Advertisement
০৪ জুন ২০২৪

ফেরিওয়ালা সেজে জঙ্গি ধরল পুলিশ

অনেকটা যেন বলিউডের ব্লক-বাস্টার সিনেমার চিত্রনাট্য! জঙ্গি নেতাকে ধরতে আদালত চত্বরে ছদ্মবেশে ঘুরছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। কোনও পুলিশকর্মী আবার ফেরিওয়ালা সেজে বিক্রি করছেন ভুট্টা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
করিমগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫৪
Share: Save:

অনেকটা যেন বলিউডের ব্লক-বাস্টার সিনেমার চিত্রনাট্য!

জঙ্গি নেতাকে ধরতে আদালত চত্বরে ছদ্মবেশে ঘুরছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। কোনও পুলিশকর্মী আবার ফেরিওয়ালা সেজে বিক্রি করছেন ভুট্টা।

সব কিছু চলছিল রূপোলি পর্দার গল্পের মতোই। আচমকাই তাল কাটল। করিমগঞ্জের পুলিশকর্তাকে সামনে দেখে পা ঠুকে সশব্দে স্যালুট করে বসলেন ছদ্মবেশে থাকা হাইলাকান্দির এক কনস্টেবল। ব্রু লিবারেশন আর্মি জঙ্গি সংগঠনের নেতা অর্ণজয় রিয়াংকে ধরতে শিলচরের আদালতে যে হাইলাকান্দি পুলিশও ওৎ পেতেছে তা তখনই জানতে পারেন করিমগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নবীন সিংহ। এ সব টের পেলে ‘পাখি’ পালিয়ে যেতে পারে, সেই চিন্তা করে আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে যান তিনি। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায় জঙ্গি নেতা অর্ণজয়।

শিলচরের এসিজেএম আদালতে গত কাল অর্ণজয় হাজিরা দিতে আসবে, সেই খবর গোয়েন্দা সূত্রে পেয়েছিল করিমগঞ্জ পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার-সহ ৮ পুলিশকর্মী সাদা পোশাকে আদালতে ওৎ পাতেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের গাড়ির চালক গোপেন দাস ভুট্টা-বিক্রেতা সেজে সেখান ঘুরছিলেন। করিমগঞ্জ পুলিশের টাউন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মিন্টু শীল এক পুলিশকর্মীর সঙ্গে বুধবারই শিলচরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। করিমগঞ্জ পুলিশের কাছে অর্ণজয়ের পুরনো ও অস্পষ্ট একটা ছবি ছিল। গত কাল সকালে করিমগঞ্জ পুলিশ খবর পায়, এসিজেএম আদালতে হাজির হবে না ব্রু জঙ্গি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। সে যেতে পারে জেলা বার সংস্থায়। সেখানে পৌঁছনোর পর এক যুবককে দেখে সন্দেহ হয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের। সে দিকে এগোতেই আচমকা তাঁকে স্যালুট করেন ওই যুবক। হতবাক হয়ে যান নবীনবাবু। পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে ওই যুবক জানান, তিনি অর্ণজয়কে ধরতে হাইলাকান্দি পুলিশের সঙ্গে শিলচরে এসেছেন। সঙ্গে রয়েছেন হাইলাকান্দির ডিএসপিও। পরিস্থিতি বুঝে সেখান থেকে সরে যান নবীনবাবু।

পুলিশ সূত্রে খবর, তখনই তাঁর নজরে পড়ে আদালতের এক মুহুরীর সামনে দাঁড়ানো সুঠাম চেহারার যুবকের দিকে। মুহুরী কাগজে কিছু একটা লিখছিলেন। নবীনবাবু দেখেন, কাগজে অর্ণজয়ের নামই লেখা হচ্ছে। তিনি বুঝতে পারেন সাদা গেঞ্জি পরিহিত যুবকটিই অর্ণজয়। কিন্তু আইনজীবীদের দফতরে তাকে ধরলে আইনি সমস্যা হতে পারে, সে কথা চিন্তা করে তিনি তখন কোনও পদক্ষেপ করেননি। কিছু ক্ষণ পর অর্ণজয় তার সঙ্গী বলইরাম রিয়াংকে নিয়ে আদালত চত্বর থেকে বের হয়। সেই সময়ই তাকে জাপটে ধরেন করিমগঞ্জের পুলিশকর্মীরা। ঠিক তখনই নবীনবাবুকে পিছন দিক থেকে চেপে ধরেন আরও এক জন। ওই লোকটি জানান, তিনি হাইলাকান্দির পুলিশ অফিসার। বাধ্য হয়ে তাঁকে নিজের পরিচয় দেন নবীনবাবু।

ব্রু লিবারেশন আর্মির সাধারণ সম্পাদককে আজ করিমগঞ্জের আদালতে হাজির করানো হয়। তাকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে রাতাবাড়ি পুলিশ। গত কাল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে সেনাবাহিনী, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, অসম পুলিশ-সহ বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা ধৃত দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, অর্ণজয় বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। দু’মাস আগে ব্রু লিবারেশন আর্মির তরফ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি দাবিসনদ পাঠানো হয়েছিল। সেখানে সংগঠনের সভাপতি রাজেশ চর্কি এবং সাধারণ সম্পাদক অর্ণজয়ের স্বাক্ষর ছিল। ধৃতদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন, ৩ হাজার টাকা মিলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bollywood movie militant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE