কলকাতায় ব্রিগেড সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুমারস্বামী। —পিটিআই-এর তোলা ফাইল চিত্র
কর্নাটকে কংগ্রেস-জেডিএসের জোট সরকার। কংগ্রেসের শরিক হয়েও কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রশ্নে এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি, তেজস্বী যাদব, স্ট্যালিনরা যখন ব্রিগেড থেকে ফিরে গিয়েই প্রধানমন্ত্রী পদে রাহুলের পক্ষে সওয়াল করছেন, সেখানে এইচ ডি কুমারস্বামী ব্যাট ধরলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে। বললেন, দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সব রকম ‘ক্ষমতা’ ও ‘গুণ’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রয়েছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ‘সাধারণ’ জীবনযাপন থেকে রাজনৈতিক দূরদর্শিতাকে দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার নেতৃত্বে বিজেপি বিরোধী মহাজোটে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মতো অবস্থান নিয়েছে কংগ্রেস। একাধিক বার মমতা যখন দিল্লিতে গিয়ে বিরোধী দলগুলিকে একজোট করার চেষ্টা করেছেন, তখন কংগ্রেস কার্যত এড়িয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, সেই কারণেই সনিয়ার সঙ্গে মমতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল হওয়া সত্ত্বেও তিনি ব্রিগেডে আসননি। আসেননি রাহুলও। আবার পরিবর্তে মল্লিকার্জুন খড়গে এবং অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে পাঠিয়ে পুরোপুরি এড়িয়েও যাননি। উপরন্তু শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন সনিয়া-রাহুল দু’জনেই।
সেই মঞ্চেই হাজির থেকে কংগ্রেসের জোট শরিক জেডিএস-এর নেতা কুমারস্বামী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে রেখেছিলেন। এর পর সোমবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরও এক ধাপ এগিয়ে মমতা-স্তুতি শোনা গেল কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। ‘‘উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) সাধারণের মধ্যেও সাধারণ। দক্ষ প্রশাসক। আমি মনে করি মমতাজির মধ্যে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সব রকম গুণ রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গকে প্রায় আট বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের নেতৃত্ব দিয়ে ইতিমধ্যেই তিনি সেটা প্রমাণ করে ফেলেছেন।’’, বলেছেন কুমারস্বামী।যদিও একই সঙ্গে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, বিভিন্ন রাজ্যে এমন নেতা-নেত্রীরা রয়েছেন, যাঁরা যে কোনও জাতীয় দলের নেতাদের সমান যোগ্যতাসম্পন্ন।
আরও পডু়ন: ব্রিগেড সমাবেশে কত খরচ হল? প্রশ্ন পৌঁছে গিয়েছে নির্বাচন কমিশনে, ইঙ্গিত মুকুলের
দীর্ঘ দিন ধরে মহাজোটের জল্পনা চললেও ব্রিগেডের সভার আগে তা ছিল কার্যত বিচ্ছিন্ন কিছু সমীকরণের মতো। চন্দ্রবাবু নায়ডু দরবার করছিলেন বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে। কখনও মমতা দিল্লিতে গিয়ে দরবার করছিলেন। কিন্তু কলকাতায় ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’ র্যালির পর উঠে এসেছে বিরোধী শিবিরের ঐক্যবদ্ধ চেহারা। এর কৃতিত্বও মমতাকেই দিয়েছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সবাইকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে মমতাজি একটা বিরাট কাজ করেছেন। এমনকি, বাম দলকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এটাই ওনার রাজনৈতিক সৌজন্য এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার কৌশল। আর এই যুদ্ধ পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে তিনি অনেক কিছু ত্যাগ করতেও প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: মুকেশ অম্বানীর আয় চিকিৎসা-স্বাস্থ্য খাতে কেন্দ্র-রাজ্যের মিলিত বাজেটের চেয়ে বেশি!
‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া র্যালি’ হল। কিন্তু সেই মহাজোটের নেতা বা নেত্রী কে? বিরোধী জোটের নেতারা প্রায় এক সুরেই বলেছিলেন, বিজেপিকে হারানোই মূল লক্ষ্য। নেতা পরে ঠিক হবে। স্বাভাবিক ভাবেই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে সেই প্রশ্নও। তবে ফের ব্রিগেডের কথাই বলেছেন কুমারস্বামী। বলেন, ভোট মিটে যাওয়ার পর নেতা ঠিক করা যেতে পারে।
তৃণমূলের তরফে ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ গিয়েছিল তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও, ওড়িশার নবীন পট্টনায়েক এবং কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের কাছেও। কিন্তু টিআরএস, বিজেডি বা বাম দলের কেউ আসেননি। এই প্রসঙ্গ উঠতেই কুমারস্বামীর মন্তব্য, ‘‘আমি মনে করি, ভোটের পর সবাই চলে আসবেন। প্রত্যেকে এক জোট হবেন। আমি আশাবাদী।’’
ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দিয়ে কেন্দ্র তথা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দেগেছেন লালু-পুত্র তেজস্বী যাদব। একই সুর ছিল ডিএমকে নেতা স্যালিনের গলাতেও। কিন্তু কলকাতা থেকে নিজের নিজের রাজ্যে ফিরেই বলছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁরা রাহুলকেই দেখতে চান। অথচ কুমারস্বামীর গলায় এই উল্টো সুর। রাহুলের নাম না করেও যা বললেন, তার অর্থ, রাহুল নন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যোগ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কুমারস্বামীর এই ‘মমতা-প্রশস্তি’ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy