Advertisement
১১ মে ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

করোনা কেড়েছে রোজগেরেদের, বিপাকে পরিবার

পরিবারের কেউ কেউ হয়ত কিছু সরকারি প্রকল্পে সামান্য সুবিধা পান। তবে এক ঝটকায় নগদ রোজগারটুকু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা পড়েছেন বিপাকে।

স্বামীকে হারিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রেহেনা বিবি।

স্বামীকে হারিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রেহেনা বিবি। নিজস্ব চিত্র

নবেন্দু ঘোষ 
হাসনাবাদ শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২১ ০৬:২৭
Share: Save:

করোনার দ্বিতীয়ে ঢেউয়ে বহু পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্যের প্রাণ গিয়েছে। পরিবারের কেউ কেউ হয়ত কিছু সরকারি প্রকল্পে সামান্য সুবিধা পান। রেশনও পাচ্ছেন। তবে এক ঝটকায় নগদ রোজগারটুকু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা পড়েছেন বিপাকে।

হাসনাবাদ থানার কালুতলার বাসিন্দা রেহেনা বিবির পরিবারের কথাই ধরা যাক। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে স্বামী গোলাম মোস্তাফার। গোলাম ইটভাটার শ্রমিক ছিলেন। তাঁর বাবা মোক্তার আলি গাজিও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। কোভিড পরীক্ষার পরের দিনই মারা যান গোলাম। রেহেনা জানান, তাঁর দুই মেয়ে। বড়জন ফারহানা পঞ্চম শ্রেণিতে উঠেছে। ছোট মাইমুনার বয়স মাত্র পাঁচ। ইতিমধ্যেই ফারহানার গৃহশিক্ষকের কাছে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রেহানা বলেন, ‘‘বাচ্চা দু’টোকে নিয়ে যেন অথৈ জলে পড়ে গেলাম।” রেহেনা জানান, রেশন পান। তাতেই খাওয়া-দাওয়াটুকু চলছে। পড়শিরাও কিছু সাহায্য করছেন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন করতে দেরি হয়েছিল। কার্ড এখনও হাতে পাননি।

হাসনাবাদের তকিপুরের বাসিন্দা বাপ্পা দাস করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ১ জুন। বাড়িতে রয়েছেন ৭৪ বছরের অসুস্থ বাবা-মা, স্ত্রী ও এগারো বছরের ছেলে। রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতেন বাপ্পা। তাতেই না চলার মতো করে চলত সংসার। বাবা সদানন্দ বলেন, “আমার শ্বাসকষ্টের সমস্যা। সপ্তাহে প্রায় ৭০০ টাকার ওষুধ লাগে। ছেলে সামান্য আয় থেকে যতটা পারত আমাদের দেখভাল করত। এখন প্রতিবেশীরাই ওষুধ কিনে দিচ্ছেন। খাবার দিচ্ছেন।” ভাঙাচোরা ত্রিপল ঘেরা ঘরে থাকে পরিবারটি। গত বছর পাকা ঘরের আবেদন করলেও এখনও কাজ হয়নি। সদানন্দ বার্ধক্য ভাতা পান। তবে গত কয়েক মাস ধরে পাচ্ছেন না বলে জানালেন। বাপ্পার মায়ের বয়স পঁয়ষট্টি। কাগজপত্রের সমস্যায় তিনিও বার্ধক্য ভাতা পান না বলে জানালেন। তবে সরকারি রেশন পায় পরিবার। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে। বাপ্পার স্ত্রী সুপ্রিয়া বাপের বাড়িতে আছেন। বললেন, “ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগানোর ক্ষমতা নেই। কাজ খুঁজছি।”

হাসনাবাদের বাসন্তীতলার বাসিন্দা মিনু মণ্ডল ও তাঁর বৃদ্ধা শাশুড়িও পড়েছেন আতান্তরে। মণ্ডল পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ফণীভূষণ করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১২ জুন মারা যান। স্ত্রী মিনু বলেন, “ওষুধের দোকানের কর্মী ছিলেন উনি। জমি-জায়গা কিছুই নেই। বাপের বাড়ির অবস্থাও ভাল না। ছ’মাস আগে বাবাও মারা গিয়েছেন করোনায়। শাশুড়ি বার্ধক্য ভাতা পান মাসে ১ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে কি আর সংসার চলে? এখন আমাকেই একটা কাজ খুঁজতে হবে।’’
মিনু আরও বলেন, তাঁদের টালির চালের ভাঙাচোরা ঘর। সরকারি প্রকল্পে ঘরের জন্য আবেদন করলেও এখনও পাননি। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও করে উঠতে পারেননি বলে জানালেন। রেশনটুকুই শুধু পান। বসিরহাটের মহকুমাশাসক মৌসম মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই সব পরিবারকে সাহায্যের ব্যাপারে সরকারি ভাবে এখনও কোনও নির্দেশ নেই। তবে যদি ওঁরা রেশন না পান বা চিকিৎসা করাতে না পারেন, তা হলে সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Deaths Coronavirus in West Bengal COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE