Advertisement
E-Paper

মোদীর মানা জলে, মন্ত্রীরা বেফাঁসই

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলের নেতা-মন্ত্রীরা যেন বেঁফাস মন্তব্য না করেন। তাঁর মন্ত্রীরাই তা শোনেন না! গত কালই সাংসদীয় দলের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী সতর্ক করে দিয়েছিলেন, বিজেপি সাংসদরা যেন সংসদে উস্কানিমূলক বা আলটপকা কোনও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। বিরোধীরা তাতালেও তাঁদের প্ররোচনার ফাঁদে যেন পা না দেন কেউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৭

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলের নেতা-মন্ত্রীরা যেন বেঁফাস মন্তব্য না করেন। তাঁর মন্ত্রীরাই তা শোনেন না!

গত কালই সাংসদীয় দলের বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী সতর্ক করে দিয়েছিলেন, বিজেপি সাংসদরা যেন সংসদে উস্কানিমূলক বা আলটপকা কোনও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। বিরোধীরা তাতালেও তাঁদের প্ররোচনার ফাঁদে যেন পা না দেন কেউ। কিন্তু কে কার কথা শোনে! উল্টে কেন্দ্রীয় কয়লা ও বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের বেঁফাস মন্তব্যের জেরে আজ প্রায় গোটা দিন অচল রইল রাজ্যসভা। লোকসভাতেও কংগ্রেস আজ তুমুল হট্টগোল বাধাল, বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহের এক টুইটের জেরে। এমনকী, মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে যিনি পরিচিত, সেই অরুণ জেটলির এক বিবৃতিও আজ কম ইন্ধন জোগাল না হট্টগোলে! আর এই ডামাডোলের মধ্যে দৃশ্যতই বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী এ দিন লোকসভা থেকে বেরিয়ে যান।

রাজ্যসভায় সংবিধান দিবস সংক্রান্ত বিতর্কে অংশ নিয়ে কংগ্রেসের দলিত নেত্রী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কুমারী শৈলজা গত সোমবার গুজরাতে ‘মোদী মডেল’ নিয়ে পরোক্ষে টিপ্পনি করেছিলেন। শৈলজা বলেছিলেন, বছরখানেক আগে তিনি গুজরাতের এক
মন্দিরে ঢোকার সময় বৈষম্যের
শিকার হন। সেখানে তাঁর জাত জানতে চাওয়া হয়েছিল। শৈলজার সেই অভিযোগ খণ্ডন করতেই আজ দ্বারকা মন্দিরের রেজিস্টারের একটি ফটোকপি রাজ্যসভায় পড়ে শোনান সভার নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জেটলি। বলেন, রেজিস্টারে কুমারী শৈলজা ভাল ভাল কথাই লিখেছিলেন। নেতিবাচক কোনও মন্তব্যই করেননি।

জেটলি রীতিমতো আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে আঙুল উঁচিয়ে কার্যত প্রমাণ করতে চান, শৈলজা সংসদে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। তখনই আপত্তি জানান দলিত নেত্রী। বলেন, ‘‘এই ধরনের উদ্ধত আচরণ করবেন না। সভার নেতাকে তা শোভা পায় না।’’ শৈলজা দাবি করেন, তিনি দ্বারকা পীঠের কথা বলেননি। বলেছেন, ভেট দ্বারকার কথা। সেখানে ফোন করলেই জেটলি জানতে পারবেন, ওখানে প্রবেশের সময় জাত জানতে চাওয়া হয় কি না। জেটলির বিবৃতি
বা শৈলজার দাবি, কোনটি ঠিক তা খতিয়ে দেখাটা শক্ত কিছু নয়। স্রেফ খানিকটা সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু সে সবের ধার ধারেননি সরকার বা বিরোধী পক্ষের সদস্যরা। চাপানউতোর শুরু হয়ে যায়। এরই মধ্যে জেটলির পিছনে বসে থাকা পীযূষ গয়াল টিপ্পনি কাটেন, ‘‘বানানো বৈষম্যের কথা বলে সাজানো সমস্যা খাড়া করতে চাইছেন উনি!’’

ব্যস আর যায় কোথায়! গোটা বিরোধী বেঞ্চ পীযূষের বিরুদ্ধে রে রে করে ওঠেন। দাবি করেন, মন্ত্রী গয়ালকে সভায় ক্ষমা চাইতে হবে। নইলে সভা চলবে না। মন্ত্রী ক্ষমা চাননি। ফলে হট্টগোল চলতেই থাকে। দফায় দফায় মুলতবি হয়ে যায় রাজ্যসভা।

লোকসভায় আজ হট্টগোলের নেপথ্যে ছিলেন মোদীর আর এক মন্ত্রী। বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় শপথ নেওয়ার পর থেকে বিতর্ক যাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী। হরিয়ানার দলিত শিশু হত্যার ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে ভি কে সিংহ বলেছিলেন, ‘‘কুকুরকে কেউ ঢিল ছুড়লে, তার দায়ও কি সরকারের!’’ এর পর থেকেই ভি কে সিংহকে মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর
দাবি করছেন বিরোধীরা। তাঁকে মন্ত্রিসভায় রেখে দেওয়া নিয়ে রাহুল গাঁধী কাল লোকসভায় মোদীর
তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রের এক জন মন্ত্রী যিনি সাংসদ হিসেবে, মন্ত্রী হিসেবে এমনকী এক সময় সেনাপ্রধান হিসবে সংবিধানের শপথ নিয়েছেন, তিনি যখন দলিত শিশু হত্যার ঘটনাকে কুকুরকে ঢিল ছোড়ার সঙ্গে তুলনা করেন, সরাসরি সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করেন, তখন প্রধানমন্ত্রী চোখ বুঁজে থাকেন। তাঁকে বহাল তবিয়তে মন্ত্রিসভায় রেখে দেন।’’ এরই পাল্টা হিসেবে ভি কে সিংহ আজ সকালে টুইট করে বলেন, ‘‘দেশের প্রতি আমার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে রাহুল গাঁধীকে কোনও কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই। বিভাজনের রাজনীতিতে আমি হাওয়া দিয়েছি বলে রাহুল অভিযোগ করছেন। কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন, সেনাবাহিনীতে থেকে গত ৪২ বছর ধরে দেশের এই আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য আমি কাজ করেছি।’’

ভি কে সিংহ আগেও তাঁর ওই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তবে অনুতাপ প্রকাশ করেননি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও কাল
তাঁর পক্ষেই সওয়াল করেছেন। তার উপরে আজ আবার বিদেশ প্রতিমন্ত্রী পাল্টা ফোঁস করাতেই কংগ্রেস
চটে যায়। তাই লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ভি কে-র বিরুদ্ধে
ক্ষোভ উগড়ে দেন কংগ্রেস সদস্যরা। তাঁরা ওয়েলে নেমে পড়ে স্লোগান তোলেন। এমনকী, পরে ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা এমন হুমকিও দেন, বিজেপির এখনও হুঁশ ফেরেনি। সংসদের মধ্যে সরকারের এই আচরণ বহাল থাকলে জি এস টি-র ভবিষ্যৎ নিয়েও কিন্তু ফের সংশয় তৈরি হতে পারে। এটা যেন তাঁরা ভুলে না যান!

narendra modi derogatory remarks ministers turn down
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy