ম্যাকলাক্সিগঞ্জের রাস্তায় মজিদ।—নিজস্ব চিত্র।
সপ্তাহান্তের সন্ধ্যায় সাহেব, আধা-সাহেবদের পার্টি জমে উঠত ক্লাবে। নাচ-গান হতো। বড়দিনে কেক। হাউজি খেলা হতো। রাতে বাড়ি ফেরার সময় তাঁদের হাতে থাকত বন্দুক। হিংস্র জন্তু-জানোয়ার সামনে এলে ভয় দেখাতে গুলি ছুড়তেন তাঁরা। জংলা আগাছায় ভরা ম্যাকলাক্সিগঞ্জের পুরনো ক্লাব বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে এত কথা বলে দম নিলেন বছর ষাটেকের মজিদ। জৌলুস হারানো ঝাড়খণ্ডের সাবেক সাহেবি এক গঞ্জের কথা মনে করে তাঁর গলায় জড়ায় বিষাদ।
‘ক্যান্টিন মজিদ’ নামেই এখনও পরিচিত তিনি। এক সময় ম্যাকলাক্সিগঞ্জ স্টেশনে তাঁর ক্যান্টিন ছিল। সেই ক্যান্টিনের শিঙাড়া ছিল বিখ্যাত। ক্যান্টিন কবেই উঠে গিয়েছে, ক্যান্টিন-মজিদ নামটি কিন্তু তাঁর সঙ্গেই বেঁচে আছে। এখন স্টেশন চত্বরে ষাটোর্ধ্ব মজিদের ফলের দোকান। তবে পর্যটক এলে ফলের দোকান বন্ধ করে পাহাড়, জঙ্গল, নদীতে ঘেরা ম্যাকলাক্সিগঞ্জের ‘গাইড’ হয়ে যান ‘মজিদ ভাই’। ম্যাকলাক্সিগঞ্জের প্রেমে এখনও বিভোর তিনি। কখনও কোনও পর্যটক এলে তাঁকে শোনান গঞ্জের স্বর্ণযুগের অজানা গল্প।
কোনটা কার বাংলো ছিল, কোথায় অপর্ণা সেনের বাংলো, কেমন ছিলেন গর্ডন সাহেব, তাঁর বাংলো কোনটা— এ সব পর্যটকদের না দেখানো পর্যন্ত মজিদ ভাইয়ের স্বস্তি নেই। এমনকী হাল আমলে ‘ছোটে মেমসাব’ কঙ্কনা সেনশর্মার ‘আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’ ছবির শ্যুটিং কোথায় কোথায় হয়েছিল তা-ও ঘুরিয়ে দেখাবেন মজিদ।
পর্যটকদের ঘোরানোর শেষে দেড়-দু’শো টাকা হাতে পেলেই তৃপ্তির হাসি হেসে বিড়ি ধরিয়ে মজিদভাই যেন জনপদের প্রতিনিধি হিসেবেই সাদর আমন্ত্রণ জানান, ‘‘আবার আসবেন! ফিরে গিয়ে বন্ধুদের ম্যাকলাক্সিগঞ্জের গল্প বলবেন। আসতে বলবেন ওঁদের। সব ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy