Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Terrorist

নেপথ্যে সেই আইএসআই, উপত্যকায় আলোচনা ভেস্তে দিতেই হামলা, ধারণা দিল্লির

হ্যাঙ্গারের অবস্থান কোথায় এবং জঙ্গিরা তা জানল কী ভাবে সেটাই চিন্তার বিষয়। বিমানবন্দরের কোনও কর্মীর জড়িত কি না তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

বিস্ফোরণের পরে জম্মুর বায়ুসেনা ঘাঁটির বাইরে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।

বিস্ফোরণের পরে জম্মুর বায়ুসেনা ঘাঁটির বাইরে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। ছবি পিটিআই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২১ ০৭:১৮
Share: Save:

জম্মু বায়ুসেনা ঘাঁটি তথা বিমানবন্দরে হামলার পিছনে পাকিস্তানি মদতে পুষ্ট জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই তইবার হাত রয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করছেন গোয়েন্দারা। জঙ্গিদের লক্ষ্য ছিল জম্মু বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে থাকা সামরিক বিমান। গোয়েন্দাদের মতে, ইরাক বা সিরিয়ায় যে ভাবে ড্রোনে বিস্ফোরক ভরে হামলা চালাত আইএস, এ ক্ষেত্রেও কিছুটা সে ভাবেই হামলা চালানো হয়েছে। যা যথেষ্ট চিন্তার। গোয়েন্দাদের মতে, এই নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের পিছনে হাত রয়েছে পাকিস্তানি সেনা ও গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর।

গত দু’বছর ধরে কাশ্মীর মোটামুটি শান্ত। উপত্যকার নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রের আলোচনা শুরু হয়েছে। সূত্রের মতে, সেই পরিবেশ নষ্ট করে ফের অস্থিরতা তৈরি করতে পাক সেনার মদতে গোটা হামলা চালিয়েছে লস্কর। একেবারে জম্মু সীমান্তের গা ঘেঁষে কোনও গ্রাম থেকে ওই ড্রোনগুলি ওড়ানো হয়। লক্ষ্য ছিল পঠানকোট-উরির মতো বড় মাপের হামলা। সূত্রের মতে, ভোর রাতে হ্যাঙ্গারের কাছে একাধিক লাল আলোর বিন্দু লক্ষ করা গিয়েছিল। সেগুলি কী তা বোঝার আগেই একটি ড্রোন থেকে প্রায় পাঁচ কিলোগ্রাম ওজনের টিএনটি বোমা হেলিকপ্টার হ্যাঙ্গারের কাছে ফেলা হয়। যদিও বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গোয়েন্দাদের একাংশের আবার দাবি, লস্কর ও জইশ-ই মহম্মদ হাত মিলিয়ে ওই হামলা চালিয়েছে। হ্যাঙ্গারের অবস্থান কোথায় এবং তা জঙ্গিরা কী ভাবে জানতে পারল সেটাই এখন মূল চিন্তা। এর পিছনে বিমানবন্দরের কোনও কর্মীর হাত রয়েছে কি না তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে যে ড্রোনগুলি ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলি ‘প্রি-ফেড’ প্রযুক্তির। এ ধরনের ড্রোনগুলি বহু উঁচু থেকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভবন, সামরিক ঘাঁটির ছবি তুলতে সক্ষম তেমনি বিস্ফোরক ভরে সেগুলিকে আত্মঘাতী ড্রোনে পরিণত করা সম্ভব। প্রাক্তন ভাইস অ্যাডমিরাল পি কে চট্টোপাধ্যায়ের
মতে, ড্রোনগুলির আকার এতটাই ছোট হয় যে রেডারের পক্ষে সেগুলিকে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। জমি থেকেও বোঝা সম্ভব নয়। যার সুযোগ নিচ্ছে জঙ্গিরা।

সীমান্তে কড়া পাহারার কারণে এখন হামলা ও অস্ত্রশস্ত্র পাচারের জন্য জম্মু-পঞ্জাব দিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক সীমান্তকেও বেছে নিয়েছে জঙ্গিরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর থেকেই জম্মু ও পঞ্জাব সীমান্তে পাক ড্রোনের আনাগোনা বাড়তে থাকে। গোড়ায় প্রতি মাসে গড়ে ১০-১৫টি পাক ড্রোনের ভারতে প্রবেশের প্রমাণ মিললেও, এ বছর সেই সংখ্যাটি এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে। যে ভাবে সীমান্ত থেকে ১৪ কিলোমিটার ভিতরে প্রবেশ করে হামলা চালানো হয়েছে তার পিছনে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও দীর্ঘ দিনের প্রশিক্ষণ রয়েছে বলেই মত স্বরাষ্ট্রকর্তাদের।

ভারতের নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে সমস্যা হল এ ধরনের উড়ন্ত ড্রোন মাটিতে নামানোর কোনও প্রযুক্তি তাদের হাতে নেই। প্রাক্তন বিএসএফ ডিজি ভি কে জহুরির মতে, লক্ষ্যবস্তু উড়ন্ত অথচ আকারে ছোট হওয়ায় এদের হদিশ পাওয়া মুশকিল। একমাত্র দূরপাল্লার স্নাইপার রাইফেল ছাড়া এগুলিকে নামানো মুশকিল। কিন্তু সমস্যা হল ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ। এই দীর্ঘ সীমান্ত জুড়ে স্নাইপার মোতায়েন করা অসম্ভব। তাই সীমান্ত জুড়ে ড্রোন জ্যামিং করার প্রযুক্তি মোতায়েন করার পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্রের। কিন্তু বিদেশি ওই প্রযুক্তি অত্যন্ত দামি বলে কাজ আপাতত থমকে রয়েছে। যার খেসারত আজ দিতে হল জম্মু বিমানবন্দরকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Terrorist ISI Pakistan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE