Advertisement
E-Paper

বিধায়ক জেলে, উন্নয়ন থমকে, ক্ষুব্ধ বড়খলা

উচ্চ আদালতেও জামিন মিলল না কাছাড় জেলার বড়খলা আসনের কংগ্রেস বিধায়ক রুমি নাথের। এ বার তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকার মানুষের। বিধায়ক না-থাকায় নানা সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। আর তখনই রুমিকে দোষারোপ করছেন।

উত্তম সাহা

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০২:৫৮

উচ্চ আদালতেও জামিন মিলল না কাছাড় জেলার বড়খলা আসনের কংগ্রেস বিধায়ক রুমি নাথের। এ বার তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে এলাকার মানুষের। বিধায়ক না-থাকায় নানা সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। আর তখনই রুমিকে দোষারোপ করছেন। এর সুযোগ নিচ্ছে বিরোধী দলগুলি। জেলা কংগ্রেস পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বড়খলায় বিধায়কের অনুপস্থিতির ফাঁক পূরণ করার জন্য পৃথক কমিটি গঠন করেছে। মানুষের সমস্যা, উন্নয়নমূলক কাজকর্ম ইত্যাদি দৈনন্দিন বিষয় কমিটিকেই দেখতে বলা হয়েছে।

ক’দিন আগে মেডিক্যাল রিপোর্টে ধরা পড়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা। এই খবর তাঁকে নতুন করে বিতর্কের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।আর রুমি এই রিপোর্টকেই নিজের জামিনের জন্য হাতিয়ার করতে চেয়েছিলেন। আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতকে তিনি জানান, ‘‘আমি অন্তঃসত্ত্বা। একমাস ধরে জেলে রয়েছি। এই সময়ে আমার ভালো চিকিত্সার প্রয়োজন।’’ সরকারি কৌঁসুলির আপত্তিতে জামিন হয়নি তাঁর। জামিনের বিরোধিতা করে সরকারি কৌঁসুলি বলেন, এটি শুধু একটি গাড়িচুরির মামলা নয়। এর পিছনে বিরাট ষড়যন্ত্র রয়েছে। জামিন পেলে বিধায়ক তাঁর প্রভাব খাটিয়ে তদন্তের কাজ বিঘ্নিত করতে পারেন। হাইকোর্টের বিচারপতি রুমিকুমারী ফুকন তাঁর যুক্তি মেনে নিয়ে জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে এখন তাঁকে নিম্ন আদালতের নির্দেশেরই অপেক্ষা করতে হবে। আগামী ২৫ মে তাঁকে ফের সিজেএম আদালতে তোলা হবে।

১৪ এপ্রিল গুয়াহাটির বিধায়ক আবাস থেকে রুমি নাথকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেই থেকে তিনি জেলেই রয়েছেন। বিধায়কের দীর্ঘ অনুপস্থিতি বড়খলার মানুষকেও সমস্যায় ফেলেছে। বিধায়কদের নানা রকমের শংসাপত্র, সুপারিশ এলাকাবাসীর প্রয়োজন পড়ে। আগে তিনি এলাকায় না থাকলেও সই করা প্যাড ঘনিষ্ট দুয়েক জনের কাছে দিয়ে রাখতেন। সাধারণ কাজের জন্য তাঁরাই যা লেখার লিখে দিতেন। বিধায়ক জেলে থাকায় এঁরাও এখন আর প্যাড বের করার সাহস পাচ্ছেন না। বিধায়কের তদারকির অভাবে স্তব্ধ এলাকার উন্নয়নমূলক কাজকর্মও। রানিঘাট-গনিরগ্রাম কংক্রিটের রাস্তার কাজের শিলান্যাস হলেও ঠিকাদার কাজ শুরুর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। রাজনগর পঞ্চায়েতের মানিকপুরে নদী-ভাঙন ঠেকাতে প্রকল্প অনুমোদন করানোর ব্যাপারে বিধায়ক এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন। এখন সে কাজ হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন না স্থানীয় মানুষ। এ ছাড়া, শিলচর থেকে রানিঘাট হয়ে জারইলতলা পর্যন্ত সরকারি বাসসেবা তাঁরই উদ্যোগে চালু হয়েছিল। রুমির গ্রেফতারের পর সেটিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। উধারবন্দ হয়ে বড়খলা যাওয়ার বাসটিও অনিয়মিত। এই সব নিয়ে এলাকাবাসীর বলার মতো কোনও জায়গা নেই।

বিজেপি নেতা কণাদ পুরকায়স্থ বলেন, ‘‘বড়খলার মানুষের সমস্যার কথা বলে লাভ নেই। বহু কাজেই মানুষের বিধায়কের প্রয়োজন। কিন্তু রুমি নাথ নিজেই তাঁর দুঃখ-দুর্দশার কথা বলার লোক পাচ্ছেন না।’’ তাঁর মতে, আসলে গত বিধানসভা ভোটের আগে দলত্যাগ করা সত্ত্বেও তাঁকে ভোট দেওয়াটা মানুষের বড় ভুল হয়েছিল। তাঁর কথায়, তবে গ্রেফতারের দরুনই খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে, এমন নয়। দ্বিতীয়বার কংগ্রেসের টিকিটে জেতার পর থেকেই তিনি নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। প্রেম, বিবাহ এবং বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনাতেই তাঁর বেশি সময় কেটেছে। বিজেপি সমর্থক নন আবুল হায়াত বড়লস্কর। তবু কণাদের সুরেই তিনি বলেন, ‘‘বড়খলাবাসীর পাঁচটা বছর একেবারে বেকার গেল। শাসকদলের বিধায়ক হয়েও রুমি নাথ এলাকার জন্য কিছুই করলেন না। বরং আগের পাঁচ বছর তিনি যখন বিজেপি-র বিধায়ক ছিলেন, তখন অনেক বেশি কাজ হয়েছে বড়খলার।’’

বিধায়কের অভাবে এলাকাবাসীর সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়ে কাছাড় জেলা কংগ্রেস সভাপতি অরুণ দত্ত মজুমদার বলেন, এই সমস্যা সামাধানে দলের পক্ষ থেকে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ৮ মে জেলা কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়। বড়খলার উন্নয়নমূলক কাজকর্ম তদারকির জন্য সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল আলম লস্করকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গড়া হয়েছে। অন্যান্য সদস্যরা হলেন: রঞ্জিত রায়, দিলীপ কর, আব্দুল ওদুদ লস্কর, রীতা দে, ইন্তাজুর রহমান লস্কর, ইফতিকার আলম লস্কর, সুরজিত কর্মকার, নাহারুল ইসলাম লস্কর ও বিকাশ দাস। রুমি নাথ জেলে থাকার দিনগুলিতে তাঁরা এলাকাবাসীর সমস্যা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করবেন। উন্নয়নমূলক কাজকর্ম যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে দিকে বিশেষ নজর রাখবেন। প্রয়োজনে সাংসদ সুস্মিতা দেব, মন্ত্রী অজিত সিংহ ও গিরীন্দ্র মল্লিকের সঙ্গে কথা বলবেন। অরুণবাবুর কথায়, ‘‘কোনও এক বিধায়কের কুকর্মে দলের ক্ষতি হতে পারে না। দল বিশাল ব্যাপার। কর্মীরা দিনরাত কাজ করছে।’’

uttam saha silchar mla jail guwahati high court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy