নরেন্দ্র মোদীর শপথে যাচ্ছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সিদ্ধান্ত বাতিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দুপুর ২টো ১৮ মিনিটে টুইট করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই জানিয়েছেন এ কথা।
প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের মতো একটি অনুষ্ঠানকে একটি দল রাজনৈতিক লাভ তোলার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে বলে অভিযোগ করে টুইটে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। যদিও মমতার এই অভিযোগকে অস্বীকার করেছে বিজেপি। মমতার অভিযোগকে ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়েছে তারা।
বাংলায় ‘খুন হওয়া’ ৫৪ জন বিজেপি কর্মীর পরিবারকে মোদীর শপথ অনুষ্ঠানে হাজির করানোর যে পরিকল্পনা বিজেপি করেছে, তার জেরেই যে দিল্লি যাওয়ার সিদ্ধান্ত মমতা বাতিল করলেন, টুইটে তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন।
আরও পড়ুন: মমতার অস্বস্তি বাড়িয়ে মোদীর শপথে আমন্ত্রণ এ রাজ্যে খুন হওয়া ৫৪ বিজেপি কর্মীর পরিবারকে
পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকে শুরু করে লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত বাংলায় ৫০-এরও বেশি বিজেপি কর্মী ও সমর্থককে খুন হতে হয়েছে বলে বিজেপির দাবি। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে। এঁদের সকলকেই শহিদ আখ্যা দিয়েছে বিজেপি। এঁদের পরিবারকে দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণে নিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। মোট ৭০ জনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
The oath-taking ceremony is an august occasion to celebrate democracy, not one that should be devalued by any political party pic.twitter.com/Mznq0xN11Q
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) May 29, 2019
বিজেপির এই সিদ্ধান্তেই ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৫৪ জন বিজেপি কর্মী বাংলায় খুন হয়েছেন বলে যে দাবি বিজেপি করছে, তা সর্বৈব মিথ্যা বলে নিজের টুইটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘‘বাংলায় কোনও রাজনৈতিক খুন হয়নি। ব্যক্তিগত শত্রুতা, পারিবারিক কলহ বা অন্য কোনও বিবাদের কারণে এই সব মৃত্যু ঘটে থাকতে পারে, রাজনীতির সঙ্গে এ সবের কোনও সম্পর্ক নেই। আমাদের কাছে সে রকম কোনও রেকর্ড নেই।’’
এই পরিবারগুলিকে মোদীর শপথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেই তিনি ওই অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না, এমন কোনও বাক্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেননি। কিন্তু ৫৪ জন বিজেপি কর্মী খুন হওয়ার অভিযোগকে ‘সর্বৈব অসত্য’ আখ্যা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘‘সুতরাং, আমি দুঃখিত, নরেন্দ্র মোদীজি, এটা আমাকে বাধ্য করল অনুষ্ঠানে না যেতে।’’
টুইটের শেষ অংশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, গণতন্ত্রের উদযাপনে পালিত এই অনুষ্ঠানের একটা সম্ভ্রম রয়েছে। বিজেপির নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, একটি দল এই অনুষ্ঠানকে ব্যবহার করছে ‘রাজনৈতিক পয়েন্ট’ তোলার কাজে। টুইটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ বাক্য, ‘‘দয়া করে আমাকে মাফ করবেন।’’
আরও পড়ুন: জয়ী দু’জনেই, তবুও সংসদে পাশাপাশি বসবেন না হেমা-সানি!
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণে যাবেন। ‘গণতান্ত্রিক আনুষ্ঠানিকতা’ এবং ‘সাংবিধানিক সৌজন্য’ রক্ষার্থেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন। কিন্তু ৫৪ জনকে ‘শহিদ’ আখ্যা দিয়ে তাঁদের পরিবারকে মোদীর শপথে নিয়ে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত বিজেপি নিয়েছে, তা নিয়ে বুধবার সকাল থেকে চর্চা বাড়তেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মত বদলে ফেলেন।
৫৪ জনের পরিবারকে যে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হবে, সে কথা বিজেপি সূত্রে মঙ্গলবার দুপুর নাগাদই জানা গিয়েছিল। আর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি শপথে হাজির থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মোদীর শপথ গ্রহণ সমারোহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই হাজির থাকবেন মৃত বিজেপি কর্মীদের পরিজনরাও— এমন পরিস্থিতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে কতটা স্বস্তির হবে, তা নিয়ে চর্চা জোরালো হয় এ দিন সকাল থেকেই। তার পরেই সামনে এল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইট।
মমতার এই অভিযোগকে অস্বীকার করে নিজেদের প্রতিক্রিয়ায় বিজেপি জানিয়েছে, ‘নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরে রাজনৈতিক হিংসায় যাঁরা বলি’ হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারেরা ২০১১ সালের ২০ মে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মমতা নিজে এক সময় বামেদের বিরুদ্ধে হিংসার রাজত্ব চালানোর অভিযোগ তুলেছিলেন। বুদ্ধবাবুর বিরুদ্ধেও হিংসা ছড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন মমতা। তা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। এমনকি, মমতার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে শহিদদের পরিবারের উপস্থিতি নিয়ে কোনও রকম আপত্তি তোলেননি বুদ্ধবাবু। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের মতো একটি অনুষ্ঠানকে নিয়ে বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে, তাঁর এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।