Advertisement
E-Paper

জঙ্গিদমন ও বাণিজ্য, মায়ানমারকে বার্তা মোদীর

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম চাকুরিস্থল ‘রেঙ্গুন’ থেকে বর্মা মুলুকের আজকের রাজধানীর দিকে যাওয়ার পথে শুধুই কালো মেঘ আর বেদম বর্ষা। পৌঁছে দেখা যাচ্ছে নেপিদও-এর আকাশও ভারী এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন। কি নাটকীয় বৈপরীত্য! কারণ এই আসন্ন শরতে ভারত-মায়ানমার সম্পর্কে কিন্তু যথেষ্ট রোদ খেলছে। নয়াদিল্লিতে নতুন সরকার আসার তিন মাসের মধ্যে প্রায় নিঃশব্দেই নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রশ্নে অনেকটা এগিয়েছে দু’দেশ।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২২

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম চাকুরিস্থল ‘রেঙ্গুন’ থেকে বর্মা মুলুকের আজকের রাজধানীর দিকে যাওয়ার পথে শুধুই কালো মেঘ আর বেদম বর্ষা। পৌঁছে দেখা যাচ্ছে নেপিদও-এর আকাশও ভারী এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন।

কি নাটকীয় বৈপরীত্য! কারণ এই আসন্ন শরতে ভারত-মায়ানমার সম্পর্কে কিন্তু যথেষ্ট রোদ খেলছে। নয়াদিল্লিতে নতুন সরকার আসার তিন মাসের মধ্যে প্রায় নিঃশব্দেই নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রশ্নে অনেকটা এগিয়েছে দু’দেশ। মায়ানমারের সঙ্গে পণ্য ও পরিষেবা ক্ষেত্রে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পৌঁছে যাওয়া যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লক্ষ্য, পাশাপাশি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তকে জঙ্গিমুক্ত করাটাও সাউথ ব্লকের অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে। দু’সপ্তাহ আগে নেপিদও-এ এসে সেই বার্তাই দিয়ে গিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।

সামগ্রিক সম্পর্কের লাভ ক্ষতি বিচার করে মোদীর অনুরোধে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে মায়ানমার। সে দেশের তথ্যমন্ত্রী আঙ্গ কাই এক সাক্ষাৎকারে আনন্দবাজারকে জানালেন, “দু’দেশের সীমান্ত নিয়ে ভারত আর মায়ানমারের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ, মণিপুর আর নাগাল্যান্ডের সীমানাবর্তী ঘন জঙ্গলে ঢাকা, দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় নাগা জঙ্গিরা পুনরায় আত্মগোপন করে রয়েছে বলে নির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। মণিপুরের তামু এলাকা ও মায়ানমারের কালে অঞ্চলে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে তারা।” এনএসসিএন(আইএম)-ই যে মাথাব্যথার মূল কারণ, সে কথা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী জানাচ্ছেন, তেরোটি নাগা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাঁদের শান্তি চুক্তি হয়েছে। কিন্তু এলাকা পুরোপুরি জঙ্গিমুক্ত হয়নি। পরিস্থিতির মোকাবিলায় ভারতের সঙ্গে মিলে গঠিত হয়েছে সীমান্ত এলাকা কমিটি। কোনও বিচ্ছিন্ন অপারেশন নয়, জঙ্গি সমস্যা সামলাতে মায়ানমার নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে বলেই দাবি করছেন তিনি। তবে এ কাজ যে কতটা কঠিন, তা নিয়েও ব্যাখ্যা দিচ্ছে সে দেশের সরকার। তাদের মতে, সীমান্ত অঞ্চল এতটাই দুর্গম যে কোনও একটি পাহাড় থেকে পাশের পাহাড়ে পৌঁছতেই কয়েক দিন লেগে যায়। পাকা রাস্তা নেই, এলাকাটাও বর্ষাপ্রবণ। হেলিকপ্টারে অপারেশন করারও সুবিধা নেই। তথ্যমন্ত্রীর কথায়, “ভারত সরকারকে জানিয়েছি, সমস্যাকে শেষ করতে সেনা অপারেশনের পাশাপাশি এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নও প্রয়োজন।”

সব মিলিয়ে সীমান্তে যে বড় রকমের অর্থ ব্যয় করতে শুরু করেছে থেইন শেইন সরকার, সে কথা স্পষ্ট। তথ্যমন্ত্রীর দাবি, “সক্রিয় এবং ইতিবাচক প্রতিবেশী নীতি” গ্রহণ করছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, ইউপিএ জমানায় সীমান্ত সহযোগিতা নিয়ে চুক্তিপত্রে সই করেছিল দু’দেশ। যার মাধ্যমে দু’পারের নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদানে একটি কাঠামো তৈরি হয়। কিন্তু তার পর বিষয়টি পিছনের সারিতে চলে যায়। এখানকার ভারতীয় দূতাবাসের কর্তারা জানাচ্ছেন, সেই কাঠামোর পূর্ণাঙ্গ রূপায়ণের কাজ দু’তরফেই শুরু হয়ে গিয়েছে। সুষমা স্বরাজও কিছু দিন আগে এ দেশে এসে এখানকার বিদেশমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, জঙ্গি সংগঠনগুলি শুধুমাত্র ভারতেরই নয়, মায়ানমারের পক্ষেও বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কড়া হাতে এদের মোকাবিলা করা দরকার।

প্রশ্ন উঠতে পারে, সম্পর্কে এই নতুন ঢেউ খেলার কারণ কী? আসলে মনমোহন জমানায় মায়ানমারের অভিযোগ ছিল, কালাদান মাল্টিমোডাল প্রকল্প (যার ফলে কলকাতা এবং মায়ানমারের সিতুই বন্দরের জলপথে যোগাযোগ তৈরি হবে, বাড়বে বাণিজ্য)-সহ বিভিন্ন প্রস্তাবিত কাজ শেষ করতে ঢিলেমি করছে নয়াদিল্লি। ঘটনা হল, মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী হয়ে ‘পূবে তাকাও’ নীতি চালু করলেও তাকে সে ভাবে কাজে লাগাতে পারেনি ভারত। তাই এখনও পর্যন্ত নয়াদিল্লি থেকে প্রতিবেশী মায়ানমারের রাজধানীতে পৌঁছতে সরাসরি একটিও উড়ান নেই। আসতে সময় লাগে আঠারো ঘন্টা! ভারতীয় কূটনীতিবিদদের বক্তব্য, এই অবস্থাকে একেবারে বদলে দিতে চাইছেন মোদী। আসিয়ান গোষ্ঠীভূক্ত দেশগুলির মধ্যে শুধু মায়ানমারের সঙ্গেই ভারত সীমান্ত ভাগাভাগি করে। এই মুহূর্তে ভারত এবং আসিয়ানের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৭২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালের মধ্যে তাকে ১০০ বিলিয়নে নিয়ে যেতে চায় মোদী সরকার।

আর নয়াদিল্লি ভাল করেই জানে, তা করতে হলে, মায়ানমারকে দিতে হবে বিরাট গুরুত্ব। কেননা, এ দেশ ভারতের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সিংহদরজা বিশেষ।

নেপিদও-এ এখন গমগম করে চলছে আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির বাণিজ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন। যোগ দিয়েছে ভারতের প্রতিনিধিরাও। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মায়ানমার না যাওয়ায় সে দেশের সঙ্গে ভারতের পণ্য এবং পরিষেবা ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হয় নি। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রকের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, নির্মলা এখন সকলের জন্য ব্যাঙ্ক-অ্যাকাউন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর জন ধন যোজনার রূপায়ণের কাজে ব্যস্ত। সেজন্যই তিনি মায়ানমারে আসতে পারেননি। তবে ভারত এই চুক্তি থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে না।

আর সন্ত্রাসহীন সীমান্ত দু’দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও প্রসারিত করতে পারবে বলেই মনে করেছেন ভারত এবং মায়ানমারের শীর্ষ নেতৃত্ব।

agni roy narendra modi mayanmar national news online news latest news online national news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy