বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে রাষ্ট্রপতি। ছবি: পিটিআই
কাশ্মীর উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে ভারতে নিযুক্ত পাক রাষ্ট্রদূত দেখা করে আলোচনা করায় সম্প্রতি ইসলামাবাদের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এ বার জম্মু-কাশ্মীর সফরে এসে বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে বার্তা দিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে উপত্যকার যুবকদের দেশের উন্নয়নে সামিল হওয়ার আহ্বান জানালেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি গত কাল দু’দিনের জন্য জম্মুতে এসেছিলেন। জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মোহনদাস গাঁধীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “ভারত সমানাধিকার ও সার্বিক বৃদ্ধির শর্তকে সামনে রেখেই এগিয়ে চলছে। সব স্নাতক ছাত্র যেন মনে রাখেন, দেশের উন্নয়নের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা রয়েছে।”
নিরাপত্তার প্রশ্নে জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি কিছুটা জটিল হয়ে উঠেছে। সীমান্তে ঘনঘন সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করছে পাকিস্তান। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, বহু দিন পরে সীমান্তে এমন গোলাবর্ষণ চালাচ্ছে ইসলামাবাদ। ভারতীয় নাগরিকের প্রাণও গিয়েছে তাতে। ফের সন্ত্রাসবাদও মাথাচাড়া দিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকায়। আজও নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে তিন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে এ রাজ্যে। ফলে পরিস্থিতি এমনিতেই জটিল। তার উপরে সামনে রয়েছে বিধানসভা ভোট। যে দিকে তাকিয়ে এর মধ্যেই মেরুকরণের রাজনীতিতে নেমেছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। এতে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ও উপত্যকায় বিচ্ছিন্নতার মনোভাব বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। এমনই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির জম্মু সফর ও সেখানে গিয়ে পরোক্ষে বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে বার্তা দেওয়াকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি এ দিন বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে পুজো দেন। এ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে রাজনীতিকদের মধ্যে। এমন নয় যে, প্রণববাবুই প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি এই মন্দিরে পুজো দিলেন। শঙ্করদয়াল শর্মা, প্রতিভা পাটিলরাও তা করেছেন। কিন্তু কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পরপরই রাষ্ট্রপতির কেরলে গিয়ে পদ্মনাভস্বামী মন্দিরে পুজো দেওয়া ও আজ বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যাওয়াকে অনেকে শাসক দলের হিন্দুত্বের কর্মসূচির সঙ্গে এক পঙ্ক্তিতে রেখে দেখতে চাইছেন কেউ কেউ। তাঁদের মতে, মোদী সরকারের মেরুকরণের রাজনীতি তথা বিজেপির হিন্দুত্বের কর্মসূচি এতে আরও শক্তি পাবে। বিশেষত উত্তর ও দক্ষিণের দুই মন্দিরে প্রণববাবুর পুজো দেওয়া নিয়ে যেখানে বিজেপিও ঘরোয়া আলোচনায় বেশ গদগদ।
তবে পুজো দেওয়া নিয়ে কোনও রকম বিতর্কের অবকাশ না রাখতে রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে বলা হচ্ছে, এ সবই জল্পনা-মাত্র। প্রণববাবু ধার্মিক ব্রাহ্মণ। নিয়মিত পুজো করেন। তাই পদ্মণাভস্বামী মন্দির বা পুরীর জগন্নাথ মন্দির, কিংবা বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে পুজো দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ যে থাকবে তা স্বাভাবিক। তবে বরাবর তিনি যে ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি করেছেন, তা-ও সুবিদিত। বৈষ্ণোদেবী মন্দির কর্তৃপক্ষ বহু দিন আগেই তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি সেই নিমন্ত্রণ রক্ষা করেছেন।
রাষ্ট্রপতি ভবনের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত অনেকেই। তাঁদের মতে, এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজা অর্থহীন। এবং তাতে বিজেপির কোনও লাভ হবে না বলেই মনে করেন কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান নেতা। তাঁর ব্যাখ্যা, রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণববাবু রাজনীতির উর্ধ্বে। তবু জাতীয় রাজনীতিতে তিনি বরাবরই ছিলেন আদ্যন্ত কংগ্রেসি। গোটা দেশ তা জানে। কীর্ণাহারের এই ব্রাহ্মণসন্তানের বিভিন্ন মন্দিরে পুজো দেওয়া বরং বিজেপির হিন্দুত্বের রাজনীতিকে প্রশমিতই করবে বলে মনে করছেন কংগ্রেসের ওই নেতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy