Advertisement
E-Paper

সংখ্যায় বলীয়ান মমতার প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা শুরু

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ২৮২ আসনের শক্তপোক্ত বিজেপি সরকার তৈরি হওয়ার পরে এক বছর যেতে না যেতেই একের পর এক দুর্নীতির ধাক্কায় রীতিমতো রক্ষণাত্মক অবস্থানে। তিন সপ্তাহের বাদল অধিবেশন কার্যত মাঠে মারা গিয়েছে। সংসদের অচলাবস্থার পাশাপাশি বিহারে লালুপ্রসাদ-নীতীশ কুমার ও কংগ্রেস সে রাজ্যে নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারিত হওয়ার আগেই জোট ঘোষণা করে দিয়েছে।

জয়ন্ত ঘোষাল

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৪৩

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ২৮২ আসনের শক্তপোক্ত বিজেপি সরকার তৈরি হওয়ার পরে এক বছর যেতে না যেতেই একের পর এক দুর্নীতির ধাক্কায় রীতিমতো রক্ষণাত্মক অবস্থানে। তিন সপ্তাহের বাদল অধিবেশন কার্যত মাঠে মারা গিয়েছে। সংসদের অচলাবস্থার পাশাপাশি বিহারে লালুপ্রসাদ-নীতীশ কুমার ও কংগ্রেস সে রাজ্যে নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারিত হওয়ার আগেই জোট ঘোষণা করে দিয়েছে।

ঠিক এই রকম এক পটভূমিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আড়াই দিনের দিল্লি সফরে ইট পেতে রেখে দিয়ে গেলেন বিহার ভোট পরবর্তী সবর্ভারতীয় রাজনীতির পাশা খেলার নির্ণায়ক শক্তি হওয়ার লক্ষ্যে। সিপিএম-সহ বাম দলগুলির সাংসদ সংখ্যা যখন পঞ্চাশের উপরে ছিল, তখন জাতীয় রাজনীতির অনিশ্চয়তার সময়ে বামেরা একটি নির্ণায়ক ভূমিকা গ্রহণ করত। আজ নিজেদের এক সময়ের দুর্জয় ঘাঁটি পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিপিএমের লোকসভায় সাংসদ মাত্র দু’জন! লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে সিপিএম তথা বাম দলগুলির মোট সাংসদ সংখ্যা যথাক্রমে ১৮ ও ২০। সেখানে তৃণমূলের সাংসদ সংখ্যা দু’কক্ষ মিলিয়ে ৪৬। সংসদীয় রাজনীতিতে ‘সংখ্যাই ব্রহ্ম’, মন্তব্য তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আড়াই দিনে এই সংখ্যার দাপট এ বার দেখালেন মমতা।

মমতা কী করেছেন?

প্রথমত, শরদ পওয়ারের বাড়িতে গিয়ে ফারুক আবদুল্লা, মুলায়ম সিংহর সঙ্গে ফেডেরাল ফ্রন্টের সম্ভাবনা নিয়ে বৈঠক করেছেন। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস তথা বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেছেন। সনিয়া ও রাহুল গাঁধীর সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎকার হয় তাঁর। তৃতীয়ত, অমিত শাহ রাজ্যে তৃণমূলকে আক্রমণ করলেও দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী ‘সহাস্য’ বৈঠক হয়েছে। এই সফরে এক সঙ্গে তিনটে পাখিই মারতে চেয়েছেন মমতা। প্রথমে, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে শক্তিশালী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা সহজাত। বলা যায়, প্রকৃতির সূত্র। তাই লালুপ্রসাদ-নীতীশের মধ্যে যতই ঝগড়া থাক, তাঁরা জোট বাঁধতে বাধ্য হয়েছেন। মমতাও বুঝতে পারছেন, ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠনের প্রয়াস মোদী সরকারকে চাপে রাখতে বাধ্য। যে মোদী সরকার এ বছরের শুরুতে সারদা-কাণ্ডে সিবিআইকে অস্ত্র করে মমতাকে বিপাকে ফেলতে চেয়েছিল, এখন তারাই সংসদে ভিতরে ও বাইরে নানা চাপে ব্যতিব্যস্ত। কাজেই এই সময়টা মমতার জন্য মাহেন্দ্রক্ষণ। দ্বিতীয়ত, বিজেপিকে চাপে রাখার পাশাপাশি মমতা বিজেপি বিরোধী রাজনীতিতে নিজের রাজনৈতিক জমিটিকে বিহার নির্বাচনের আগেই তৈরি করে নিতে চাইছেন। অতীতে সিপিএম যে কাজটি করত, এ বারে মমতা সেই কাজটি করতে চাইছেন। এক সময়ে জ্যোতি বসু এবং হরকিষেণ সিংহ সুরজিতকে সর্বভারতীয় রাজনীতির ভাঙা-গড়ার খেলায় সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে। এ বার সেই ভূমিকায় দেখা গেল মমতাকে। তৃণমূল নেত্রীর নিজের ভাষায়, ‘‘রাজনীতি হল নতুন সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করা। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি জোট গঠনে আগ্রহী তৃণমূল।’’

মমতা মনে করছেন, বিহারে বিজেপির ফল ভাল হবে না। নীতীশও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন মমতার সঙ্গে। মুলায়ম এমনকী অখিলেশের সঙ্গেও মমতার যথেষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। এ বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গেও মমতা যোগাযোগটা করে ফেললেন। তিন নম্বর পাখিটিকে তিনি মেরেছেন বিজেপি-বিরোধী ফ্রন্টে প্রয়োজনে কংগ্রেসকে সঙ্গে রাখার কথা বলে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য স্তরে কংগ্রেস-সিপিএমের আঁতাঁতের চেষ্টাতেও মমতা একটা ধাক্কা দিতে পেরেছেন বলে মনে করছেন অনেকে। সীতারাম ইয়েচুরি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেস-সিপিএম বোঝাপড়া বাড়বে বলে অনেকে মনে করলেও সংসদ সংখ্যায় বামেদের থেকে অনেক এগিয়ে তৃণমূল। তাই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সনিয়া গাঁধীর কাছে সিপিএমের তুলনায় মমতা অনেক বেশি প্রয়োজনীয়।

আসলে আড়াই দিনে জাতীয় রাজনীতির মূল মঞ্চে উঠে পরিস্থিতি যাচাই করে গেলেন মমতা। পাঁচ মাস পরে তিনি দিল্লি এসেছিলেন। আবার আসবেন ২২ সেপ্টেম্বর। বিহার ভোটের মুখে। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘১৯৮৪ সালে মমতা কিন্তু সংসদ থেকেই রাজনীতি শুরু করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগেই তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটটি তাই তিনি ভাল বোঝেন।’’

ফের দিল্লি যাবেন

রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে দাবি আদায়ের জন্য ফের দিল্লি যেতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দিল্লি থেকে নবান্নে ফেরেন তিনি। সাংবাদিকরা তাঁর কাছে সফর নিয়ে জানতে চান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বার বার দিল্লি গিয়ে দরবার করতে হবে। মমতা বলেন, ‘‘আগে তো কেউ যেত না। কাজ পেতে হলে যেতে হবে। পয়েন্ট ২ পার্সেন্ট কাজ পেলেও লাভ।’’ সোমবার বিকেলে দিল্লি যান মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তাঁর কথা হয়। সূত্রের খবর, মোদীর কাছে ২১ হাজার কোটি টাকা দাবি করেছেন তিনি।

abpnewsletters jayanta ghosal 46 tmc members mamta influences mamata national politica mamata parliamentary politics 46 mamata national politica influence mamata 46 members
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy