Advertisement
E-Paper

সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি, ভোট কাটবে কার ঘরে?

তিনি এলেন অতি সাধারণ গাড়িতে। তারকা সুলভ হাবভাব নেই একেবারেই। পরনে সাধারণ সাদা শার্ট-ট্রাউজার্স।

সুব্রত বসু

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:২৯
ভোটের প্রচারে প্রকাশ রাজ। নিজস্ব চিত্র

ভোটের প্রচারে প্রকাশ রাজ। নিজস্ব চিত্র

সবার গলায় ঝুলছে একটা করে বাঁশি। মাঝে মাঝে বাজানো হচ্ছে। ঠিক যে রকম বাঁশি বাজিয়ে বাড়ি থেকে জঞ্জাল নিতে আসেন পুরকর্মীরা। এই বাঁশিই তাঁর নির্বাচনী প্রতীক।

তিনি এলেন অতি সাধারণ গাড়িতে। তারকা সুলভ হাবভাব নেই একেবারেই। পরনে সাধারণ সাদা শার্ট-ট্রাউজার্স। দুপুরের রোদ অনেকটাই ঢলে এসেছে। বেঙ্গালুরুর মহদেবপুরা এলাকায় তাঁকে দেখতে জমে গিয়েছে কয়েক হাজার লোক। সমস্বরে বাজছে বাঁশি। সবাই হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চাইছেন দক্ষিণী বহুভাষিক তারকা প্রকাশ রাজকে। বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হয়ে যিনি বিপাকে ফেলেছেন কংগ্রেস-বিজেপি দুই দলকেই। কেউই ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না, প্রকাশ নির্দল হিসেবে দাঁড়ানোয় লাভ হবে কার!

শুধু কর্নাটকেই নয়, তেলুগু, তামিল, মলয়ালি ভাষাতেও ছবি করার দৌলতে প্রকাশের জনপ্রিয়তা পুরো দক্ষিণ জুড়েই। অন্য রাজ্যের প্রগতিশীল মহলও তাঁকে চেনে বামপন্থী-সমাজকর্মী হিসেবেই।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কথায় কথায় প্রকাশ নিজেই মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘আপনাদের ডানকুনিতে গিয়েও তো কয়েক মাস আগে ডিওয়াইএফ-এর সভায় বক্তৃতা করে এসেছি। প্রচুর ভিড় হয়েছিল।’’

প্রকাশ যেখানেই যান না কেন, লোকে তাঁর কথা শুনতে আসবেই। কারণ, তাঁর মতো সুবক্তা খুবই কম দেখা যায়। কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ের সঙ্গে তাঁর বিতর্ক। আসানসোলের ইমাম তাঁর ছেলের হত্যার পরেও কী করে গোটা শহরকে বাঁচিয়েছেন, তার উল্লেখ করে প্রকাশ বাবুলকে বলেছিলেন, ‘‘এটাই আমাদের সংস্কৃতি। আর আপনারা যেটা করছেন সেটা...’’ যুৎসই জবাব দিতে নাকানি-চোবানি খেতে হচ্ছে বাবুলকে।

এ রকম কট্টর বিজেপি বিরোধী ভাবমূর্তি নিয়েই বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রালে তিনি প্রচার চালাচ্ছেন একাধারে বিজেপি আর কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। কিন্তু এতে ধর্মনিরপেক্ষ ভোট ভাগ হয়ে যাবে না? এক গাল হেসে প্রকাশের জবাব, ‘‘কংগ্রেস আবার ধর্মনিরপেক্ষ নাকি! কেউ নিজেকে সেকুলার বলে দাবি করলেই সে ধর্মনিরপেক্ষ?’’ সেই দক্ষিণের বাম-কংগ্রেসের চিরন্তন লড়াইয়ের সুর! একটু থেমে প্রকাশ বলেন, ‘‘আসলে কোনও জাতীয় পার্টি দেশের মানুষের সমস্যা বুঝতে পারেনি। সাধারণ মানুষ রাজনীতি বোঝেন না। তাঁরা এলাকার উন্নয়ন চান, শিক্ষা চান, জল চান, সাম্য চান। লোকসভায় তাঁদের কথা বলতে হবে। এর জন্যই আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি।’’ কিন্তু তাঁর পাশে কোনও রাজনৈতিক দলই নেই? প্রকাশ বলেন, ‘‘কেন সিপিআই, সিপিএম, আপ— সবাই আমার পাশে আছে। কংগ্রেস এই কেন্দ্র থেকে কখনও জেতেনি। আমি না দাঁড়ালেও এ বার জিততে পারতো না। কিন্তু আমি জিতবই।’’

এই প্রবল আত্মবিশ্বাসের কারণ কী?

কারণ, বেঙ্গালুরুর এই কেন্দ্রের ভোটারদের চরিত্র। বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল কেন্দ্রের মধ্যে মধ্যে পড়ে শহরের অন্যতম বড় আইটি হাব ‘হোয়াইটফিল্ড’ এলাকা। নানা রাজ্য থেকে আসা তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের বেশির ভাগেরই এই শহরের ভোটে আগ্রহ নেই বললেই চলে। এর আগে এই শহরের দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়িয়ে হেরেছেন নন্দন নিলেকানির মতো প্রযুক্তিবিদও। স্থানীয় বাসিন্দা ফ্রান্সিস লোবো বলেন, ‘‘এখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দা ভোটার কার্ড-ই করাননি। আর যাঁদের ভোটার কার্ড আছে তাঁদেরও অধিকাংশই ভোট দিতে আসেন না।’’ পরিসংখ্যানও বলছে, কর্নাটকে যেখানে গড়ে ৭৫ শতাংশ ভোট পড়ে, সেখানে বেঙ্গালুরু শহরে ভোট পড়ে মাত্র ৫৫ শতাংশ। এই ভোট দেন এলাকার নিম্নবিত্ত ও বস্তিবাসী মানুষ। এঁদের মধ্যে কন্নড় ছাড়াও রয়েছেন তামিল, তেলুগু ও মলয়ালি ভাষাভাষী। লোবো বলেন, ‘‘এই সব ক’টি ভাষায় ছবি করার সুবাদে প্রকাশ এঁদের ঘরের লোক।’’

কিন্তু এই ভোট ভাগাভাগি না হলে এই কেন্দ্রে এ বার বিজেপির বর্তমান সাংসদ পিসি মোহনের ভরাডুবি হত বলেই মনে করছেন এখানের বাসিন্দাদের অনেকেই। তবে বেঙ্গালুরুর একটি কন্নড় সংবাদপত্রের সম্পাদক ভাসু এইচএফ বলেন, ‘‘এখানে ভোট কাটাকাটির হিসেবটা এত সরল নয়। এই কেন্দ্রে কংগ্রেস দাঁড় করিয়েছে আর্শাদ রিজওয়ানকে। গত বারই তিনিই দাঁড়িয়েছিলেন। এলাকার তামিল-কন্নড়-তেলেগু-মালয়ালি উচ্চবর্ণের কংগ্রেস ভোটারেরাও তাঁকে ভোট দেননি। এঁদের একটা বড় অংশের ভোট এ বার পেতে পারেন প্রকাশ। তিনি না দাঁড়ালে এঁদের অনেকের ভোটই চলে যেতে পারতো বিজেপিতেই। তাই প্রকাশ ভোট কাটবেন বিজেপিরও।’’ বিজেপি প্রার্থী মোহন এবং কংগ্রেস প্রার্থী রিজওয়ানও মানছেন এ কথা।

দেশের সব চেয়ে বড় আইটি-হাবে বামপন্থী বাঁশির শব্দে তাই শঙ্কিত দু’পক্ষই।

Lok Sabha Election 2019 Prakash Raj প্রকাশ রাজ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy