—ফাইল চিত্র।
এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। গত কালই সংসদে পেশ করা হয়েছিল ‘নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল’। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের ইঙ্গিত, সংসদের চলতি বা পরবর্তী অধিবেশনেই এই সংশোধনী বিলটি অনুমোদন করানো হবে। বিলটি অনুমোদিত হলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে থেকে ভারতে আসা সে-দেশের সংখ্যালঘু (হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, পার্সি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন) মানুষরা আর ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত হবেন না। ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানাতেও আর কোন অসুবিধা থাকবে না।
কেন্দ্র আজ দাবি করেছে, এর ফলে বাংলাদেশ থেকে অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরায় আসা দেশান্তরী হিন্দুদের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়টি এক ধাপ এগিয়ে গেল। পূরণ করা হল মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপির একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। গত বছর সেপ্টেম্বরে কেন্দ্র একটি নির্দেশিকায় জানিয়েছিল, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এদেশে ঢোকা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সি, জৈনরা নাগরিকত্ব পাবেন। কিন্তু গত কালের সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে সাত বছর এ দেশে থাকলে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা সম্ভব হবে। তবে এই পর্বে তাঁদের ‘বিদেশি অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে দেগে দেওয়া যাবে না।
গত সেপ্টেম্বরে ঘোষণার পরে যে ভাবে নয়াদিল্লি টালবাহানা করছিল তাতে ক্ষোভ ছড়াচ্ছিল অসম-সহ উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে। গত ৮ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল দিল্লিতে রাজনাথ সিংহের সঙ্গে দেখা করে জানান, বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে রাজ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তিনি কেন্দ্রকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। গত কাল বিলটি পেশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানান, ‘‘বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থীরা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার পরে সরকারের বিবেচনার পরে নাগরিকত্ব পাবেন। পাসপোর্ট আইন ও বিদেশি আইনের আওতা থেকে ছাড়ও দেওয়া হল।’’ আগে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হলে অন্তত ১২ বছর ভারতে সাধারণ বসবাসকারী হিসেবে থাকতে হত। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সেই সময়কাল কমিয়ে এনে সাত বছর করা হয়েছে।
অসমে বিধানসভা অধিবেশন চলছে। হিন্দু বাঙালি শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া ও ডিটেনশন শিবির থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে বিধানসভার বিক্ষোভ দেখিয়েছে নিখিল ভারত বাঙালি উদ্বাস্তু সমণ্বয় সমিতি, সারা অসম বাঙালি ঐক্যমঞ্চ, বাঙালি ন্যাশনাল কাউন্সিল, অসম বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের মতো সংগঠনগুলি। তাঁদের সঙ্গে দেখা করে হোজাইয়ের বিজেপি বিধায়ক তথা বিজেপির ধান মুখপাত্র শিলাদিত্য দেব মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে পাঠানো স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। শিলাদিত্যবাবুর মতে, ‘‘৬৮ বছর পরে মোদী সরকার একটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ করল। বিতর্কের বদলে সংশোধনী অনুমোদনেই মঙ্গল।’’ তাঁর হিসেবে, বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের ধাক্কায় রাজ্যের ধর্মীয় জনবিন্যাসে যে বদল এসেছে এখন হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিলে তাতে ভারসাম্য আসবে। যদিও সংশোধনীর বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে আসু। তাদের অভিযোগ, ১৯৭১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছে। এখন নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বিজেপি অসম চুক্তি ভাঙার চেষ্টা করছে। একই সুর অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ বা জোট সরকারের শরিক অগপ-র মুখেও। আর বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া বলেন, ‘‘আমরা মানবিকতার খাতিরে বিলের বিরোধিতা করছি না। কিন্তু মনে রাখতে হবে ইতিমধ্যেই ভূমিক্ষয়ের কারণে পাঁচ লক্ষ হেক্টর জমি হারিয়েছে অসম। পশ্চিমবঙ্গে ল্যান্ড রি-ক্লেইম ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু অসমে হারানো জমি উদ্ধার বা তার ক্ষতিপূরণেরও কোনও ব্যবস্থা নেই। এত মানুষ থাকবে কোথায়! দেখতে হবে অসমের পরিস্থিতি যেন অগ্নিগর্ভ না হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy