Advertisement
০৪ মে ২০২৪

আমিষ-গন্ধ নাকি ওষুধেও! বর্জনে মরিয়া কেন্দ্র

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অব ইন্ডিয়ার দফতরের খবর অনুযায়ী ভারতে তৈরি ক্যাপসুলগুলির ৯৮ শতাংশের খোলই জিলেটিনের। যা তৈরি হয় বিভিন্ন প্রাণীর হাড় এবং অন্যান্য দেহাবশেষ থেকে। তাই সেগুলিকে ফেলা হচ্ছে ‘আমিষ’-এর তালিকায়।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৩
Share: Save:

যা ব্যাধি ও ক্ষত নিরাময় করে, তা-ই তো ওষুধ। সেই ওষুধের আবার আমিষ কী? নিরামিষই বা কী?!

উত্তর দিতে গোপাল ভাঁড়ও হয়তো টাক চুলকোতেন। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কিন্তু এই প্রশ্নের তোয়াক্কা না-করে কয়েকটি ওষুধে আমিষ আর কিছু ওষুধে নিরামিষের তকমা সাঁটতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ধরনের ক্যাপসুলের ক্ষেত্রে আমিষ-নিরামিষ ভেদাভেদ গড়ে ‘আমিষ’ ওষুধ তৈরি বন্ধের প্রস্তাব দিয়েছে তারা।

আরও পড়ুন: কাশ্মীরে দীনেশ্বর, কথায় না যেতে পাক উস্কানি

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং ড্রাগ কন্ট্রোল জেনারেল অব ইন্ডিয়ার দফতরের খবর অনুযায়ী ভারতে তৈরি ক্যাপসুলগুলির ৯৮ শতাংশের খোলই জিলেটিনের। যা তৈরি হয় বিভিন্ন প্রাণীর হাড় এবং অন্যান্য দেহাবশেষ থেকে। তাই সেগুলিকে ফেলা হচ্ছে ‘আমিষ’-এর তালিকায়। জিলেটিনের খোলের বদলে সেলুলোজের তৈরি খোল ব্যবহারের প্রস্তাব দিচ্ছে কেন্দ্র।

বিজেপি সরকারের যুক্তি, সেলুলোজের তৈরি খোল পুরোপুরি নিরামিষ। ক্যাপসুলে সেলুলোজের খোল ব্যবহারের ব্যাপারে তারা ওষুধ সংস্থাগুলির মতামত চেয়েছে। ফার্মাকোলজির বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সি কে কোকাতে-র নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়েছে, যারা এ ব্যাপারে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা করে রিপোর্ট দেবে সরকারকে।

প্রশ্ন উঠছে: ওষুধের ক্ষেত্রে এই আমিষ-নিরামিষ ভেদাভেদ কেন? শুধু যে ক্যাপসুলের খোলাতেই প্রাণীর দেহাবশেষ ব্যবহৃত হয়, তা তো নয়। বিভিন্ন প্রাণীর চর্বি, রক্ত, বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ, এমনকী বিষ থেকে ওষুধ বা সিরামও তৈরি হয়। সেগুলোর তা হলে কী হবে? ‘আমিষ’ তকমা দিয়ে কি তাদের ব্রাত্য করে দেওয়া হবে? চিকিৎসাবিজ্ঞানকে কি ধাক্কা মেরে পিছিয়ে দেওয়া হবে অতীতের অজ্ঞতার অন্ধকারে?

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের পাল্টা প্রশ্ন, আমেরিকার মতো দেশেও ওষুধে আমিষ-নিরামিষ ভাগ রয়েছে। ক্যাপসুলের ক্ষেত্রে জিলেটিন ও সেলুলোজ দু’ধরনেরই খোল ব্যবহার করা হয়। তা হলে এখানে নিরামিষ ওষুধ চালু করতে বাধা কোথায়?

এই নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই কেন্দ্রের প্রস্তাবে মাথায় হাত পড়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির। কারণ, ওই প্রস্তাব মানতে গেলে তাদের কারখানার পরিকাঠামো আমূল বদলাতে হবে। এতে খরচ বাড়বে। ফলে ওষুধের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে বলে মনে করছে ওষুধ প্রস্তুতকারকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান ড্রাগ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএমএ)।

কেউ কেউ বলছেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। ওষুধের আমিষ-নিরামিষ ভেদাভেদ নিয়ে বিতর্ক তুলে অশান্তির রাজনীতি করার লোক এ দেশে যথেষ্টই রয়েছে। তাতে প্রভাবিত হওয়ার লোকও কিছু কম নেই।

ভারতীয় ওষুধ সংস্থাগুলির প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের প্রধান সচিব নৃপেন্দ্র মিশ্রের সঙ্গে দেখা করেছেন। ‘‘আমরা জানিয়ে এসেছি যে, জিলেটিন ক্যাপসুল সব দিক দিয়ে নিরাপদ,’’ বলেন আইডিএমএ-র সভাপতি দীপনাথ রায়চৌধুরী। ওষুধ ব্যবসায়ীরা চান, দু’রকম ক্যাপসুলই থাকুক।

প্রশ্ন ও বিতর্কের মধ্যে না-ঢুকে দেশের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল জ্ঞানেন্দ্র সিংহ জানাচ্ছেন, শুধু সেলুলোজ ক্যাপসুল চালু করার একটা প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র। কতটা কী করা যায়, বিশেষজ্ঞ কমিটি তা দেখবে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই।

বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান সি কে কোকাতে বলেন, ‘‘আমরা রিপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। তাই বেশি কিছু বলা যাবে না।’’ আর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব রাকেশকুমার বৎস জানান, প্রস্তাবটি নিয়ে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা চলছে। এখনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian medicine Modi government Medicine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE