Advertisement
E-Paper

জল-যুদ্ধে জ্বলছে বেঙ্গালুরু, পুলিশের গুলিতে নিহত ১

ছিল বিবাদ। মোড় নিল দাঙ্গায়। সোমবার বেঙ্গালুরু ও তার আশপাশের এলাকায় তামিল-বিরোধী বিক্ষোভ ভয়াল আকার নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র‌্যাফ নামানো হয়, তারপর জারি করা হয় ১৪৪ ধারা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:১৯
তামিল-কন্নড় সংঘর্ষে উত্তাল বেঙ্গালুরু। তামিলনাড়ু থেকে আসা ট্রাকে আগুন লাগিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সোমবার। ছবি: পার্থ পাল

তামিল-কন্নড় সংঘর্ষে উত্তাল বেঙ্গালুরু। তামিলনাড়ু থেকে আসা ট্রাকে আগুন লাগিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। সোমবার। ছবি: পার্থ পাল

ছিল বিবাদ। মোড় নিল দাঙ্গায়।

সোমবার বেঙ্গালুরু ও তার আশপাশের এলাকায় তামিল-বিরোধী বিক্ষোভ ভয়াল আকার নেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র‌্যাফ নামানো হয়, তারপর জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’তে যা বেনজির! দিনের শেষে বেঙ্গালুরুর রাজগোপালনগরে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছেন এক বিক্ষোভকারী। আহত এক।

বিক্ষোভ ছিল পড়শি রাজ্যের সঙ্গে জল ভাগাভাগি নিয়ে। সোমবার দাঙ্গা-হাঙ্গামার ছবি বুঝিয়ে দিল, ‘প্রতিবেশী’কে দেখলেই গায়ে জ্বালা ধরছে কন্নড়ভাষীদের একাংশের। বিক্ষোভের আগুনে রাস্তা ও ডিপোতে পুড়ে ছাই হয়েছে ৬টা ট্রাক, অন্তত ২০টা বাস। প্রত্যেকটিরই গায়ে তামিলনাড়ুর নম্বরপ্লেট। বেঙ্গালুরু শহরের একটা বড় অংশ জুড়ে দিনভর বন্ধ ছিল দোকানপাট। তামিল অধ্যুষিত এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হামলার খবর মিলেছে। কিছু লোকজনকে ধরে পেটাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা, এমন দৃশ্যও দেখা গিয়েছে। বেশ কিছু ক্ষণ বন্ধ ছিল মেট্রো পরিষেবা। একাধিক স্কুল-কলেজে হাফ-ছুটি ঘোষণা হয়ে যায়। বেলাগাম ভাঙচুর থেকে রেহাই মেলেনি স্কুলবাসেরও।

পরিস্থিতির মোকাবিলায় ১৫ হাজার অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাফ-সহ দশ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানো হয়। লাঠিচার্জ আর ধরপাকড় চলে। কিন্তু তাতেও অশান্তি জারি থাকায় বিকেল পাঁচটা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। বেঙ্গালুরুর তামিল বাসিন্দারা অবশ্য পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনেছেন। তাঁরা বলছেন, প্রশাসন শক্ত হাতে বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলা করলে পরিস্থিতি এ ভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত না।

আজ সকালে বিক্ষোভ শুরু হয় বেঙ্গালুরু-মাইসুরু হাইওয়েতে। বিক্ষোভকারীদের তাণ্ডবে অচল হয়ে পড়ে এই সড়ক। দিন গড়াতেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাণ্ডবের খবর আসতে থাকে। হুড়োহুড়ি পড়ে যায় বাড়ি ফেরার। তত ক্ষণে অবশ্য জ্যামে নাকাল শহরের একটা বড় অংশ। বাস-ট্রাক পোড়ানোর পাশাপাশি আজ হামলা চলে বেঙ্গালুরুর একাধিক শো-রুম, ব্যাঙ্কে। হামলার মুখে পড়তে হয়েছে সাংবাদিকদেরও। কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরুতে থাকা নাগরিকদের প্রতি বিশেষ সর্তকর্বার্তা পাঠিয়েছে আমেরিকা। উত্তেজনাপ্রবণ এলাকা এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে তাঁদের। দুপুরে বিক্ষোভকারীদের ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। সেখান থেকেই স্লোগান ওঠে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ‘রেল-রোকো’ আন্দোলনের।

কাবেরীর জলবণ্টন নিয়ে আগের রায় পাল্টে সোমবারই নতুন নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যাতে তামিলনাড়ুকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিনে ১২ হাজার কিউসেক জল দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর আগে শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিনে ১৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়তে হবে। কর্নাটকের দাবি, দিনে ৩ হাজার কিউসেক জল কম ছাড়তে হলেও, দিনের হিসেবে জলের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আর এটাই বিক্ষোভকারীদের রাগের প্রধান কারণ।

জলযুদ্ধে জমি ছাড়তে নারাজ তামিলনাড়ুও। স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার ভোররাতে চেন্নাইয়ের একটি কন্নড় রেস্তোরাঁয় পর পর ছ’টি পেট্রোল বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। হামলার সময় কর্নাটক-বিরোধী স্লোগান দিতেও শোনা যায় দুষ্কৃতীদের। দিন গড়াতেই আরও হামলার খবর আসে তামিলনাড়ু থেকে। কর্নাটকের দু’টি বাস ও তিনটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার খবরে আপাতত বাতিল করা হয়েছে তামিলনাড়ুগামী রাজ্যের একাধিক বাস পরিষেবা।

স্থানীয় সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার কাছে নিরাপত্তার আর্জি জানিয়েছে কর্নাটকে বসবাসকারী ২৫ লক্ষেরও বেশি তামিল নাগরিকের একটি সংগঠন। কন্নড়দের তরফেও একই আর্জি জমা পড়েছে তামিল মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার কাছে। কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামিকালই রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী। চিঠি লিখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন জয়ললিতাও।

Massive violence Bengaluru Cauvery River Kaveri Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy