বায়ুসেনা কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের মুখোমুখি প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছিলেন পরিবারের লোকেরাও। শনিবার দিল্লির সেনা হাসপাতালে। ছবি :পিটিআই।
লোকসভার ঠিক আগে বিজেপির নির্বাচনী অস্ত্রভাণ্ডারে যোগ হল নতুন একটি শব্দ। ‘অভিনন্দন!’
আজ সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাইক মিছিল, পদযাত্রা করে পাক হেফাজত থেকে উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের ঘরে ফেরাকে স্বাগত জানাতে নেমে পড়েন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। দিল্লিতে বিজ্ঞানভবনে আবাসন নির্মাণ সংক্রান্ত একটি সরকারি অনুষ্ঠানে স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘এর পর থেকে ‘অভিনন্দন’ শব্দটির অর্থ পাল্টে যাবে।’’
‘অভিনন্দন’-এর আভিধানিক অর্থ, প্রশংসার মাধ্যমে সম্মান জানানো। বিজেপি সূত্রের দাবি, আজ প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চাইলেন, উইং কমান্ডার যে সাহসের পরিচয় দিয়েছেন, তাতে আগামী দিনে ‘অভিনন্দন’ শব্দটি বীরত্ব বা শৌর্য বোঝাতে ব্যবহার হবে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ভারত কী করেছে, তা গোটা পৃথিবী দেখেছে। এ দেশের ক্ষমতা রয়েছে শব্দের অর্থ বদলে দেওয়ার।’’ আগামী দিনে পুলওয়ামা-বালাকোট-অভিনন্দনকে সামনে রেখেই যে প্রচারে ঝড় তুলতে চাইবে শাসক শিবির, সেটা স্পষ্ট হয়ে গেল আজই।
অভিনন্দন এখন ভাল আছেন বলে জানিয়েছে বায়ুসেনা। গত কাল সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশের পরেই বিশেষ বিমানে করে তাঁকে পালাম বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। ভর্তি করা হয় দিল্লিতে সেনার রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল হাসপাতালে। সব ঠিক থাকলে দু’দিন বাদে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে।
আরও পড়ুন: ‘বায়ুসেনার টাকায় বন্ধুর পকেট ভরেছেন মোদী, আর পুরনো জেটে লড়ছেন অভিনন্দনরা’
বায়ুসেনা সূত্রের খবর, গত কাল পরিবারের লোকেদের পাশাপাশি বায়ু সেনাপ্রধান বি এস ধানওয়া দেখা করেন অভিনন্দনের সঙ্গে। দু’জনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথাও হয়। নিজের পাকিস্তানে থাকার অভিজ্ঞতা বায়ু সেনাপ্রধানকে জানান ওই অফিসার।
অভিনন্দনের শরীরে পাক সেনারা ‘বাগ’ বা ‘মাইক্রো চিপ’-এর মাধ্যমে আড়ি পাতার যন্ত্র ঢুকিয়ে দিয়েছে কি না, তার একপ্রস্ত পরীক্ষা হয়েছে। সূত্রের খবর, শারীরিক ভাবে সুস্থ হলেও, অভিনন্দনের পাঁজরের একটি হাড়ে চিড় রয়েছে। কালশিটে রয়েছে গোটা পিঠে। মুখে রয়েছে একাধিক ছড়ে যাওয়ার দাগ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেঙে পড়া বিমান থেকে ‘ইজেক্ট’ করার সময়ে মেরুদণ্ডে চাপ পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই অভিনন্দনের মেরুদণ্ডে ও মাথায় কোনও আঘাত রয়েছে কি না, তা দেখার জন্য আজ এমআরআই স্ক্যান করা হয়। সূত্রের দাবি, স্ক্যানের রিপোর্ট স্বাভাবিক। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, প্যারাশুট থেকে মাটিতে পড়ে যাওয়ার কারণে পিঠে কালশিটে পড়েছে ওই অফিসারের। তবে উপর থেকে পড়ে যাওয়া, না গ্রামবাসীদের মারধর— ঠিক কী কারণে পাঁজরের হাড়ে চিড় ধরেছে, খতিয়ে দেখছেন চিকিৎসকেরা। আজ বিকেলে হাসপাতালে অভিনন্দনের সঙ্গে দেখা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, পাক সেনা হেফাজতে তাঁকে ‘মানসিক নির্যাতনের’ মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে নির্মলাকে জানান অভিনন্দন। সে সময় অভিনন্দনের পরিবারও উপস্থিত ছিল। সূত্রের খবর, অভিনন্দন জানান, তাঁকে পৃথক একটি সেলে আটক করে রাখা হয়েছিল। দেওয়া হয়নি, ফোন, টিভি বা খবরের কাগজ। ভিডিয়োয় পাক সেনার প্রশংসা করার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। অনেক কিছুই তিনি বলতে চাননি। সেই কারণে কাল পাক সেনা যে শেষ ভিডিয়োটি প্রকাশ্যে আনে, তাতে একাধিক বার এডিট করতে হয়েছিল। সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে ফের এক প্রস্ত ডি-ব্রিফিংয়ের মুখোমুখি হতে হবে অভিনন্দনকে। সেখানে বায়ুসেনার পদস্থ কর্তারা ছাড়াও উপস্থিত থাকবেন গোয়েন্দারা। শুরু থেকে গোটা ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিতে হবে তাঁকে। পাক সেনার জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কোনও গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন কি না, তার উপরে বিশেষ ভাবে জোর দেবেন গোয়েন্দারা। প্রতিরক্ষা সূত্রের মতে, সব উত্তর সন্তোষজনক হলে এবং নিজেকে মানসিক ভাবে ‘ফিট’ প্রমাণ করতে সক্ষম হলে তবেই নিজের ইউনিটে ফিরে যুদ্ধবিমান চালানোর অনুমতি পাবেন অভিনন্দন। ফের উড়তে পারবেন আকাশে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy