ফ্রেমবন্দি: কেদারনাথে প্রধানমন্ত্রী। শনিবার। পিটিআই
স্বয়ং যুধিষ্ঠিরের মুখে ‘অশ্বত্থামা হত, ইতি গজ’ শুনে সব অস্ত্র সংবরণ করেছিলেন গুরু দ্রোণাচার্য। যুদ্ধবিশারদ ব্রাহ্মণ সব কিছু ছেড়ে অরক্ষিত অবস্থায় ধ্যানে সমর্পণের লগ্নটি বেছে নেন।
ভোটযুদ্ধে জনগণেশের দরবারে খোদ নরেন্দ্র মোদীর পরীক্ষা আজ, রবিবার! তাঁর নিজের কেন্দ্র বারাণসী-সহ সপ্তম তথা শেষ দফার ভোটে শামিল হচ্ছে দেশ। তার আগে শনিবার বিকেল থেকে ভাইরাল মোদীর ধ্যানরত গৈরিক বেশের ছবি। এ দৃশ্য চাক্ষুষ করে কারও কারও মহাভারতের দ্রোণপর্বের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। মহাভারত বিশারদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী অবশ্য মোদীর সঙ্গে দ্রোণের তুলনা টানতে নারাজ। ‘‘তবু যদি দ্রোণের ধ্যানের সঙ্গে তুলনা হয়, তা হলে বুঝতে হবে খুব একটা সুসময়ে এই ধ্যানে বসছেন না মোদী।’’ তা ছাড়া গীতা বলছে, ধ্যানে সব ক’টি ইন্দ্রিয় প্রত্যাহার করে বিযুক্ত হতে হয়। নৃসিংহপ্রসাদের প্রশ্ন, ‘‘এই ধ্যান আবার সেই ধ্যান নাকি?’’
তবে ধ্যানের কোনও তিথি-লগ্ন নেই। মন অশান্ত থাকলে বা মনকে সংহত করতে হলে যে কোনও সময়েই ধ্যানে বসা যায়, বলে থাকেন মনস্তত্ত্ববিদরাও। আমবাঙালির মনে পড়ে যাচ্ছে, ঠাকুর রামকৃষ্ণের কথাও। যিনি বলেছিলেন, ধ্যান করবে মনে, বনে ও কোণে! অর্থাৎ, নির্জনে। সে দিক থেকে মোদীর ধ্যানের ছবি প্রচারের ঘটা অনেকেরই ঠিক হজম হচ্ছে না। ফলে মোদীর ধ্যানরত ছবি নিয়ে হাসি-মস্করাও কম চলছে না।
কেদারযাত্রার পথে মোদী এ দিন নিজেই টুইটে পাহাড়ের ছবি পোস্ট করেন। এর পরে পাহাড়ি পোশাকে কেদারনাথ মন্দির সামনেও নিজের ছবি দেন। উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ি পোশাকেই কেদারনাথ উন্নয়ন প্রকল্পের রিপোর্ট দেখার সময়কার ভিডিয়োও প্রকাশ করেছেন তিনি। তার পরই বিভিন্ন টুইটার হ্যান্ডলে ধ্যানরত মোদীর ছবির ছড়াছড়ি শুরু হয়ে যায়। একটি ছবিতে গুহার জানলা দিয়ে নমস্কাররত মোদীকে দেখা যাচ্ছে। আর একটিতে তিনি চোখ বুজে বসে। খবরে প্রকাশ, খাটে ধবধবে বিছানা পেতে তাঁর ঠেসান দেওয়ার বালিশেরও বন্দোবস্ত ছিল।
কিংবদন্তি অনুযায়ী, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরে কেদারে পাপক্ষালনের জন্য এসেছিলেন পঞ্চপাণ্ডব। শিব তাঁদের দেখে মহিষমূর্তি ধারণ করে পালাতে যান। ভীম সেই মোষের পা চেপে ধরেছিলেন। মোষের শরীরের পাঁচটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছুঁয়েই পঞ্চকেদার ছড়িয়ে পড়ে বলে কথিত আছে! সাধারণ পুণ্যার্থীদের মতো মোদী অবশ্য কেদারে মন্দাকিনীর কনকনে জলে স্নান সারেননি। গুহায় ঢুকে ছবি তোলা-পর্ব মিটলে মোদী রাতভর ধ্যান করবেন বলে লোকজন সরিয়ে দেওয়া হয়।
গত লোকসভা ভোটে জয়ের পরের দিনই কাশীতে কয়েক ঘণ্টা ধরে গঙ্গা-আরতি করেছিলেন নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। এ বার শেষ ভোটের আগেই কেদারে ধ্যান-পর্ব। আজ, বিবারও তাঁর বদ্রীনাথে দর্শন ও প্রার্থনা করার কথা। প্রশ্ন উঠছে, ভোটের আগে মোক্ষম সময়ে প্রধানমন্ত্রীর তীর্থে ধ্যান কি তাঁর হিন্দু নেতার সত্তাটি মেলে ধরার প্রয়াস? সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ধ্যান তো নির্জনে মনকে গুরু বা ইষ্টের প্রতি তন্মুখী করা!’’ মোদীর ধ্যান নিয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy