Advertisement
০১ মে ২০২৪

অনাহারে মৃত্যুর আশঙ্কা চা বাগানে

তিন সপ্তাহ ধরে বন্ধ কাছাড় জেলার ভুবন ভ্যালি চা বাগান। কাজ নেই, মজুরিও পাননি শ্রমিকরা। পুজোর মুখে অনাহারে মৃত্যুর আশঙ্কা ছড়িয়েছে। জেলাশাসক আজ বাগান পরিদর্শন করে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:১৯
Share: Save:

তিন সপ্তাহ ধরে বন্ধ কাছাড় জেলার ভুবন ভ্যালি চা বাগান। কাজ নেই, মজুরিও পাননি শ্রমিকরা। পুজোর মুখে অনাহারে মৃত্যুর আশঙ্কা ছড়িয়েছে। জেলাশাসক আজ বাগান পরিদর্শন করে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

চিকিৎসার অভাবে কয়েক দিনে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ভুবন ভ্যালিতে। গত কাল শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে আরও পাঁচ জনকে। অনেকেই না খেতে পেয়ে বা প্রচণ্ড খিদেয় যা খুশি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বরাক উপত্যকা চা মজদুর সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় ঠাকুর গত কালই বাগান শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর আশঙ্কা, দ্রুত বাগান খোলার উদ্যোগ নেওয়া না হলে মৃত্যু-মিছিল শুরু হবে। এ নিয়ে উদ্বেগে বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়নও।

কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন দু’দিন ধরে ওই বাগানের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছেন। তাঁরা বাগান খোলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা বললেন, এখনও পর্যন্ত কোনও তৎপরতা নেই। এতে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছেন জেলাশাসক। এ দিন পরিস্থিতি পর্যালোচনায় তিনি নিজে ভুবন ভ্যালিতে গিয়েছেন।

জেলাশাসকের নির্দেশে দু’দিন ধরে স্বাস্থ্য দফতরের একটি প্রতিনিধিদল বাগানে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। ওষুধ দিচ্ছে। কিন্তু একে প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

এই অবস্থায় উদ্বেগ ব্যক্ত করেছে বরাক উপত্যকা চা মজদুর সঙ্ঘ ও বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়ন। সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় ঠাকুর গত কাল বাগান ঘুরে এসে বলেন, ‘‘দু’দিনের মধ্যে বাগান খোলা না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেবে। না খেতে পেয়ে অনেক লোক প্রাণ হারাবেন।’’ বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যবাহী সভাপতি রাধেশ্যাম উপাধ্যায় জানান, তাঁরাও বাগানের মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। দ্রুত শিলচরে এসে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাঁদের তরফ থেকে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে বলেই উপাধ্যায়বাবু দাবি করেন। তিনি আশাবাদী— বাগান মালিক গোবিন সারদা পুজোর আগেই শ্রমিকদের বোনাস, বকেয়া মিটিয়ে দেবেন। না হলে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইউনিয়নের সহকারী সম্পাদক তথা স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা।

মালিকপক্ষ রাজ্য সরকারের শ্রম বিভাগকে চিঠি লিখে জানিয়েছে— শ্রমিকদের সমস্ত বকেয়া তাঁরা দ্রুত মিটিয়ে দেবেন। বাগান ফের চালু করার ব্যাপারে তাঁদের আগ্রহের কথাও তাতে জানানো হয়েছে। তবে চিকিৎসার অভাবে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁরা বাগানশ্রমিক বা শ্রমিক পরিবারের সদস্য নন বলেই মালিকপক্ষের দাবি। এমনকী, ২০১২ সালে অনাহারে মৃত্যু নিয়ে তাঁদের যে বদনাম করা হয়েছিল, তাঁরাও বস্তির সাধারণ মানুষ ছিল বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। বাগান মালিকদের বক্তব্য, কাঁচা পাতা বিক্রি করে বাগান চালানো হয়। এটি কঠিন ব্যাপার। তার মধ্যে এই বছর উৎপাদন কমে গিয়েছে।

অতিরিক্ত জেলাশাসক বরেণ্য দাস জানান, এ দিন জেলাশাসক বিশ্বনাথনের নেতৃত্বে প্রশাসনের প্রতিনিধিদল বাগানের সমস্যা খতিয়ে দেখেন। তাঁরা বাগান শ্রমিকদের নিয়ে সভায় মিলিত হন। শ্রমিকরা অপুষ্টি থেকে নানা ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পরে বাগানের চিকিৎসা কেন্দ্রে এক জন চিকিৎসককে নিযুক্তি দেওয়া হয়। তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ওষুধ দেবেন। প্রয়োজনে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাবেন। সে জন্য দেওয়া হয়েছে একটি অ্যাম্বুলেন্সও। মেডিক্যাল কলেজে যেন কোনও সমস্যা না হয়, তা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক দীপঙ্কর দেবকে। প্রসূতিদের অধিকাংশ রক্তাল্পতায় ভোগেন বলে তাঁদের সমস্যা বিশেষ ভাবে দেখার জন্য চিকিৎসককে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, সমাজকল্যাণ বিভাগের চারটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র রয়েছে ভুবন ভ্যালির বিভিন্ন বস্তিতে। সব জায়গায় শিশুদের খিচুড়ি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। পানীয় জলের চাহিদা ও জোগান পরিমাপ করে প্রয়োজনে আরেকটি জল সরবরাহ প্রকল্প বসানোর জন্য জেলাশাসক জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বিডিও-কে বলেছেন— জব কার্ডের মাধ্যমে এই অঞ্চলে কত বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করা যায়, তা খতিয়ে দেখে তাঁকে দ্রুত রিপোর্ট করতে।

বিকেলে জেলাশাসক প্রভিডেন্ড ফান্ডের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ও বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ছিলেন স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালাও। পুজোর আগে প্রভিডেন্ড ফান্ড থেকে বাগান শ্রমিকদের কিছু টাকা দেওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখা হয়। বিভিন্ন আলোচনার পর স্থির হয়, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার জেলাশাসককে জানাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE