Advertisement
০২ জুন ২০২৪
একশোয় একশো লালু-নীতীশ

বিজেপি-বধে বিকল্প জোট, সূত্রধর মমতা

বিজেপি-বিরোধী ভোটের বিভাজন আটকাতে ফের দিল্লিতে সক্রিয় হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই একটি ফেডারেল ফ্রন্ট গড়ার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু সেই চেষ্টা শুরুতেই ভেস্তে যায়। এক বছর পরে, এখন শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ সামনে আসছে।

শরদ পওয়ারের বাড়িতে বৈঠক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। হাজির ছিলেন মুলায়ম সিংহ যাদব এব‌ং শরদ যাদবও। বুধবার প্রেম সিংহের তোলা ছবি।

শরদ পওয়ারের বাড়িতে বৈঠক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। হাজির ছিলেন মুলায়ম সিংহ যাদব এব‌ং শরদ যাদবও। বুধবার প্রেম সিংহের তোলা ছবি।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৮
Share: Save:

বিজেপি-বিরোধী ভোটের বিভাজন আটকাতে ফের দিল্লিতে সক্রিয় হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই একটি ফেডারেল ফ্রন্ট গড়ার তোড়জোড় শুরু করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু সেই চেষ্টা শুরুতেই ভেস্তে যায়। এক বছর পরে, এখন শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ সামনে আসছে। আর্থিক উন্নয়নের হারও আশানুরূপ নয়। সংসদ চালাতে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে সরকারকে। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলগুলিকে একটি ছাতার তলায় এনে সরকার-বিরোধী একটি বৃহত্তর জোট তথা ফেডারেল ফ্রন্ট গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হল রাজধানীতে। এই কাজে সূত্রধরের কাজটি করলেন তৃণমূল নেত্রীই।

মমতা শুধু নন, মুলায়ম সিংহ যাদব, নীতীশ কুমারের মতো আঞ্চলিক দলের নেতারাও এখন বিভিন্ন রাজ্যের ভোটে বিজেপির আগ্রাসন ঠেকাতে নতুন রাজনৈতিক অক্ষ রচনায় তৎপর। এই পরিস্থিতিতে কাল সংসদে তৃণমূলের দফতরে বসে একটি ফ্রন্ট গঠনের বিষয়ে এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের সঙ্গে আলোচনা করেন মমতা। আজ ফের বৈঠক হয় পওয়ারের বাড়িতে। তারই ফল হিসেবে নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করে একটি বৃহত্তর জোট তথা ফেডারেল ফ্রন্ট। বিজেপি-বিরোধী নতুন এই অক্ষে মমতা ও পওয়ার তো রয়েছেনই, আজ যুক্ত হয়েছেন ফারুক আবদুল্লা ও লালুপ্রসাদের দলও।

মমতা, মুলায়ম, নীতীশ কুমারের প্রতিনিধি শরদ যাদব ছাড়াও পওয়ারের বাড়িতে আজ ওই বৈঠকে যোগ দেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লা ও আরজেডির জয়প্রকাশ যাদব। বৈঠকে আম আদমি পার্টির কেউ ছিলেন না। তবে তারাও এই ফ্রন্টের শরিক হওয়ার পথে।

বৈঠকে স্থির হয়েছে, এই জোটের কোনও একটি দল যখন যে রাজ্যে নির্বাচনে লড়বে, বাকিরা তাদের নিঃশর্ত সমর্থন জোগাবে। লক্ষ্য একটাই, একজোট হয়ে লড়ে বিজেপি-বিরোধী ভোটের ভাগাভাগি রোখা। সামনেই বিহারে নির্বাচন। জোটের পক্ষ থেকে সেখানে নীতীশ ও লালুর দলকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজেপিকে রুখতে এই জোটের প্রয়াস আদৌও সফল হয় কি না, তার প্রথম পরীক্ষা হতে চলেছে এই নির্বাচন। বিহার নির্বাচনে ফ্রন্ট তাই প্রয়োজনে নীতীশ-লালু জোটের সমর্থনে প্রচারেও নামবে।

তবে শুরুতেই প্রশ্ন উঠছে এই জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে। কারণ, আগেও এই ধাঁচের উদ্যোগ ভেস্তে গিয়েছিল। এ বারেও যে তেমন কিছু ঘটবে না, জোটের কেউই তা বড় গলায় বলতে পারছেন না। বিশেষ করে মুলায়ম বা লালুর মতো নেতারা এত ঘন ঘন অবস্থান পাল্টে ফেলেন যে, জোট টিকিয়ে রাখার প্রশ্নে অন্য দলগুলি ফ্যাসাদে পড়ে যায়। ফলে জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক প্রতিক্রিয়াই জানিয়েছে তৃণমূল। তাদের এক নেতার কথায়, ‘‘এ হল সলতে পাকানোর কাজ।’’

এই জোটকে বৃহত্তর রূপ দিতে আগামী দিনে কংগ্রেসকেও এর শরিক করে নেওয়ার কথাও ভাবছেন মুলায়মরা। কংগ্রেসের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকেই। জোটের নেতারা মনে করছেন, কংগ্রেস এই জোটে এলে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে বিজেপির আগ্রাসন রোখা সম্ভব হবে। তবে মমতার উপস্থিতির কারণে এই জোটে কোনও বাম দলকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মমতা জানিয়েছেন, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর জোটের পরবর্ত়ী বৈঠকটি হবে। শরদ যাদবের বাড়িতে।

জোটের বৈঠকে আজ আপ নেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের আসার কথা ছিল। প্রতিশ্রুতি মতো বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তিনি মমতার কাছে আসেন। কিন্তু তৃণমূল নেত্রীকে তিনি জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষে এ দিনের বৈঠকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। যা নিয়ে মমতার ব্যাখ্যা, ‘‘কেজরীবালের পূর্বনির্ধারিত কাজ ছিল। তাই তিনি আসতে পারেননি। ২২ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে তিনি আসবেন বলে কথা দিয়েছেন।’’

মমতা এই দাবি করলেও, স্বচ্ছ রাজনীতির ডাক দেওয়া কেজরীবালের পক্ষে আজ সরাসরি পওয়ারের বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। যুক্তি হিসেবে আপ নেতারা পরে জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রীদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল আপ শিবির। তাতে দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রী হিসেবে নাম ছিল পওয়ারের। তাই এখন পওয়ারের বাড়িতে বৈঠক করতে গেলে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হবে দলকে। এমনকী, দলের সমর্থকদের কাছেও জবাবদিহি করতে হবে কেজরীবালকে। তাই গত কাল মমতাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে এসেছেন কেজরীবাল। তৃণমূল নেত্রীকে তিনি জানান, বৈঠক যদি মমতার বা তাঁর দলের কারও বাসভবনে হতো, এবং তাতে যদি পওয়ার থাকতেন, তাতেও সমস্যা ছিল না আপের। কিন্তু পওয়ারের বাড়িতে যাওয়াটা কেজরীবালের পক্ষে এই মুহূর্তে কিছুটা সমস্যার। তাই তিনি এ যাত্রায় যেতে পারছেন না। তবে আগামী বৈঠক যেহেতু শরদ যাদবের বাড়িতে, তাই সেই বৈঠকে যোগ দিতে তাঁর কোনও সমস্যা নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE