Advertisement
০৪ মে ২০২৪
বিচারপতি নিয়োগ বিতর্ক

সংঘাতে অনড় থেকেও ছাড় আদালতকে

বিচারপতি নিয়োগে শেষ কথা বলার অধিকার ছাড়তে এখনও নারাজ মোদী সরকার। তবে প্রধান বিচারপতির তোপের মুখে আইন মন্ত্রক কিছুটা নরম সুর নিল।শীর্ষ আদালতের পাঁচ প্রবীণ বিচারপতিকে নিয়ে তৈরি কলেজিয়ামের দাবি মেনে আইন মন্ত্রক জানিয়েছে, আইনজ্ঞ বা আইনজীবীদের মধ্যে থেকে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও ঊর্ধ্বসীমা থাকবে না।

নরেন্দ্র মোদী-টি এস ঠাকুর

নরেন্দ্র মোদী-টি এস ঠাকুর

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪৯
Share: Save:

বিচারপতি নিয়োগে শেষ কথা বলার অধিকার ছাড়তে এখনও নারাজ মোদী সরকার। তবে প্রধান বিচারপতির তোপের মুখে আইন মন্ত্রক কিছুটা নরম সুর নিল।

শীর্ষ আদালতের পাঁচ প্রবীণ বিচারপতিকে নিয়ে তৈরি কলেজিয়ামের দাবি মেনে আইন মন্ত্রক জানিয়েছে, আইনজ্ঞ বা আইনজীবীদের মধ্যে থেকে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনও ঊর্ধ্বসীমা থাকবে না। আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে আইনজীবীদের থেকে সর্বাধিক তিন জনকে নিয়োগ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কলেজিয়াম দাবি জানায়, এই ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া হোক। তা মেনে নিয়েছে আইন মন্ত্রক।

সুপ্রিম কোর্ট মোদী সরকারের বিচারপতি নিয়োগ কমিশন আইন খারিজ করে দিয়ে পুরনো কলেজিয়াম ব্যবস্থাই বহাল রেখেছে। তবে সেখানে সরকারের ভূমিকার গুরুত্ব বাড়াতে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া তৈরিরও নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার খসড়া নিয়েই এখন কেন্দ্রের সঙ্গে শীর্ষ আদালতের টানাপড়েন চলছে। এর মধ্যে বিচারপতি নিয়োগ পুরোপুরি বন্ধ করে রাখার জন্য মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুর।

আইন মন্ত্রক সূত্রের খবর, আইনজীবীদের মধ্যে থেকে বিচারপতি নিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়ার পাশাপাশি শীর্ষ আদালতের আর একটি দাবিও মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। তা হল, প্রথমে সরকার বলেছিল, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা— বিচারপতি নিয়োগে এই দু’টিই মাপকাঠি হবে। অর্থাৎ, কে বেশি প্রবীণ, তার পাশাপাশি তাঁর যোগ্যতাও বিচার্য হবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের দাবি ছিল, অভিজ্ঞতাই হবে প্রধান মাপকাঠি। তা-ও মেনে নিয়েছে কেন্দ্র।

কিন্তু শেষ কথা বলার অধিকার এখনও নিজের হাতে রাখতে অনড় মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, শীর্ষ আদালত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিচার করে কারও নাম সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতেই পারে। কিন্তু ওই নামটির ক্ষেত্রে নেতিবাচক গোয়েন্দা রিপোর্ট আসার সম্ভাবনাও থাকে। রাজ্যের রিপোর্টও নেতিবাচক হতে পারে। কাজেই জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রের হাতেই নিয়োগের চূড়ান্ত ক্ষমতা থাকা উচিত। বিচারপতি মহলের যুক্তি, কেন্দ্রের মতকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্র এখন চূড়ান্ত মত দেওয়ার ক্ষমতা চাইছে। আইন মন্ত্রক সূত্রের পাল্টা যুক্তি, কলেজিয়াম ব্যবস্থায় যে কোনও স্বচ্ছতা নেই, তা-ও বিচারবিভাগের ভাবা উচিত।

এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্ন উঠেছে, বিচারপতিদের নিয়োগের বিষয়টি তথ্যের অধিকারের আওতায় আসবে কি না। আজ এই বিষয়টি বিচারের জন্য পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চের যুক্তি, এর মধ্যে আইনের বড় প্রশ্ন জড়িত। কাজেই সাংবিধানিক বেঞ্চেই এর ফয়সালা হওয়া দরকার। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের মত হল, সুপ্রিম কোর্টও তথ্যের অধিকার আইনের আওতার মধ্যে পড়ে। কিন্তু গত মার্চে কেন্দ্রীয় সরকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি তথ্যের অধিকারের আওতায় আসবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Chief justice T S Thakur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE