Advertisement
২৫ মার্চ ২০২৩

পাহাড়ে সেনাবাহিনীর ভরসা চারপেয়েরা

জম্মু-কাশ্মীর থেকে অরুণাচল—হিমালয় ঘেরা রাজ্যগুলির পাহাড়ে-পাহাড়ে বহাল জওয়ানদের ‘বন্ধু’ ওরা। সেনাবাহিনীর অবিচ্ছেদ্য ‘অঙ্গ’ও। খচ্চর আর পাহাড়ি কুকুরের দল! গোলা-বারুদ, খাদ্যসামগ্রী পিঠে নিয়ে চড়াই-উৎরাই রাস্তায় মাইলের পর মাইল হেঁটে খচ্চররা পৌঁছায় দুর্গম সামরিক ছাউনিতে। পোশাকি ভাষায় ওদের নাম ‘অ্যানিমাল ট্রান্সপোর্ট ইউনিট’---সংক্ষেপে এটিইউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৯
Share: Save:

জম্মু-কাশ্মীর থেকে অরুণাচল—হিমালয় ঘেরা রাজ্যগুলির পাহাড়ে-পাহাড়ে বহাল জওয়ানদের ‘বন্ধু’ ওরা। সেনাবাহিনীর অবিচ্ছেদ্য ‘অঙ্গ’ও।

Advertisement

খচ্চর আর পাহাড়ি কুকুরের দল!

গোলা-বারুদ, খাদ্যসামগ্রী পিঠে নিয়ে চড়াই-উৎরাই রাস্তায় মাইলের পর মাইল হেঁটে খচ্চররা পৌঁছায় দুর্গম সামরিক ছাউনিতে। পোশাকি ভাষায় ওদের নাম ‘অ্যানিমাল ট্রান্সপোর্ট ইউনিট’---সংক্ষেপে এটিইউ। সীমান্তের প্রত্যন্ত এলাকার ‘বাঙ্কার’-এ মোতায়েন জওয়ানদের কাছে বেঁচে থাকার রসদ পৌঁছায় ওরা। পাশাপাশি, সেনা-বাঙ্কারের ‘আশ্রয়ে’ থাকা পাহাড়ি কিছু কুকুর সন্দেহজনক কিছু দেখলেই সজাগ করে সকলকে।

সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইংরেজ আমলে ‘রয়্যাল ইন্ডিয়ান আর্মি’র সময় থেকেই সামরিক বাহিনীতে বহাল এটিইউ-রা। জম্মু-কাশ্মীর বা উত্তরপূর্ব ভারতের পাহাড়ে সামরিক ছাউনিগুলিতে রয়েছে কয়েক হাজার খচ্চর। তাদের জন্য আলাদা নিয়োগ প্রক্রিয়া চালায় সেনাবাহিনী। দেওয়া হয় প্রশিক্ষণও।

Advertisement

এটিইউ-গুলিকে কী ভাবে বেছে নেওয়া হয়? জম্মু-কাশ্মীরের এক সেনাকর্তা জানিয়েছেন, ওজন এবং উচ্চতার ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে ভাগ করা হয় ওদের। ‘শক্তপোক্ত’ খচ্চরগুলিকে নেওয়া হয় আর্টিলারি বিভাগে। অস্ত্রশস্ত্র বহনের ‘দায়িত্ব’ পায় ওরা। নাম হয় ‘অ্যানিমাল রেজিমেন্ট’। সাধারণ কাজে বহাল হওয়া (জেনারেল সার্ভিস) বাকিদের বলা হয় ‘অ্যানিমাল স্কোয়াড্রন’। ওই সেনা অফিসারের কথায়, “মানুষ বা যন্ত্র যেখানে সহজে পৌঁছাতে পারে না, সেখানে অবলীলায় যেতে পারে প্রশিক্ষিত খচ্চরের দল।” সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গমতার ভিত্তিতে পাহাড়ি রাস্তার কয়েকটি ভাগ রয়েছে। ‘রোড হেড’---পাহাড়ে যে দুরত্ব পর্যন্ত সাধারণভাবে পরিবহণ ব্যবস্থা থাকে। এর পর ‘জিপ হেড’, অর্থাৎ শুধুমাত্র জিপের মতো গাড়ির উপযুক্ত রাস্তা। তার পর থেকে এটিইউ-দের ‘রাজত্ব’। সেনার এক মুখপাত্র বলেন, “পাহাড়ে সাড়ে ৮ হাজার ফুটের উপরে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটাই কমে যায়। কারও পক্ষে সেখানে হাঁটাও কষ্টের। এটিইউ-রা অনায়াসে সে সব এলাকায় চলতে সক্ষম। দুর্গম পাহাড়ি পথে বিশ্রাম ছাড়াই ৭২ কিলোগ্রাম ওজন নিয়ে প্রায় ২৬ কিলোমিটার যেতে পারে ওরা।” তবে, মাঝেমধ্যে খাবার দিতে হয় ওদের। তা-ই ওই খচ্চরগুলির পিঠের বোঝায় ছোলা, চিনির মিশ্রণও রাখা থাকে।

এটিইউ-দের নিয়ে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার লাগোয়া বাঙ্কারগুলিতে নিয়মিত যাতায়াত সেনাকর্মী শেখ ডালিমের (নাম পরিবর্তিত)। তিনি বলেন, “ওরা রাস্তায় অযথা সময় নষ্ট করে না। নির্দিষ্ট একটি রুটে মাসছয়েক নিয়ে গেলে, তারপর থেকে ওরা নিজেরাই সে রাস্তায় যাতায়াত করতে পারে।” সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ন্ত্রণরেখায় কখনও ‘প্রতিকূল’ পরিস্থিতি থাকলে (দু’পক্ষে গুলির লড়াই চললে) মানুষের সাহায্য ছাড়াই প্রত্যন্ত শিবিরে খাবার, গোলাবারুদ পৌঁছে দেয় এটিইউ ‘বাহিনী’।

অসমের তেজপুরে বহাল এক সেনাকর্তা বলেন, “এটিইউ-দের পাহাড়ের দুর্গম এলাকার কোনও শিবিরের দিকে রওনা করানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বেতার-মাধ্যমে ওদের সেখানে পৌঁছে যাওয়ার খবর মেলে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বা ধসে রাস্তা বন্ধ হলে এটিইউ-রা ফিরে আসে যাত্রা শুরুর জায়গাতেই।” তিনি আরও জানান, শীতে হিমালয়ের বহু এলাকায় রাস্তা বরফে বন্ধ হয়ে যায়। যাতায়াত কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। গ্রীস্মকালেই সেখানকার বাঙ্কারগুলিতে খাবার, শীত-পোষাক, নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্য জিনিস মজুতের কাজ শুরু হয়। প্রতিদিন ভোরে সেনাবাহিনীর ‘বেসক্যাম্প’গুলি থেকে এটিইউ-রা রওনা দেয় পাহাড়ের প্রত্যন্ত কোণে জওয়ানদের ‘আশ্রয়’গুলির দিকে। শীতের রসদ নিয়ে।

পাক-অধিকৃত কাশ্মীর লাগোয়া এ দেশের সেনা চৌকিগুলির ‘পাহারাদার’ থাকে পাহাড়ি কিছু কুকুরও। রাতের অন্ধকারে জওয়ানদের ‘পোষাক’ ছাড়া অন্য কিছু দেখলেই চিৎকারে চৌকির সকলকে সতর্ক করে ওরা। জওয়ানরা জানান, জনবিরল ওই এলাকায় স্থানীয় কিছু কুকুর খাদ্য-আশ্রয়ের জন্য সেনা-চৌকিতে চলে যায়। সেখানেই থাকতে শুরু করে তারা। আশপাশের গ্রামের মানুষের সঙ্গে সেগুলির ‘সখ্যতা’ থাকে না। ‘বন্ধুত্ব’ নেই গ্রামের অন্য কুকুরদের সঙ্গেও। সেনার নজর এড়িয়ে কেউ চৌকির কাছাকাছি যাতে পৌঁছতে না-পারে সে জন্য কিছুটা তালিমও দেওয়া হয় কুকুরগুলিকে। ‘শেরু’, ‘পুরী’র মতো ডাকনামের ‘বন্ধু’দের নজরদারিতে তা-ই অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকেন জওয়ানরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.