Advertisement
E-Paper

জাপান সফরে পরমাণু চুক্তিই নিশানা মোদীর

শেষ মুহূর্তে কোনও পরিবর্তন না হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টোকিও সফরে ভারত-জাপান অসামরিক পরমাণু চুক্তিটি সই হতে চলেছে। অগস্টে হতে পারে এই সফর। শক্তি ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে খুবই উদগ্রীব মোদী সরকার। বিশেষ করে জাপানের মতো দেশকে পাশে পেতে আগ্রহী প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সমস্যা হল পরমাণু প্রশ্নে এমনিতেই জাপান বিশ্বের সব চেয়ে স্পর্শকাতর দেশ। তায় ভারত আবার পরমাণু প্রসার-রোধ চুক্তি (এনপিটি)-তেও সই করেনি।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০২:৪৭

শেষ মুহূর্তে কোনও পরিবর্তন না হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টোকিও সফরে ভারত-জাপান অসামরিক পরমাণু চুক্তিটি সই হতে চলেছে। অগস্টে হতে পারে এই সফর।

শক্তি ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে খুবই উদগ্রীব মোদী সরকার। বিশেষ করে জাপানের মতো দেশকে পাশে পেতে আগ্রহী প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সমস্যা হল পরমাণু প্রশ্নে এমনিতেই জাপান বিশ্বের সব চেয়ে স্পর্শকাতর দেশ। তায় ভারত আবার পরমাণু প্রসার-রোধ চুক্তি (এনপিটি)-তেও সই করেনি। ফলে জাপানের সঙ্গে পরমাণু ক্ষেত্রে গাঁটছড়া বাঁধাটা যথেষ্টই কঠিন। তাই চুক্তির ক্ষেত্রে টোকিওর মূল সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখে দ্রুত তার সমাধান করতে চাইছেন মোদী।

জাপানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল ঠিক চার বছর আগে। কিন্তু ২০১১ সালের মার্চ মাসে ফুকুশিমা দাইচির পরমাণু চুল্লিতে দুর্ঘটনার কারণে গোটা প্রক্রিয়াটিই পিছিয়ে যায়। গত সেপ্টেম্বরে ফের শুরু হয় আলোচনা। কিন্তু মেয়াদের শেষ বছরে পৌঁছে মনমোহন সিংহের সরকার এ ব্যাপারে তেমন এগোতে পারেনি। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টিকে আর ফেলে না রেখে কাজের গতি বাড়াতে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন মোদী। যার ফলে এখন একযোগে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা চলছে টোকিওর সঙ্গে।

প্রথমে স্থির হয়েছিল জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই জাপান যাবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সে ক্ষেত্রে পুরো প্রস্তুতি সেরে ফেলার পক্ষে যথেষ্ট সময় থাকছে না হাতে। কারণ, মোদী চাইছেন, তাঁর সফরের আগেই যেন চুক্তিটির খসড়া চূড়ান্ত করে ফেলা যায়। তা ছাড়া, জাপানের যে অংশটি ভারতের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করার বিপক্ষে, তাদের সন্দেহের দিকগুলি দূর করে পাশে টানার মতো জটিল কিছু কাজও সারতে হচ্ছে সাউথ ব্লককে। আপাতত তাই স্থির হয়েছে, অগস্টে যেতে পারেন মোদী।

টোকিও যাতে আরও ভরসা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভারতের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করার ব্যাপারে এগোতে পারে, তার জন্য ইতিমধ্যেই একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ করেছে সাউথ ব্লক। গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র সঙ্গে একটি অতিরিক্ত প্রোটোকল সই করেছে ভারত। এই প্রোটোকলটি সই করার অর্থ, যে কোনও সময় ও যে কোনও পরিস্থিতিতে ভারতের অসামরিক পরমাণু প্রকল্পগুলি পর্যবেক্ষণ করতে পারবে আইএইএ।

নয়াদিল্লির বক্তব্য, আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি করার সময় এই অতিরিক্ত প্রোটোকল সই করার প্রয়োজন হয়নি, কারণ মার্কিন সরকারের কাছে ভারতের মৌখিক প্রতিশ্রুতি এবং পরমাণু সম্প্রসারণ বিরোধিতায় নয়াদিল্লির রেকর্ডই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু পরমাণু প্রশ্নে হিরোশিমা-নাগাসাকির দেশ এখনও আতঙ্কগ্রস্ত। ক’দিন আগে নিজের দেশেই ফুকুশিমা দাইচির দুর্ঘটনা দেখেছে তারা। এই অবস্থায় বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ভারত যে তার অসামরিক পরমাণু প্রকল্পগুলিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের সামনে তুলে ধরার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেটাই স্পষ্ট করে দেওয়া হল এই প্রোটোকল সইয়ের মাধ্যমে। শুধু জাপান নয়, অন্য অনেক দেশ থেকে পরমাণু প্রযুক্তি আমদানির বিষয়টিও এতে সহজ হয়ে গেল।

তবে জাপানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির আগে আরও জট ছাড়াতে হবে নয়াদিল্লিকে। টোকিও মূলত দু’টি বিষয় চুক্তিতে রাখতে চায়। এক, চুক্তিটিতে এমন অনুচ্ছেদ রাখতে হবে যেখানে বলা থাকবে ভারত ফের পরমাণু পরীক্ষা করলে এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি নিজে থেকেই বাতিল হয়ে যাবে। বিষয়টি কার্যত মেনে নিয়েছে ভারত। ২০০৮ সালে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরে ভারত একতরফা ভাবেই পরমাণু পরীক্ষার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আজও সেটির অন্যথা হয়নি। জাপানের দ্বিতীয় শর্ত হল, এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি প্রতিশ্রুতি হিসেবে চুক্তির খসড়ায় রাখতে হবে। সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে এখনও ভারত রাজি হয়নি। এটি উহ্য রেখেই চুক্তি সইয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে মোদী সরকার।

প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে এ বছর প্রধান অতিথি হিসেবে নয়াদিল্লি এসেছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে সে সময় পরমাণু চুক্তি নিয়ে কথা হলেও তা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি। ভারতের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে এগোনোর জন্য দেশেই চাপে পড়তে হয় জাপান সরকারকে। বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন সে দেশের পরমাণু-বিরোধীরা। তাঁদের আপত্তির মূল জায়গাটি হল, এনপিটি সই না করা দেশের সঙ্গে পরমাণু-মৈত্রী তৈরি করা চলবে না। কিন্তু এর উল্টো দিকও রয়েছে। তোশিবা, হিতাচি ও মিৎসুবিশির মতো জাপানি পরমাণু শক্তি সংস্থাগুলি ভারতের বাজারে আসতে আগ্রহী। জিই-হিতাচি, তোশিবা-ওয়াশিংটন হাউসের মতো মার্কিন-জাপ সংস্থাও চায় দিল্লি-টোকিও পরমাণু চুক্তি হোক।

একই ভাবে ভারতও শক্তিক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করতে চাইছে। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত তাকেশি ইয়াগি সম্প্রতি বলেছেন, “দু’দেশই জোরদার চেষ্টা করছে, যাতে নরেন্দ্র মোদীর সফরে চুক্তিটি চূড়ান্ত করা যায়। আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই তা করা যাবে।” পরমাণু শক্তির বিষয়টি যে জাপানের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তাকেশি। তাঁর কথায়, “আমরাই একমাত্র দেশ, যারা আক্রান্ত। ফুকুশিমার অঘটনে চুক্তির বিষয়টি আরও ধাক্কা খায়।

তবে তুরস্ক-সহ বেশ কিছু দেশের সঙ্গে আমরা অসামরিক পরমাণু চুক্তি সেরে ফেলেছি। নরেন্দ্র মোদীর সফরে দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সহযোগিতা পরবর্তী স্তরে যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।”

nuclear deal japan modi agni roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy