Advertisement
০১ মে ২০২৪
বিদায় জল্পনায় আরও জট

যোগ দিবসের পরে সিদ্ধান্ত নেবেন মোদী

বসুন্ধরা রাজে থাকবেন, না যাবেন! ললিত মোদী বিতর্কে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে গত ক’দিন ধরে মুখে কুলুপ এঁটেই ছিল বিজেপি। আজ যিনি মুখ খুললেন, সেই সুধাংশু ত্রিবেদী তেমন বড় দরের কোনও নেতা নন। কিন্তু তিনি যা বললেন, তাতে বসুন্ধরার ভবিষ্যৎ ঘিরে ধোঁয়াশা বাড়ল বই কমল না।

পাশাপাশি-ই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। শুক্রবার রাষ্ট্রপতি ভবনে তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট জাকায়া কিকওয়েতের আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা সভায়। ছবি: পিটিআই।

পাশাপাশি-ই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। শুক্রবার রাষ্ট্রপতি ভবনে তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট জাকায়া কিকওয়েতের আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা সভায়। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০৩:২৬
Share: Save:

বসুন্ধরা রাজে থাকবেন, না যাবেন!

ললিত মোদী বিতর্কে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে গত ক’দিন ধরে মুখে কুলুপ এঁটেই ছিল বিজেপি। আজ যিনি মুখ খুললেন, সেই সুধাংশু ত্রিবেদী তেমন বড় দরের কোনও নেতা নন। কিন্তু তিনি যা বললেন, তাতে বসুন্ধরার ভবিষ্যৎ ঘিরে ধোঁয়াশা বাড়ল বই কমল না।

কী বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের রাজনৈতিক উপদেষ্টা তথা বিজেপি মুখপাত্র ত্রিবেদী? বসুন্ধরার ইস্তফার কোনও সম্ভাবনা নেই এ কথা সরাসরি জোর দিয়ে বলেননি তিনি। শুধু বলেছেন, ‘‘তাঁর ইস্তফার যে দাবি উঠছে, সেটি কাল্পনিক।’’ ত্রিবেদীর দাবি, বসুন্ধরা দলকে বলেছেন, তাঁর স্বাক্ষর করা এমন কোনও নথি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে নেই, যেখানে তিনি ললিত মোদীর অভিবাসন আর্জির পক্ষে সওয়াল করেছেন। বিজেপি সূত্র বলছে, বসুন্ধরার কথা বিশ্বাস করে আপাতত সামান্য হলেও তাঁর পাশে দাঁড়াল দল। ভবিষ্যতে যদি দেখা যায় যে তেমন কোনও নথি প্রকাশ্যে এসেছে, তা হলে বসুন্ধরার সরে যাওয়া ছাড়া পথ থাকবে না।

কিন্তু এই তত্ত্ব মানতে নারাজ বিজেপিরই অন্য একটি অংশ। তাঁদের মতে, দল মোটেই বসুন্ধরার পাশে দাঁড়ায়নি। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে তাঁর বিদায় নিশ্চিত। বিদায় নিশ্চিত বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজেরও।

তাই যদি হবে, তা হলে এখনই কেন বিদায় করা হচ্ছে না দুই অভিযুক্ত নেত্রীকে? কেন কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের প্রতিদিন নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে আক্রমণ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে? তার উপর কেনই বা ত্রিবেদী আজ এমন একটা সাংবাদিক বৈঠক করলেন!

ধোঁয়াশা বিস্তর!

বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, এর কারণ বিশ্ব যোগ দিবস। আগামী রবিবার এই দিবস পালনই এখন মোদী সরকারের ধ্যানজ্ঞান। তার আগে রাজনীতিতে কোনও বড় মাপের টালমাটাল চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী। এমনিতেই ললিত বিতর্ক, যোগ দিবসের উপর থেকে খানিকটা হলেও প্রচারের আলো কেড়ে নিয়েছে। তার পরে যদি সুষমা, বসুন্ধরার বিদায় ঘটে, তা হলে দেশি-বিদেশি সব সংবাদমাধ্যমের যাবতীয় নজর চলে যাবে সেই দিকে। মাঠে মারা যাবে যোগ দিবস ঘিরে যাবতীয় উদ্যোগ-আয়োজন।

বিজেপির ওই সূত্র বলছে, সেই কারণেই সুষমা নিজে থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তাঁকে আপাতত চুপ থাকতে বলেছেন মোদী। সুষমাকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা হবে রবিবারের পরে।

সেই সিদ্ধান্ত যে সুষমা-বসুন্ধরার অপসারণই হবে, এমনটা অবশ্য জোর দিয়ে বলতে নারাজ বিজেপির অন্য একটি অংশ। এটা ঠিক যে, আরএসএস অনেক দিন ধরেই বসুন্ধরাকে সরাতে চাইছে। কিন্তু তাঁকে সরালে তিনটি সমস্যা মাথা চাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এক, বসুন্ধরা সে ক্ষেত্রে তাঁর সমর্থকদের নিয়ে বিদ্রোহী হবেন। দুই, নীতির প্রশ্নে বসুন্ধরাকে সরালে বিরোধীরা রক্তের স্বাদ পেয়ে যাবে। বিশেষ করে কংগ্রেস আজ যে ভাবে অন্য বিরোধী দলগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সংসদের বাদল অধিবেশন একেবারে ভন্ডুল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে, তারই আড়ালে রয়েছে মোদী সরকারের তৃতীয় বিপদ। আগামী দিনে সংসদ অচল হয়ে থাকলে সংস্কারের বিলগুলি আরও থমকে যাবে। সন্দেহ নেই, সেটা আরও বড় চাপের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে মোদীর সামনে।

তাই যদি হয়, তা হলে সুষমা ও বসুন্ধরার অপসারণ সম্ভব নয় বলেই মনে হয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে এই দুই নেত্রী সম্পর্কে দু’রকম অবস্থান কেন নিচ্ছে দল? সুষমার হয়ে একের পর এক আসরে নেমেছেন দলের হেভিওয়েট নেতারা। রবিশঙ্কর প্রসাদ থেকে শুরু করে অরুণ জেটলি। কিন্তু বসুন্ধরার ক্ষেত্রে এগিয়ে দেওয়া হল ত্রিবেদীর মতো সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তুলনায় অপরিচিত নেতাকে। তা-ও এত দিন পরে। এবং খুব জোরের সঙ্গে ইস্তফার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন না তিনি! তা হলে কি সরকারের বাধ্যবাধকতার সঙ্গে দলের চাহিদার কোনও বিরোধ হচ্ছে?

সেটাও আবার মানতে নারাজ বিজেপি নেতারা। তাঁদের মতে, বিজেপিতে নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহ আলাদা নয়। পশ্চিমবঙ্গে প্রমোদ দাশগুপ্ত ও জ্যোতি বসু অনেক সময় পৃথক পথে হাঁটতেন। বিজেপিতে বিষয়টা তেমন নয়। এখানে মোদীই সব। তাঁর অঙ্গুলিহেলনেই সরকার ও দল— দুই-ই চলছে। ললিত বিতর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আবার অমিত শাহের সঙ্গে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতেরও আলোচনা হয়েছে। আরএসএস নেতারাও যোগাযোগ রাখছেন। আজ বসুন্ধরার ‘পাশে দাঁড়ানোর’ সিদ্ধান্তের পিছনে মোদীরও সম্মতি রয়েছে। কারণ, বসুন্ধরা নিজে দাবি করেছেন, তেমন কোনও নথিতে তিনি স্বাক্ষর করেননি। তিন দিন ধরে সেটিই নাকি সুনিশ্চিত করেছেন বসুন্ধরা। আজ তাঁর ছেলে দুষ্মন্তের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলিও খণ্ডন করা হয় রাজস্থানে এক সাংবাদিক বৈঠকে।

সেখানে বলা হয়, কোনও অনৈতিক কাজই করা হয়নি। ফলে যা নিয়ে বসুন্ধরার দিকে আঙুল উঠেছে, আপাতত সেই নথি প্রকাশ্যে আসা না পর্যন্ত তাঁকে স্বস্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যাবতীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

বিজেপির এক শীর্ষ সূত্রের মতে, বসুন্ধরা শুধু নয়, সুষমা স্বরাজেরও ইস্তফা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন নাগপুরের আরএসএস-এর শীর্ষ নেতারা। এখনই যদি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সুষমা ও বসুন্ধরাকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়, তাতে মোদীর রাজনৈতিক কর্তৃত্বের যে অবক্ষয় শুরু হয়েছে সেটা রোধ করা সম্ভব হবে।

কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের এই ভয় আছে যে, ব্যবস্থা নিলে একে তো দুর্নীতির অভিযোগ স্বীকার করে নেওয়া হবে। তার পর বিরোধীদের অভিযোগের আঙুল উঠবে মোদীর দিকেও। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, বফর্স কেলেঙ্কারির সময় তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সোলাঙ্কিকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অরুণ সিংহকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে বিরোধী আক্রমণ থামেনি। শেষ পর্যন্ত ওই বফর্স প্রসঙ্গই কোণঠাসা করেছিল রাজীব গাঁধীকে।

সুতরাং, বসুন্ধরা-সুষমার ভাগ্যে কী আছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। স্পষ্ট শুধু একটা জিনিসই। যোগ দিবসের আগে কিছু বিয়োগ হচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE