ছবি: রয়টার্স।
বাজার থেকে উধাও হওয়ার জোগাড় হলেও ম্যাগি-বিতর্ক কিন্তু থামছে না। ক্রেতাদের আস্থা অর্জনই মূল লক্ষ্য— সম্প্রতি এই বার্তা দিয়েও স্বস্তিতে নেই নেসলে সংস্থা। বেআইনি ভাবে ব্যবসা চালানোর অভিযোগে এ বার জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনে সুইস সংস্থাটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এত রকম বিতর্কের মধ্যেই আবার আজ নেসলে সংস্থার বার্ষিক আর্থিক হিসেবের বিশ্লেষণ থেকে উঠে এসেছে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। খাদ্যের মানের দিকে ঠিকমতো নজর না দেওয়ার অভিযোগে যখন বিদ্ধ হচ্ছে সংস্থা, তখনই জানা গিয়েছে নিজেদের পণ্যের বিজ্ঞাপন ও বিপণন প্রচারে নেসলে সংস্থা গত বছর খরচ করেছে ৪৪৫ কোটি টাকা। আর এই বিপুল অর্থের মাত্র ৫% খরচ করা হয়েছে খাদ্যের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য। শুধু গত বছর নয়, এই রকমটা হয়ে এসেছে পাঁচ বছর ধরেই। বিজ্ঞাপনী প্রচারে যেখানে ব্যয় হয়েছে ৩০০-৪৫০ কোটি টাকা, গবেষণাগারে খাদ্যের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ১২-২০ কোটি টাকা।
এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে নেসলের বিরুদ্ধে আর এক প্রস্ত সমালোচনা শুরু হয়েছে। যদিও বিপণন-বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই দাবি, প্রচারে বেশি খরচ করা কোনও বড় ব্যাপার নয়। অনেক সংস্থাই আজকাল বেশি জোর দেয় বিপণনে। তা নিয়ে হইহই করার কিছু নেই।
জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনেও টেনে আনার কথা হচ্ছে নেসলেকে। বেআইনি ভাবে ব্যবসা চালানো এবং বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনী প্রচারের জন্য জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনে ডাক পড়তে পারে নেসলের। কেন্দ্রের তেমনই দাবি। যার জেরে আর্থিক শাস্তিও হতে পারে সংস্থার। কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা নিয়ামক সংস্থা ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (এফএসএসএআই)-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে ভারতীয় ক্রেতাদের তরফে ক্রেতা সুরক্ষা দফতর এই সংক্রান্ত কমিশনে মামলা করেছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত, শুধু ম্যাগি নয়, এ বার অন্য বিভিন্ন সংস্থার পাস্তা বা ম্যাকারনি জাতীয় পণ্যও পরীক্ষা হবে। এফএসএসএআই-এর সিইও যুধবীর সিংহ মালিক বলেছেন, ‘‘মাত্র একটি ব্র্যান্ডেই কেন আটকে থাকব আমরা? অন্য চটজলদি নুডল্সের ব্র্যান্ডের পণ্যও খতিয়ে দেখা হবে।’’
ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স’ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা এবং ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানকে চিঠি দিয়ে ম্যাগির বিভিন্ন সময়ের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর অমিতাভ বচ্চন, মাধুরী দীক্ষিত এবং প্রীতি জিন্টার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
কোণঠাসা নেসলে বার্ষিক রিপোর্টে তার শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লেখা চিঠিটিও প্রকাশ করেছে। তাতে কিন্তু শুধুই ইতিবাচক কথা। বলা হয়েছে, ‘ভাল খাদ্য এবং ভাল জীবন’— এটাই সংস্থার লক্ষ্য। ভারতের মতো দেশে অপুষ্টি একটা ভয়ঙ্কর সমস্যা, এই কথা উল্লেখ করে ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন স্তরের উপার্জনকারীদের উপরে খাবারের ভূমিকা নিয়ে নেসলে নিরন্তর গবেষণা চালাচ্ছে। ভারতের পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অন্যতম হয়ে ওঠাই আমাদের লক্ষ্য।’ কিন্তু এই চিঠির বক্তব্য থেকেও ব্যবসায়িক দুনিয়ায় কেউ বিঁধতে ছাড়ছে না নেসলেকে। যে ব্র্যান্ড এত বড় স্বপ্ন দেখছে, তারা কেন সুরক্ষার দিকে যথেষ্ট নজর দেয়নি— উঠছে সেই প্রশ্ন।
ফিউচার ব্র্যান্ডস-এর সিইও সন্তোষ দেশাইয়ের বক্তব্য, ‘‘বিতর্কের জেরে ম্যাগি ব্র্যান্ডের উপরেই প্রশ্নচিহ্ন পড়েছে। এ বার নেসলে কী ভাবে এগোবে, সেটাই দেখার।’’ অন্য ব্র্যান্ড বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিজের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে আরও আগে তৎপর হওয়া উচিত ছিল নেসলের। কিছু দিন আগে উত্তরপ্রদেশের খাদ্য দফতরের তদন্তের পর থেকে যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল, তা গোড়াতেই বন্ধের জন্য সক্রিয় হতে পারত সংস্থা। কিন্তু তখন নেসলে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেনি। যত দিনে তারা ভারতীয় বাজার থেকে পণ্য তোলার কথা ঘোষণা করেছে, তত দিনে অনেকটাই ক্ষতি হয়ে গিয়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
ম্যাগির প্রতি গ্রাহকদের যে ব্র্যান্ড-বিশ্বস্ততা রয়েছে, সেটাই সংস্থার পক্ষে আশার খবর। সন্তোষ দেশাই বলছেন, ‘‘খুব কম ব্র্যান্ডই গ্রাহকদের মনে এতখানি জায়গা তৈরি করতে পারে। ম্যাগির অনেক বিশ্বস্ত ক্রেতা রয়েছে। এই ব্র্যান্ডটিকে তাঁরা চান।’’ ব্র্যান্ড বিশেষজ্ঞ হরিশ বিজুরও আশাবাদী, ম্যাগি স্বমহিমায় ফিরে আসবে।
যদিও গোটা ভারতে নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও একের পর এক রাজ্য নিষিদ্ধ করার কথা ঘোষণা করছে এই নুডল্সকে। সে তালিকায় ১১তম রাজ্য হিসেবে আজ জুড়ল গোয়ার নাম।
ভারত থেকে ম্যাগি আমদানি ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা চাপাল বাহরাইন। ভারত থেকে পাঠানো ম্যাগি পরীক্ষা করে দেখবে কানাডা। সম্প্রতি এ কথা জানিয়েছে ব্রিটেনও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy