Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National News

‘অব কি বার... ’ ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে, বললেন বিদেশমন্ত্রী ।। মোদীকে কূটনীতি শেখান, কটাক্ষ রাহুলের

টুইটারে রাহুল গাঁধীর খোঁচা, ‘প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ মিস্টার জয়শঙ্কর’। প্রধানমন্ত্রীকে ‘কূটনীতি শেখান’বলেও কটাক্ষ করেছেন রাহুল।

ওয়াশিংটনে সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: পিটিআই

ওয়াশিংটনে সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: পিটিআই

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:০৩
Share: Save:

‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ‘অব কি বার, ট্রাম্প সরকার’। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে নরেন্দ্র মোদী প্রচার করেছেন বলে তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন বিরোধীরা। এ বার সেই মার্কিন মুলুকেই মোদীর সেই মন্তব্যের ‘ভুল ব্যাখ্যা’র অভিযোগ তুলে মিডিয়ার ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁর দাবি, ট্রাম্পের হয়ে প্রচার নয়, আসলে মোদী বলতে চেয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টই প্রচারে এই স্লোগান ব্যবহার করছেন।

যদিও কূটনৈতিক শিবিরের মতে, মোদীর ওই মন্তব্যের জেরে কেন্দ্র যে চাপে, সেটাই আরও স্পষ্ট করে দিলেন জয়শঙ্কর। বিদেশমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরেই নতুন করে আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস। টুইটারে রাহুল গাঁধীর খোঁচা, ‘প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ মিস্টার জয়শঙ্কর’। প্রধানমন্ত্রীকে ‘কূটনীতি শেখান’বলেও কটাক্ষ করেছেন রাহুল।

প্রধানমন্ত্রীর এক সপ্তাহের মার্কিন সফরের সময় গত ২২ সেপ্টেম্বর হিউস্টনে ‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠান ঘিরে আমেরিকা প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে ব্যাপক উন্মাদনা তৈরি হয়। প্রায় ৫০ হাজার দর্শকের সামনে নজিরবিহীন ভাবে ট্রাম্পকে পরিচয় করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেই অনুষ্ঠানেই মোদী বলেছিলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে, তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে ভারতীয়দের খুব ভাল সম্পর্ক। ‘অব কি বার ট্রাম্প সরকার’— স্লোগান আরও জোরদার ও স্পষ্ট হবে।’’

মোদীর এই মন্তব্যের পরেই কংগ্রেস-সহ প্রায় সব বিরোধীরা সরব হয়। মার্কিন মুলুকে আগামী বছরই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরোধীদের আক্রমণ ছিল, সেই নির্বাচনে ট্রাম্প তথা তাঁর দল রিপাবলিকানদের হয়ে প্রচার করে এসেছেন মোদী। যা ভারতীয় বিদেশনীতির পরিপন্থী এবং অশোভনীয়। কারণ, অন্য কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারত কখনওই হস্তক্ষেপ করে না। আমেরিকায় রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই দলের সঙ্গেই সমান সুসম্পর্ক ভারতের। ফলে মোদীর এই মন্তব্য দেশের বহু প্রাচীন বিদেশনীতিকে লঙ্ঘন করেছ।

আরও পড়ুন: রাজীব কুমারের আগাম জামিন মঞ্জুর করল হাইকোর্ট, ধাক্কা খেল সিবিআই

দেশের এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই তিন দিনের মার্কিন সফরে গিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। সেখানে ভারতীয় সাংবাদিকদের সামনে স্বাভাবিক ভাবেই এই সংক্রান্ত প্রশ্নের মুখে পড়েন এস জয়শঙ্কর। কিন্তু তিনি প্রথমেই ট্রাম্পের হয়ে প্রচারের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘না উনি (প্রধানমন্ত্রী) সেটা বলেননি। প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, সেটা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখুন। আমার যতদূর মনে পড়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ট্রাম্পই ওই স্লোগান (অব কি বার, ট্রাম্প সরকার) ব্যবহার করেছিলেন। সূতরাং প্রধানমন্ত্রী সেই অতীতের কথাই বলতে চেয়েছেন।’’

সাংবাদিকদের দিকেও ভুল ব্যাখ্যার অভিযোগ ছুড়ে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি মনে করি, কোনও কিছুর ভুল ব্যাখ্যা করা উচিত নয়। আমার মনে হয় না আপনারা কারও জন্য ভাল কিছু করছেন।’’

তাহলে ঠিক ব্যাখ্যা কোনটা? সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন ২০১৯ এর নির্বাচনেই আমলা থেকে অবসর নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া জয়শঙ্কর। তাঁর মতে, ‘‘আমার মনে হয় উনি (প্রধানমন্ত্রী) যা বলেছেন, তা স্পষ্টই ছিল। উনি বলেছিলেন, আপনি (ট্রাম্প)যা বলেছেন, তাতে মনে হয়েছে প্রার্থী হিসেবেও আপনি নিজেকে ভারত ও ভারতীয়দের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করেছেন।’’

আরও পডু়ন: সরকার যে ছবি দেখাচ্ছে, তা ধোঁকা ছাড়া কিছু নয়, কাশ্মীর ঘুরে এসে বললেন আজাদ

বিদেশনীতি নিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে আমরা নিরপেক্ষ। সূতরাং এই দেশের (আমেরিকায়) সব রাজনৈতিক ঘটনাক্রম ওঁদের দেশের রাজনীতি, আমাদের নয়।’’

কিন্তু জয়শঙ্করের এত ব্যাখ্যার পরেও বিতর্ক থামেনি। বরং নতুন করে আক্রমণের অস্ত্র হাতে পেয়ে গিয়েছেন বিরোধীরা। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি তথা বর্তমানে দলের সাংসদ রাহুল গাঁধী তীব্র কটাক্ষ করেছেন টুইটারে। মোদীর মন্তব্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তুলে রাহুল লিখেছেন, ‘‘ওর (প্রধানমন্ত্রী) তাঁবেদারি ভারতীয় ডেমোক্র্যাটদের বড় সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। আশা করি, আপনার হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান হবে। আপনি যখন এর মধ্যে ঢুকেছেন, ওঁকে (প্রধনমন্ত্রীকে) একটু কূটনীতি শিখিয়ে দেবেন।’’

কূটনৈতিক মহল মনে করছে, ড্যামেজ কন্ট্রোলের এই চেষ্টা করতে গিয়ে কার্যত কিছুটা থিতিয়ে যাওয়া বিতর্ক আরও সামনে নিয়ে এসেছেন বিদেশমন্ত্রী। ফের বিরোধীদের আক্রমণের রাস্তা খুলে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE