প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: সংগৃহীত।
সাংসদ উজ্জ্বল নিকম বলেন, ‘‘আত্মরক্ষা যুদ্ধের কৌশল নয়, অধিকার।’’
চিদম্বরম বলেন, সিঁদুর অভিযানের সময়েই পাকিস্তানকে একশো কোটি ডলার ঋণদানে ছাড়পত্র দিয়েছিল আইএমএফ।
ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সাংসদ মহুয়া মাঝি বলেন, ‘‘কেন হঠাৎ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করা হল? কার চাপে?’’
রাজ্যসভায় সেনাকে কুর্নিশ জানান সমাজবাদী পার্টির সাংসদ রামগোপাল যাদব। তার পরেই তিনি কটাক্ষ করেন মোদী সরকারকে। বলেন, ‘‘এমন ভাবে সংসদে কথা হচ্ছে, যেন সরকার পক্ষই সিঁদুর অভিযানকে সমর্থন করে।’’
রাজ্যসভায় বক্তৃতা করেন তৃণমূল সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় বলেন তিনি। কটাক্ষ করেন মোদী সরকারকে।
প্রধানন্ত্রীর ভাষণের পরে বিরোধীদের প্রশ্ন, কেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি নিয়ে কিছু বললেন না তিনি। ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁর হস্তক্ষেপে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ পি চিদম্বরম বলেন, ‘‘ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা নিয়ে ট্রাম্প যে দাবি করেছেন, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কেন প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া জানালেন না?’’
মোদী জানান, তোষণের রাজনীতির কারণে কংগ্রেস সন্ত্রাস নিয়ে আইন কঠোর করেনি। কেন তারা সন্ত্রাসবাদকে ফুলেফেঁপে উঠতে দিয়েছে? তিনি জানান, তোষণের, ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণেই এরা তা করেনি। বাটলা হাউস এনকাউন্টারের সময়ে কংগ্রেসের বড় নেতার চোখে জল ছিল। ২০০১ সালে সংসদে হামলা হয়। তখন কংগ্রেসের এক বড় নেতা আফজল গুরুকে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ দেন। মুম্বই হামলায় এক পাকিস্তানি জঙ্গি ধরা পড়ে। তবু কংগ্রেস ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করে।
শশী তারুর নিয়ে কংগ্রেসকে খোঁচা দেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘কয়েক জন নেতাকে সংসদে বলতে দেওয়া হয় না।’’
তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসকে বলব, একটি পরিবারের জন্য পাকিস্তানকে ক্লিনচিট দেওয়া বন্ধ করুন। পাকিস্তান যত ক্ষণ না এ সব বন্ধ করবে, ভারত পদক্ষেপ করতে থাকবে।’’
মোদী বলেন, ‘‘নেহরু, কংগ্রেস সিন্ধু, ঝিলামের মতো নদী নিয়ে পঞ্চায়েত করতে দিয়েছে বিশ্বব্যাঙ্ককে। নদী আমাদের। বলবে ওরা। সিন্ধু জল সমঝোতা ভারতের আত্মাভিমানের সঙ্গে হয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে। নেহরুজি এই চুক্তি করে ৮০ শতাংশ জল পাকিস্তানকে দিতে রাজি হন। এত বড় ভারত পাবে ২০ শতাংশ। এটা কোন কূটনীতি? কোন বুদ্ধিতে হয়েছে? এই চুক্তি না হলে নদীর উপরে বড় প্রকল্প হত। পশ্চিমের রাজ্যগুলিতে পানীয় জলের সমস্যা হত না। জলবিদ্যুৎ তৈরি হত। পাকিস্তানকে কোটি টাকাও দেন নেহরু খাল তৈরি জন্য।’’
মোদী বলেন, ‘‘যাঁরা বলছেন, আমরা কেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর ফেরত নিতে পারিনি। জিজ্ঞেস করতে চাই, কাদের সরকার ওটা পাকিস্তানকে অধিকার করতে দিয়েছিল? জবাব স্পষ্ট। নেহরুর কথা বললে, কংগ্রেস চঞ্চল হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর থেকে ওরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার ফল আজও ভুগছে দেশ। ওরা বলে আকসাই চিন উষর জমি। ওটাও দিয়ে দেয়। দেশের জমি হারাতে হয়েছে। কর্তারপুর সাহিবও নেয়নি। শ্রীলঙ্কাকে কাচ্চাথিভু দ্বীপ দিয়ে দেওয়া হয়। এখন মৎস্যজীবীরা ভুগছেন। জমি দিয়ে দেওয়ার অধিকার কি রয়েছে ওদের? আজ সিয়াচেনও আমাদের কাছে থাকত না।’’
মোদী বলেন, ‘‘প্রতিরক্ষা উৎপাদন ব্যবস্থা নষ্ট করা হয়েছে। ওই নীতিতে চললে সিঁদুর অভিযানের কথা চিন্তাও করতে পারতাম না। ভারতীয় সেনার সশক্তিকরণের প্রমাণ এই অভিযান। কংগ্রেসের সময়ে সেনাকে আত্মনির্ভর করার ভাবনাচিন্তা ছিল না। প্রতিরক্ষা খাতে ২৫০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে বরাদ্দ। প্রতিরক্ষা রফতানি হয় ১০০ দেশে। সিঁদুর অভিযানের পরে প্রতিরক্ষার বাজারে ভারতে তৈরি অস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’’
মোদী বলেন, ‘‘ভারত যুদ্ধের নয়, বুদ্ধের দেশ। সমৃদ্ধির রাস্তা শান্তি হয়েই আসে।’’
মোদী বলেন, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কংগ্রেসের কোনও দৃষ্টিভঙ্গিই ছিল না। জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে ওরা কেবল সমঝোতা করে গেছে।’’
মোদী বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সঙ্গে কংগ্রেসের সুর মেলে। ওরা বলে, পহেলগাঁও হামলার জঙ্গি পাকিস্তানের প্রমাণ দাও। এ সব কী? আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাকিস্তানের ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। দেশের গর্ব হবে। কিছু লোকের কী হবে, জানি না। ১০০০ ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ছুড়ে হামলার চেষ্টা করে পাকিস্তান। ভারত সেগুলি আকাশে ভেঙে চুরমার করেছে। কংগ্রেস বলছিল, মোদী মরবে, ফাঁসবে। পাকিস্তান আদমপুর এয়ারবেসে হামলা করেছে বলে রটনা ছড়ায়। আমি পরের দিন সেখানে পৌঁছে যাই। ওদের মিথ্যা প্রকাশ্যে আনি। ’’
মোদী বলেন, ‘‘সেনা এয়ার স্ট্রাইক করে। এটা কংগ্রেস বলতে পারেনি যে, আমরা করেছি। কিন্তু ছবি চাইতে শুরু করে। বলে কত ভাঙলে, জানাও। প্রমাণ দাও। পাইলট অভিনন্দন যখন ধরা পড়েন, পাকিস্তানে খুশির আমেজ ছিল। এখানেও কিছু লোক ছিলেন, যারা কানে কানে বলেন, মোদী ফেঁসেছে। দেখব ও কী করে! আমরা অভিনন্দনকে ফিরিয়ে আনলাম। ওরা চুপ।’’
মোদী বলেন, ‘‘বিএসএফের জওয়ান পাকিস্তানের হাতে যায়। ওরা অনেক কথা বলে সমাজমাধ্যমে। ওর পরিবারের কী হবে। ওই জওয়ানও ফিরে এসেছে। অপারশেন সিঁদুর শুরু হল, নতুন শুরু করল। বলল, থামালে কেন। ওহে বাহাদুর! বিরোধের অজুহাত চাই। পুরো দেশ হাসছে ওদের নিয়ে। ওরা কার্গিল বিজয় দিবসও মানায়নি।’’
মোদী বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সেনাশক্তি তছনছ করেছি। এটাই ছিল জবাব। আজ পাকিস্তান বুঝে গেছে, ভারতের সব জবাব আগের থেকে আরও জোরদার হবে। সিঁদুর অভিযান জারি রয়েছে। পাকিস্তান দুঃসাহসের কল্পনা করলে জবাব দেওয়া হবে। আজকের ভারত আত্মবিশ্বাসী। আত্মনির্ভর হয়েছে। দেশ দেখছে। কংগ্রেস বিষয়ের জন্য পাকিস্তানের উপর নির্ভর হচ্ছে। ১৬ ঘণ্টা ধরে বিতর্ক চলছে। দুর্ভাগ্য, কংগ্রেস এখন পাকিস্তানের থেকে বিষয় আমদানি করছে। তথ্যের বড় ভূমিকা রয়েছে।সেনার মনোবল কমানোরও চেষ্টা চলছে। জনতার বিশ্বাস ভাঙানোরও চেষ্টা চলছে। দেশের সেনা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছে। কংগ্রেস প্রমাণ চেয়েছিল। যখন ওরা দেশের মানুষের মেজাজ দেখেছিল, তখন ওদের সুর বদলে গেল। বলল, এটা কি এমন বড় কথা। আমরাও করেছি। এক জন বলল, তিনটে হয়েছিল। অন্য জন বলল ছ’টা হয়েছে। তৃতীয় জন বলে, ১৫টি হয়েছে।’’
মোদী বলেন, ‘‘তৃতীয় কোনও দেশ ভারতে যুদ্ধ থামাতে বলেনি। ৯ মে রাতে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করেন। আমার সেনার সঙ্গে বৈঠক চলছিল। ফোন তুলতে পারিনি। পরে আমি ফোন করি। বলি, ৩-৪ বার ফোন করেন। তখন ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, পাকিস্তান বড় হামলা করতে চলেছে। আমার জবাব ছিল, যদি ওদের এই ইচ্ছা থাকে, তা হলে ভুগতে হবে। পাকিস্তান হামলা করলে, আরও বড় হামলা করে জবাব দেব। এই জবাব দিয়েছিলাম। আমরা গুলির জবাব গুলি দিয়ে দেব।’’
মোদী বলেন, ‘‘আমরা দুনিয়াকে বলেছি আমাদের লক্ষ জঙ্গিরা। আমরা এমন জবাব দিয়েছিল, যা বছরের পর বছর মনে থাকবে। ৯ মে মধ্যরাত থেকে আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের কোণে কোণে প্রহার করেছে। ওরা ভাবেনি। ওরা মাথানত করতে বাধ্য হয়েছে। টিভিতে দেখেছেন! পাকিস্তানে কেউ বলছে, আমরা সুইমিং পুলে ছিলাম, ভারত হামলা চালিয়ে দিয়েছে। ডিজিএমওকে ফোন করে পাকিস্তান বলে, ব্যাস থামাও, অনেক মেরেছো। আর সহ্য করতে পারছি না। পাক ডিজিএমওর ফোন ছিল। এটা ভারতের নীতি ছিল, যা সেনার সঙ্গে মিলে তৈরি হয়।’’
মোদী বলেন, ‘‘সেনা সাংবাদিক বৈঠক করে। তাতে স্পষ্ট করে, যে আমাদের লক্ষ্য হল জঙ্গি, জঙ্গিদের ঘাঁটি। আমরা কাজ করে দিয়েছি। যে লক্ষ ছিল, পূরণ হয়েছে। অভিযান সন্তোষজনক হওয়ার পরে ভারতীয় সেনা পাক সেনাকে কয়েক মিনিটে বলে দিয়েছিল যে, আমাদের লক্ষ কী। লক্ষ ১০০ শতাংশ পূরণ হয়েছে। পাকিস্তানের বুদ্ধি থাকলে জঙ্গিদের সঙ্গে প্রকাশ্য়ে দাঁড়িয়ে থাকত না। ’’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ সব করে কংগ্রেস দেশবাসীর মনে জায়গা গড়ে তুলতে পারবে না। ১০ মে ভারত সিঁদুর অভিযান রুখেছিল। সেই নিয়ে এখানে কথা হয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে যা ছড়ানো হয়েছিল, তা এখানে বলা হচ্ছে। পাকিস্তানের মিথ্যে প্রচারকে ছড়ানো হচ্ছে। যখন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়, তখন আমরা ওদের এলাকায় গিয়ে জঙ্গিদের লঞ্চিং প্যাড নষ্ট করি। সূর্যোদয়ের মধ্যে ফিরে আসবে সেনা। বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের সময়ে আমাদের লক্ষ স্থির ছিল। সিঁদুর অভিযানেও স্থির ছিল লক্ষ। কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছি। যেখানে পহেলগাঁও জঙ্গিদের নিয়োগ হয়েছে, অস্ত্র দেওয়া হয়, সেখানে অভিযান চালাই। জঙ্গিদের নাভিতে হামলা চালিয়েছি। এ বারও ১০০ শতাংশ লক্ষপূরণ হয়েছে।’’
মোদী বলেন, ‘‘বিদেশনীতি নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। দুনিয়ার সমর্থন নিয়েও কথা হল। একটা কথা স্পষ্ট বলছি, দুনিয়ার কোনও দেশ ভারতকে নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে পদক্ষেপ করতে বাধা দেয়নি। ১৯৩টি দেশের মধ্যে মাত্র তিনটি দেশ পাকিস্তানের সমর্থনে বয়ান দেয়। সব দেশ ভারতকে সমর্থন দিয়েছে। দুনিয়ার সমর্থন মিলেছে, কিন্তু দুর্ভাগ্য, বীরদের কংগ্রেসের সমর্থন মেলেনি। ২২ এপ্রিলের তিন চারদিন পর লাফাচ্ছিল। বলছিল, কোথায় গেল ৫৬ ইঞ্চির ছাতি। মোদী ফেল করে। খুব মজা পাচ্ছিল। রাজনীতি করছিল ওরা। স্বার্থের রাজনীতি করে আমাকে নিশানা করে। কিন্তু ওদের কথা, দেশের সেনার মনোবল কমিয়ে দিচ্ছিল। ভারতের সামর্থ, সেনায় ভরসা নেই কংগ্রেসের। তাই সিঁদুর অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।’’
মোদী বলেন, ‘‘সিঁদুর অভিযান বুঝিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তানকে বড় মূল্য চোকাতে হবে। ভারতে হামলা হলে নিজের মতো করে, নিজের শর্তে, নিজের সময়ে জবাব দিয়ে ছাড়ব। কোনও পরমাণু অস্ত্র দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল চলবে না। আমরা জঙ্গিদের সরকার এবং জঙ্গিদের আলাদা দেখব না।’’
মোদী বলেন, ‘‘আত্মনির্ভর ভারতকে দুনিয়া চিনেছে। ভআরতে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের ঘুম উড়িয়েছে। ’’
মোদী বলেন, ‘‘এই অভিযানে নৌসেনা, সেনা, বায়ুসেনা যৌথ পদক্ষেপ করেছে। পাকিস্তানকে ধুলোয় মিশিয়েছে। আগে জঙ্গিরা পরের প্রস্তুতি শুরু করে দিত। এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন হামলার পরে মাস্টারমাইন্ডের ঘুম আসে না। ওরা জানে, ভারত এসে মেরে যাবে। এটাই নব ভারত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy