Advertisement
০৬ মে ২০২৪

জুলাইয়েই ছিটমহল বিনিময়, তিস্তা নিয়ে ঘরোয়া কমিটি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত কাল রাতে দিল্লি ফেরার পথে বিশেষ বিমানেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্র। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, বাংলাদেশ সফর শেষ হয়ে গিয়েছে মানেই কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে এমন নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে যে দশটি চুক্তি হয়েছে, তার কাজ আজ থেকেই শুরু করে দিতে হবে।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০৩:২৪
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত কাল রাতে দিল্লি ফেরার পথে বিশেষ বিমানেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্র। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, বাংলাদেশ সফর শেষ হয়ে গিয়েছে মানেই কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে এমন নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে যে দশটি চুক্তি হয়েছে, তার কাজ আজ থেকেই শুরু করে দিতে হবে।

সিদ্ধান্ত হয়েছে, ছিটমহল বিনিময়ের কাজ জুলাইয়ের মধ্যে রূপায়িত করতে হবে। ৩১ জুলাই ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট ডে’ হিসেবে ধরে কাজ শুরু করা হচ্ছে। ওই চুক্তির ফলে প্রায় আটশো পরিবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসবে বলে অনুমান। নভেম্বরের মধ্যে সেই পরিবারগুলির পুর্নবাসন সেরে ফেলার পাশাপাশি সীমান্তে বেড়া লাগানোর কাজ মিটিয়ে ফেলতে চাইছে ভারত। স্থল সীমান্তের পাশাপাশি তিস্তা নিয়ে জট কাটানোর লক্ষ্যে তৎপর হয়েছে দিল্লি। এর জন্য পশ্চিমবঙ্গ ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি ঘরোয়া কমিটি গঠন করা হচ্ছে। যেখানে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে অজিত ডোভাল ও নৃপেন্দ্র মিশ্র এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিরা থাকবেন। ওই কমিটিতে সিকিম সরকারের প্রতিনিধিদের রাখার বিষয়েও ভাবা হয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা গওহর রিজভির সঙ্গে ঘরোয়া স্তরে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে ভারত। উদ্দেশ্য শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগেই বিষয়টি মীমাংসা করে ফেলা।

এ দিকে সন্ত্রাস দমনে হাসিনার ভূমিকা নিয়ে মোদীর মন্তব্যকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বাংলাদেশ সফর চলাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে মোদী বলেছিলেন,‘‘আমি খুশি যে শেখ হাসিনা এক জন মহিলা হয়েও সন্ত্রাস দমনের প্রশ্নে জিরো টলারেন্সের ডাক দিয়েছেন।’’ মোদীর ওই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসই শুধু নয়, সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। অভিযোগ উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলে মহিলাদের খাটো করেছেন। আর কংগ্রেস শিবির বলছে, সন্ত্রাসের মোকাবিলার সঙ্গে এক জন মহিলার প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকার কী সম্পর্ক! কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার তির্যক মন্তব্য— মোদী যে দেশেই যান, সেখানে এক ফোঁটা চোনা ফেলে আসেন। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় মুখ খুলেছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়। তারা জানিয়েছে, আসলে মহিলাদের হয়েই বলতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এক জন নারী কত ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যান তা বোঝাতেই ওই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদীর যখন রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল, তখন মোদী বলেছিলেন, ‘‘বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে আপনার পিতা জড়িয়ে থাকলেও, দেশটাকে প্রকৃত অর্থে গড়েছেন আপনি।’’

এ দিকে ছিটমহল বিনিময়ের জন্য রাজ্যের ওপর পুনর্বাসনের যে আর্থিক বোঝা চাপবে, তা বহন করতে ইতিমধ্যেই ৩০০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করেছেন নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু রাজ্য সরকারকে এ-ও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে— ওই তহবিলের একটি অংশ সীমান্তে বেড়া দেওয়ার জন্য খরচ করতে হবে রাজ্যকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক আমলা আজ বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্তের শতচ্ছিদ্র অবস্থা। তার একটা বড় কারণ ছিল ছিটমহল। কিন্তু স্থল সীমান্ত চুক্তি সম্পাদনে দু’দেশের সীমানা সুনির্দিষ্ট হয়েছে। এখন সীমান্তে বেড়া দিয়ে অনুপ্রবেশে অনেকটাই রাশ টানা সম্ভব।

কেন্দ্রের এই প্রস্তাবে বিরোধ থাকার কথা নয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও উদ্বেগ জিইয়ে থাকছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। মন্ত্রকের এক আমলা বলেন, বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধে ঐতিহাসিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের ভূমিকা ইতিবাচক নয়। অতীতে বাম জমানায় বল্গাহীন ভাবে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। তার প্রভাবে সীমান্তবর্তী জেলাগুলির জনবসতির চরিত্রও বদলে গিয়েছে। বর্তমান সরকারেরও অনুপ্রবেশ নিয়ে সংবেদনশীলতার অভাব রয়েছে। সেই কারণেই রাজ্যকে বারবার বেড়া দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শর্ত সাপেক্ষে সায় দিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, ছিটমহল আদানপ্রদানের ফলে ভারত থেকে যত পরিবার বাংলাদেশে যাবেন, তার থেকে বেশি সংখ্যায় বাংলাদেশের দিক থেকে মানুষ ভারতে আসবেন। হিসেব মতো ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহলের সব বাসিন্দা ও ভারতীয় ছিটমহলগুলি থেকে অপশন দিয়ে আসা মানুষ মিলিয়ে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার লোক পাকাপাকি ভাবে পশ্চিমবঙ্গে আসতে পারেন। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কথায়, কেন্দ্রের হিসেবে খুব বেশি হলে ৩৫ হাজারের মতো মানুষ পাকাপাকি ভাবে ভারতে আসবেন। তাঁদের পুনর্বাসনের দায় নিচ্ছে কেন্দ্র।

প্রশ্ন হল, পুনর্বাসনের পাশাপাশি সীমান্তে বেড়া দেওয়ার বিষয়ে রাজ্যের তরফে কি সমান আগ্রহ দেখানো হবে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের কথায়— শুধু পশ্চিমবঙ্গ কেন, অসম বা ত্রিপুরা প্রশাসনেও এই ঢিলেমি রয়েছে। একমাত্র পশ্চিমবঙ্গের আগের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকার অনুপ্রবেশ বন্ধে কেন্দ্রের সঙ্গে সহমত ছিলেন। তাই এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রকে লেগে থেকেই কাজ করাতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE