Advertisement
১৬ মে ২০২৪
রেল মন্ত্রক

‘অবাস্তব’, তাই মমতার সব প্রকল্প শিকেয়

প্রকল্পগুলো ‘নিয়মবহিভূর্র্ত’ ও ‘অবাস্তব’। এই যুক্তিতে খারিজ করা হল রেলের জমিতে এক গুচ্ছ হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা। রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলের জমিতে হাসপাতাল গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সোমবার এক আঁচড়ে তা বাতিল করে দিল রেল মন্ত্রক। এই সিদ্ধান্তের পরে মমতার আমলে ঘোষিত রাজ্যের অন্য ১৬টি প্রকল্প (রেল কারখানা)-র ভবিষ্যতের সামনে প্রশ্নচিহ্ন পড়ে গেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪৬
Share: Save:

প্রকল্পগুলো ‘নিয়মবহিভূর্র্ত’ ও ‘অবাস্তব’। এই যুক্তিতে খারিজ করা হল রেলের জমিতে এক গুচ্ছ হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা। রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলের জমিতে হাসপাতাল গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সোমবার এক আঁচড়ে তা বাতিল করে দিল রেল মন্ত্রক। এই সিদ্ধান্তের পরে মমতার আমলে ঘোষিত রাজ্যের অন্য ১৬টি প্রকল্প (রেল কারখানা)-র ভবিষ্যতের সামনে প্রশ্নচিহ্ন পড়ে গেল।

রেলের ফাঁকা জমিতে হাসপাতাল-স্কুল গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মমতা। ২০০৯-১০ সালের বাজেটে রাজ্যে বারাসত, খড়্গপুর, গার্ডেনরিচ ও কলকাতা-সহ দেশের মোট ১৮টি স্থানে রেল হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু পাঁচ বছর পরে দেখা যাচ্ছে, ওই ঘোষণাগুলো শুধু কাগজ-পত্রেই আটকে রয়েছে।

মন্ত্রক জানিয়েছে, প্রকল্পগুলোর বাস্তবতা ও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের খুঁজতে দায়িত্ব দেওয়া হয় রেলেরই অধীনস্থ সংস্থা রাইটসকে। কিন্তু ১৮টির মধ্যে শুধু চেন্নাই, সেকেন্দ্রাবাদ ও খড়্গপুর, এই তিনটি জায়গায় সমীক্ষা চালিয়ে রিপোর্ট দেয় রাইটস। সেই রিপোর্টে গোটা প্রকল্পটির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়। তখনই বোঝা গিয়েছিল, প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ আঁধারে। প্রকল্পগুলো ঘিরে যে এ ভাবে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, তা জানতেন তৎকালীন রেলকর্তারা। তাঁদের মতে, রেলের কাজ হল ট্রেন চালানো। কোথায় হাসপাতাল বা স্কুল গড়া হবে তা দেখা নয়।

কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছে বলে কথা। তাই বাধ্য হয়েই সে সময়ে ওই প্রস্তাবে সায় দিয়েছিল রেল বোর্ড। রেলের জমিতে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনাও নিয়েছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী। পরিকল্পনা ছিল সরকারি-বেসরকারি অংশিদ্বারিত্বে (পিপিপি মডেল) রেলের জমিতে হাসপাতাল ও স্কুল গড়া হবে। দু’মন্ত্রকের সঙ্গে প্রাথমিক ভাবে মউ সাক্ষর করেছিল রেল মন্ত্রক।

কিন্তু এ বার ওই প্রকল্পগুলোর বাস্তবতা ও আইনের কথা মাথায় রেখে প্রথমে স্কুল ও তারপর হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে এল রেল। সোমবার রেল মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী মনোজ সিংহ দিল্লিতে বলেন, “মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-এর নিয়মানুযায়ী পিপিপি মডেলে সরকারের (এখানে রেল মন্ত্রক) সঙ্গে হাসপাতাল করা যায় না। তাই পরিকল্পনাটি বাতিল করা হয়।” এ ক্ষেত্রে ‘পাবলিক’ এবং ‘প্রাইভেট’ দু’পক্ষই কেন্দ্রের দুই মন্ত্রক। এমসিআই-এর এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “অন্য দফতরের সঙ্গে এ ভাবে মেডিক্যাল কলেজ খোলা যায় না। মেডিক্যাল শিক্ষার মান যথাযথ না রাখলে ভুগতে হবে দেশের মানুষকেই।”

রেল মন্ত্রকের একটি অংশের ব্যাখ্যা, রেলের ফাঁকা জমিতে হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মমতা। সেই সব জমির বাজার দর এখন প্রচুর। রেলের আর্থিক হাল ফেরাতে ওই সব জমি ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে রেল। পরিবর্তে যদি কোনও বেসরকারি সংস্থা হাসপাতাল গড়তে এগিয়ে আসত, তা হলে রেলকে কার্যত বিনামূল্যে সেই জমি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লিজে দিতে হতো। তাতে রেলের আর্থিক লাভ কিছুই হতো না। তাই ওই পরিকল্পনা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল।

তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে বারবার যোগাযোগ করেও কথা বলা যায়নি। আর তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের মন্তব্য, “কেন্দ্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে এ সব করছে।” তবে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী অধীররঞ্জন চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পরেই বলেছিলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে পশ্চিমবঙ্গের জন্য যে সব প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই অবাস্তব।” শুধু হাসপাতাল নয়, বাকি প্রকল্পগুলোও এতটাই অবাস্তব যে সেগুলোও বাতিল হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছেন রেল মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা।

কিন্তু যে প্রকল্পটি সত্যিই রূপায়িত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে রেল, সেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ রাজ্যের বাধায় থমকে গিয়েছে। অথচ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কলকাতার যান সমস্যার চেহারাই পাল্টে যেত। উপকৃত হতেন লক্ষ লক্ষ রাজ্যবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE