E-Paper

২০১৪-র টেট কি বৈধ? ২০১৬-র এসএসসির প্যানেল বাতিলের পর প্রশ্ন হাই কোর্টের

বিচারপতি মান্থা জানতে চেয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কি কখনও আদালতে পাশ এবং ফেল করা প্রার্থীদের তালিকা জমা দিয়েছে? সেই তালিকা জমা দেওয়া সম্ভব কি না, তা-ও জানতে চেয়েছেন তিনি।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৪ ০৬:২৬
calcutta high court

কলকাতা হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

১৭ দফা অনিয়ম এবং যোগ্য-অযোগ্য প্রার্থীদের পৃথক না করতে পারার জেরে ২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) নিয়োগের গোটা প্যানেলই বাতিল করেছে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ। এ বার ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট মামলায় সেই একই সমস্যা সামনে এসেছে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে। শুক্রবার ওই মামলায় বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, সিবিআইয়ের রিপোর্টে ওই পরীক্ষা নিয়ে অনেক অনিয়মের কথা উঠে এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ টেট-এ পাশ করা এবং ফেল করা প্রার্থীদের আলাদা করতে পারছে না। বিচারপতির প্রশ্ন, সে ক্ষেত্রে ওই পরীক্ষার কি আদৌ বৈধতা থাকতে পারে?

বিচারপতি মান্থা জানতে চেয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কি কখনও আদালতে পাশ এবং ফেল করা প্রার্থীদের তালিকা জমা দিয়েছে? সেই তালিকা জমা দেওয়া সম্ভব কি না, তা-ও জানতে চেয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি তাঁর পর্যবেক্ষণ, টেট-এর ফলাফল সংক্রান্ত ভুয়ো ওয়েবসাইটে যাঁদের নাম ছিল এবং যাঁরা ভুয়ো ই-মেলের ভিত্তিতে চাকরির জন্য টাকা দিয়েছেন তাঁদের কি অযোগ্য বলে গণ্য করা যেতে পারে? আদালত অবশ্য এ সব প্রশ্নের ভিত্তিতে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি। বরং পর্ষদ-সহ সব পক্ষের মতামত জানতে চেয়েছে। জুন মাসের শেষে ফের এই মামলার শুনানি হবে। এই জটিল পরিস্থিতিতে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের অন্যতম আইনজীবী বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, “কারা টেট পাশ করেছিলেন এবং কারা টেট পাশ করেননি, তা পর্ষদ বলতে পারছে না। তার ফলে এখনও পৃথক করে দেখা সম্ভব নয়। তবে যাঁদের কাছে উত্তরপত্রের প্রতিলিপি আছে তাঁদের পাশ-ফেল নিয়ে সন্দেহ থাকার কথা নয়।”

২০১৬, ২০২০ এবং ২০২২ সালে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেছিলেন ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণেরা। মূলত প্রাথমিক শিক্ষকপদে চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে টেট পাশ বাধ্যতামূলক। কিন্তু ২০১৪ সালের টেট নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আছে। সেই পরীক্ষার উত্তরপত্র (ওএমআর শিট) পাওয়া যাচ্ছে না বলেও আইনজীবীরা জানিয়েছেন। আদালতে এই মামলার শুনানিতে সেই উত্তরপত্র এবং তার স্ক্যান করা প্রতিলিপি নিয়েও বহু প্রশ্ন উঠেছে। সেই সব সওয়াল-জবাবের ভিত্তিতে বিচারপতি মান্থা তাঁর লিখিত নির্দেশে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। তার মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের ভূমিকা নিয়ে যেমন প্রশ্ন এসেছে, তেমনই ওই উত্তরপত্র স্ক্যান করার দায়িত্বে থাকা সংস্থা এস বসুরায় অ্যান্ড কোম্পানির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বিচারপতি মান্থা লিখিত নির্দেশে বলেছেন যে, টেট নেওয়ার ক্ষেত্রে কী নিয়ম তৈরি করা হয়েছিল তা জানা প্রয়োজন। কেন ২০১৭ সালে পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্রের প্রতিলিপি দেওয়ার সময় পর্ষদ ‘শিট’ বলল এবং কেন ২০২২ সালে তাকে ‘ডিজিটাইজ়ড ডেটা’ বলল, তারও উত্তর প্রয়োজন। কেনই বা টেন্ডার ছাড়াই এস বসুরায় অ্যান্ড কোম্পানিকে বরাত দেওয়া হল এবং কিসের ভিত্তিতে সেই বরাত দেওয়া হল? সিবিআই তদন্তে যা উঠে এসেছে, তার সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অবস্থানও জানতে চেয়েছে আদালত।

আদালতের লিখিত নির্দেশে আরও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যেমন এস বসুরায় অ্যান্ড কোম্পানির এক কর্মী কেন মেধাতালিকা পর্ষদের সরকারি ই-মেলে না পাঠিয়ে মানিক ভট্টাচার্যের (তৎকালীন পর্ষদ সভাপতি) ব্যক্তিগত ই-মেলে পাঠিয়েছিলেন? আসল উত্তরপত্র কেন পর্ষদ ওই সংস্থার কাছ থেকে ফেরত চাইল না? সব নিয়ম মেনে স্ক্যান করা হয়েছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি।

আদালতের পর্যবেক্ষণ, ১২ লক্ষ ৩৫ হাজার উত্তরপত্রই স্ক্যান করা হয়েছিল। তার কারণ, ২০১৭ সালে হেমন্ত চক্রবর্তী নামে এক পরীক্ষার্থীকে উত্তরপত্রের প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছিল। সব উত্তরপত্র স্ক্যান করা না থাকলে প্রায় ১৩ লক্ষ উত্তরপত্র থেকে একটি উত্তরপত্রের প্রতিলিপি তৈরি করা কার্যত অসম্ভব। সিবিআই জানিয়েছে, এস বসুরায় অ্যান্ড কোম্পানি প্রায় আট হাজার উত্তরপত্রের প্রতিলিপি পর্ষদকে সরবরাহ করেছিল। সব উত্তরপত্র স্ক্যান করা না থাকলে এ ভাবে বেছে বেছে দেওয়া সম্ভব নয় বলেই আদালত মনে করে। ৭৫২ জন পরীক্ষার্থীর ফলাফল প্রথমে স্থগিত রাখা হয়েছিল এবং পরে পাশ হিসেবে দেখানো হয়। সব উত্তরপত্র স্ক্যান করা না থাকলে তা-ও সম্ভব হত না। সব উত্তরপত্র স্ক্যান করা না-থাকলে ২৮৩০ জন পরীক্ষার্থীকে বাড়তি এক নম্বর দেওয়াও সম্ভব হত না বলে মনে করছে কোর্ট।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Calcutta High Court TET Exam West Bengal TET

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy