Advertisement
০৪ মে ২০২৪

উন্নয়নশীল গ্রাম দত্তক নিয়ে মন্ত্রী জড়ালেন বিতর্কে

গ্রামের সমস্যা মেটাচ্ছেন নিজেরাই। ধীরে ধীরে সেখানে হয়েছে স্কুল, বিদ্যুৎ এবং তার বিকল্প হিসেবে ব্যবস্থা হয়েছে সৌরালোকেরও। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির প্রত্যেকটি ছেলেমেয়ের স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের সুবিধার্থেই গ্রাম জুড়ে রয়েছে ২৪ ঘণ্টার ওয়াই-ফাই সংযোগ। তবে অন্য পাঁচটা প্রত্যন্ত গ্রামের মতো এখানে এখনও সমস্যা কিছু কম নেই। মিড্ল স্কুলটি হাইস্কুল হওয়া দরকার, হাসপাতাল দরকার, একটা কলেজ হলে ভাল হয়।

স্বপন সরকার
পটনা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:২৭
Share: Save:

গ্রামের সমস্যা মেটাচ্ছেন নিজেরাই। ধীরে ধীরে সেখানে হয়েছে স্কুল, বিদ্যুৎ এবং তার বিকল্প হিসেবে ব্যবস্থা হয়েছে সৌরালোকেরও। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির প্রত্যেকটি ছেলেমেয়ের স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের সুবিধার্থেই গ্রাম জুড়ে রয়েছে ২৪ ঘণ্টার ওয়াই-ফাই সংযোগ। তবে অন্য পাঁচটা প্রত্যন্ত গ্রামের মতো এখানে এখনও সমস্যা কিছু কম নেই। মিড্ল স্কুলটি হাইস্কুল হওয়া দরকার, হাসপাতাল দরকার, একটা কলেজ হলে ভাল হয়। তবু আশপাশের আর পাঁচটি অনুন্নত গ্রামের মধ্যে নিজেদের অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিহারের রোহতাস জেলার আমিওয়া গ্রাম।

গ্রামে প্রায় দশ হাজার মানুষের বাস। এখনও পর্যন্ত সেখানকার ১৪ জন আইআইটি থেকে পাশ করে দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় ছড়িয়ে আছেন। আছেন অনেক ইঞ্জিনিয়ার এবং এমবিএ করা ছেলেও। গ্রামের এই কৃতি ও প্রতিষ্ঠিত মানুষদের সাহায্যে আজ আমিওয়া বদলে গিয়েছে অনেকটাই। বদলে গিয়েছে সার্বিক মানসিকতাই। বিদ্যুতের সমস্যা তেমন নেই। থাকলেও বিকল্প সোলার প্যানেল রয়েছে। ফলে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ। গ্রামে হয়েছে ব্যাঙ্ক, স্কুল, পাকা রাস্তা এবং সর্বোপরি শিক্ষার আলো।

এমন এক গ্রাম তো যে কোনও রাজনীতিকের নেক নদরে পড়বেই। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং এলাকার সাংসদ উপেন কুশওয়া স্বাভাবিক ভাবেই আমিওয়াকে হাত ছাড়া করতে চান না। প্রধানমন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনায় স্থানীয় সাংসদ দত্তক নিয়েছেন আমিওয়াকেই। আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে তর্ক-বিতর্ক। এলাকার পিছিয়ে পড়া অন্যান্য গ্রামের বাসিন্দাদের প্রশ্ন, যেখানে এত সুবিধা আছে তাকে দত্তক না নিয়ে, যেখানে সামান্য পরিকাঠামোটুকুও নেই, তেমন কোনও গ্রামকে মন্ত্রীজি বেছে নিলেন না কেন? তেলা মাথায় তেল কেন, এই প্রশ্নে গত কালই নিগরানি বিকাশ মঞ্চ নামে জেলার একটি সংগঠন কুশওয়ার কুশপুতুলও দাহ করেছে।

মন্ত্রী তথা সাংসদের যুক্তি, “একটি গ্রামে পরিকাঠামো বা ইন্টারনেট থাকাটা উন্নয়নের মাপকাঠি হতে পারে না। গ্রামে চাই আরও বিকাশ। চাই কলেজ, হাইস্কুল, হাসপাতাল।” কিন্তু যে গ্রামে ছিটেফোঁটা সুবিধাও নেই সেখানকার গ্রাম কেন আদর্শ গ্রাম যোজনার তালিকাভুক্ত নয়? মন্ত্রীর জবাব, “এই নয় যে তালিকা ভুক্ত না হলে গ্রামের উন্নয়ন হবে না। মানুষের যোগদানের মধ্যে দিয়ে গড়ে তোলা হবে প্রতিটি গ্রামের উন্নয়ন। আমার সংসদীয় এলাকার গ্রামগুলি তো আমারই সন্তানের মতো। সেখানেও আমার সমান নজর থাকবে।” সমালোচকরা বলছেন, “যে গ্রাম ইতিমধ্যেই উন্নত এবং সুযোগ সুবিধার দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে, নাম কিনতে এখন সেই গ্রামকে দত্তক নিয়ে সস্তায় বাজিমাতের চেষ্টা করতে চাইছেন সাংসদ। কিন্তু ভুললে চলবে না একটা গ্রামকে কেন্দ্র করে সাংসদ যদি নাম কেনার জন্য রাজনীতি করেন তা হলে অন্যান্য গ্রামের মানুষ কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধেই যাবে।”

বিকাশ মঞ্চের মুখপাত্র রবি কুমারের কথায়, “নওয়াদি গ্রামটির কথাই ধরুন। ওই গ্রামে অন্য সুবিধা তো দূরস্থান, এখনও সেখানে বিদ্যুতের নামগন্ধ নেই। মোবাইল চার্জ দিতে যেতে হয় ছ’কিলোমিটার দূরের গ্রামে। আর রাস্তা বা পানীয় জলের কথা ছেড়েই দিন।” তাঁর প্রশ্ন, এই গ্রামটি কী কেন্দ্রের আদর্শ গ্রাম যোজনায় অর্ন্তভুক্ত হতে পারত না?

তবে এই ঝামেলায় যেতে চান না আমিওয়ার বাসিন্দারা। তাদের এখন দাবি, গ্রামে এখানে হাইস্কুল, হাসপাতাল এবং কলেজের প্রয়োজন। এই পরিস্থিতিতে রোহতাসের জেলাশাসক সন্দীপ কুমার পুডাকালকাট্টির বক্তব্য, “অন্য গ্রামের তুলনায় আমিওয়া অনেক উন্নত। তবে মন্ত্রী এই গ্রামকে দত্তক নেওয়ায় ভালই তো হল! এখানকার অন্য সমস্যাগুলিও দ্রুত মিটে গিয়ে তৈরি হবে ‘আদর্শ গ্রাম’।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE