানোর কথা ঘোষণা করে রেল। এ বছর জুনের মধ্যে ৪০,৭৫০টি বায়ো টয়লেট বসানো কামরা তৈরি করে ফেলেছে তারা। বাকি ছ’মাসের মধ্যে অতিরিক্ত ৩০ হাজার কামরা তৈরি হবে। রেলের খবর, ২০১৯ সালের মধ্যে রেলের বেশির ভাগ ট্রেনেই জৈব শৌচাগার বসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
কিন্তু যাত্রীদের কাছ থেকে বিপুল সংখ্যায় অভিযোগ আসায় রেলে জৈব শৌচাগার বসানোর প্রকল্প বড় ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছেন রেলকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের ব্যাপারে গ্রামেগঞ্জে প্রচার চালাতে হয়। ঠিক সেই ভাবেই রেলের জৈব শৌচাগার নিয়ে প্রচার জরুরি। যাত্রীদের অজ্ঞতা দূর করতে না-পারলে কোনও দিনই এই ধরনের শৌচাগার প্রকল্প সফল হবে না বলে মনে করছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy