Advertisement
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ক্যাব ভাইরাস’ আর ‘পিআরসি’র লড়াই

‘‘নাগরিকত্ব বিল পাশ হলে আমরা তো না খেয়ে মরব। বাইরে থেকে দলে দলে মানুষ ঢুকে পড়বে। আমাদের চাকরি, জমি কিছুই থাকবে না,’’ বক্তা প্রাঞ্জল দোলে, ছাত্র।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
ইটানগর শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৩২
Share: Save:

‘‘আপনি তো সাংবাদিক মানুষ। আপনি বুঝবেন আসল ব্যাপারটা। এই যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হলে বাংলাদেশ থেকে ২ কোটি মানুষ এখানে ঢুকে পড়ত আর আমরা ভূমিহীন হয়ে পড়তাম।’’ বক্তা হাগে ল্যানটো, ব্যবসায়ী।

‘‘নাগরিকত্ব বিল পাশ হলে আমরা তো না খেয়ে মরব। বাইরে থেকে দলে দলে মানুষ ঢুকে পড়বে। আমাদের চাকরি, জমি কিছুই থাকবে না,’’ বক্তা প্রাঞ্জল দোলে, ছাত্র।

‘‘অসমের জনজাতিগুলিকে স্থায়ী আবাসিক শংসাপত্র দিলে আর বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দিলে ওরা আমাদের সব অধিকার কেড়ে নেবে,’’ বক্তা লিন্ডেন আরি, মাস্টার্সের ছাত্র।

বগিবিল আর ধলা-শদিয়া সেতু তৈরির পরে অসম-অরুণাচলের যোগাযোগটা দ্রুততর হয়েছে, ততটাই দ্রুততায় এ-পারে, ও-পারে ছড়ানো হচ্ছে ওই ভয়, অধিকার হারানোর ভয়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অসম থেকেই শুনে আসছিলাম, ‘ক্যাব ভাইরাস’। ‘সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল’কে সকলে সংক্ষেপে ‘ক্যাব’ বলেন। আর ভাইরাস হল ওই বিল সংক্রান্ত বিভিন্ন মনগড়া ব্যাখ্যায় ভূমিপুত্রদের মনে জমিহারা হওয়ার ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া। অসম-অরুণাচলের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন মানুষকে সফলভাবে বুঝিয়েছেন, ‘ক্যাব’ মানেই ২ কোটি বাংলাদেশি ঢুকে পড়া। বিলে কি আছে না জেনেই অসম-অরুণাচলের আমজনতা তা বিশ্বাস করেছেন। সেতুর এ-পারে অসমে যেমন ভোটের অস্ত্র ‘ক্যাব’ ও ‘এনআরসি’, অরুণাচলে তেমনই ‘ক্যাব’ ও ‘পিআরসি’। দীর্ঘকাল থেকে অরুণাচলের লিকাং, বিজয়নগরে বাস করা অসমিয়া ও নেপালিদের দাবি ছিল স্থায়ী আবাসিক শংসাপত্র বা ‘পিআরসি’। লিকাং বিধানসভা কেন্দ্রের মহাদেবপুরে জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই অসমের মরাণ, মিসিং ও দেউড়ি সম্প্রদায়। ১৯৯৩ পর্যন্ত তাঁদের উপজাতি মর্যাদা, আবাসিক শংসাপত্র সবই ছিল। পরে তা কেড়ে নেওয়া হয়।

অথচ পিআরসি না থাকায় রাজ্য সরকারের চাকরি, সেনার নিযুক্তি সব থেকেই বঞ্চিত সেখানকার মানুষেরা। পান না সরকারি প্রকল্পের সুবিধাও। ১৮ হাজার ভোটারের মধ্যে মেরেকেটে ৩০০ উপজাতি ভোটার। কিন্তু তার পরেও অসমিয়াদের মধ্যে কেউ ভোটে দাঁড়াতে পারেন না।

পিআরসি নিয়ে সমস্যা যেখানে, সেখানে আগুন জ্বলেনি। সব প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সাড়ে তিনশো কিলোমিটার দূরে, ইটানগরে। এখনও গনগনে পিআরসি আন্দোলন। হিমালয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সেরিং পাদুর মতে, ‘‘অরুণাচলের মানুষ আগে অসমিয়াদের জমি চাষের কাজে লাগিয়েছিল। তারাই সেই জমির মালিক হতে চাইছে। ওরা পিআরসি পেলে সীমানার জেলাগুলিতে আরও পিছিয়ে পড়ব।’’ কিন্তু নামসাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অজিত মরাণের দাবি, ‘‘আমাদের আগের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক। পিআরসি না থাকায় কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হতে পারছি না আমরা।’’

সংঘাত চলছেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Arunachal Pradesh Citizenship Amendment Bill PRC NRC Bogibeel Bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy