Advertisement
০৬ মে ২০২৪
National news

ছেলের সঙ্গে বিরোধ নেই, ভিলেন অন্য! ভাইয়ের দিকেই আঙুল মুলায়মের

সাইকেলের দাবি নিয়েই আজ দুপুরেই ভাই শিবপাল এবং অমর সিংহকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করলেন মুলায়ম সিংহ যাদব। দলের প্রতীক ‘সাইকেল’ যে তাঁরই তা নিশ্চিত করতে যাবতীয় তথ্য এবং দস্তাবেজ নির্বাচন কমিশনে দিয়ে এলেন তিনি।

মাঠ ছাড়িনি। শিবপাল যাদব ও অমর সিংহকে সঙ্গে নিয়ে ঘোষণা মুলায়ম সিংহ যাদবের। রবিবার নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে। ছবি: পিটিআই

মাঠ ছাড়িনি। শিবপাল যাদব ও অমর সিংহকে সঙ্গে নিয়ে ঘোষণা মুলায়ম সিংহ যাদবের। রবিবার নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩২
Share: Save:

সাইকেলের দাবি নিয়েই আজ দুপুরেই ভাই শিবপাল এবং অমর সিংহকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করলেন মুলায়ম সিংহ যাদব। দলের প্রতীক ‘সাইকেল’ যে তাঁরই তা নিশ্চিত করতে যাবতীয় তথ্য এবং দস্তাবেজ নির্বাচন কমিশনে দিয়ে এলেন তিনি। তাঁর তথ্য অনুযায়ী ২৫ বছর ধরে এই প্রতীকের দাবিদার শুধু তিনিই। এ দিনই ছিল নির্বাচন কমিশনের কাছে যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ দেওয়ার শেষ তারিখ। অখিলেশ-শিবির আগেই সাইকেলের প্রতি অধিকার কায়েম করতে যাবতীয় তথ্য দিয়ে এসেছেন। এ দিন মুলায়মের নির্বাচন কমিশন থেকে বেরনোর পর নরেশ অগ্রবালকে নিয়ে আরও একবার কমিশনে যান রামগোপাল যাদব।

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে টানা এক ঘণ্টার বৈঠক করেন মুলায়ম। বাইরে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ছেলের সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই। পার্টিতে এমন একজন ব্যক্তি রয়েছেন, যার জন্যই এই সমস্যাগুলো হচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের সমস্যা মিটিয়ে নেব।’’ বাবা-ছেলের এই ভাঙনের পিছনে নাম না করে আদতে মুলায়ম অখিলেশ-ঘনিষ্ঠ রামগোপালকেই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবারও নির্বাচন কমিশনের কাছে যাওয়ার জন্যই দিল্লি এসেছিলেন মুলায়ম। কিন্তু কমিশনে না গিয়ে সে দিন সন্ধেতেই লখনউ উড়ে যান মুলায়ম ও শিবপাল। মিটমাট করার আশায় শুক্রবার দফায়-দফায় বৈঠক করেন কাকা শিবপাল-ভাইপো অখিলেশ। কিন্তু সমাধানসূত্র যে বেরিয়ে আসেনি, মুলায়মের ঘোষণাতেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। নির্বাচন কমিশনে দলের প্রতীক নিয়ে দাবি জানানোর আগের দিন ছেলেকে জবরদস্ত ধাক্কা দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, জমি ছাড়ছেন না তিনি।

গত দু’দিন ধরে ভাঙনে প্রলেপ লাগানোর চেষ্টা চলছিল জোর কদমে। রাজ্যের নির্বাচন পর্যন্ত সংগঠনের উপরে নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে রাজি না থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বাবাকে দলের সভাপতির পদ ফিরিয়ে দিতে আপত্তি নেই তাঁর। যদিও ভোটের আগে নয়। পাছে অমর সিংহ, শিবপাল সিংহ যাদব ও সৎমা সাধনা ফের তাঁর পথে কাঁটা ছড়ানোর সুযোগ পেয়ে যান। আজও তাঁর শিবির থেকে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু মুলায়ম সিংহ যাদব স্পষ্ট বলে দিলেন, যে যাই ঘোষণা করুক, তিনিই দলের নেতাজি ও সুপ্রিমো। রামগোপাল যাদবের যে বৈঠকে অখিলেশকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছিল তা ছিল অবৈধ। কারণ, রামগোপালকে আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরই সঙ্গে মুলায়মের ঘোষণা, ‘‘শিবপাল এখনও দলের উত্তরপ্রদেশ শাখার সভাপতি।’’

পিছনে অমর ও পাশে ভাই শিবপালকে বসিয়ে মুলায়মের এই ঘোষণায় একটি বিষয় স্পষ্ট, সমাজবাদী শিবিরে ক্ষত চওড়াই হচ্ছে আরও। সেই ক্ষতে এ বার নুনের ছিটে দেওয়ার কাজটি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ অমর সিংহকে ফের ‘জেড’ স্তরের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা এ দিন ঘোষণা করেছে তারা। গত বছর সেটা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল। দলে দ্বন্দ্বের এই পর্বে অখিলেশ গোড়া থেকেই দাবি করে আসছেন, অমর বিজেপির দালাল। তিনি নাকি অমিত শাহের নির্দেশেই দলে ও পরিবারে ভাঙন ধরাচ্ছেন। বিজেপি সরকার তাঁর নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়ার পরে অখিলেশ শিবির ফের বলছে, এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে অমর বিজেপির হয়ে কাজ করছেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে অবশ্য দাবি, ‘সাম্প্রতিক’ কিছু কারণে অমরের ঝুঁকি ফের বেড়েছে। তাই এই সিদ্ধান্ত।

দলের সভাপতি তিনিই— মুলায়মের এই ঘোষণার সময়টিও বিশেষ অর্থবহ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

অখিলেশ শিবির মোটামুটি নিশ্চিত ছিল, মুলায়ম শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসবেন। কিন্তু আচমকা প্রত্যাঘাতে মুলায়ম বদলে দিয়েছেন সব সমীকরণ। এই পরিস্থিতিতে আজ মুলায়ম-শিবপালেরা নির্বাচন কমিশনে নিজেদের দাবি পেশ করেছেন। এ বার উভয় পক্ষের বক্তব্য বিচার করেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবে কমিশন। যদিও তারা আগেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে যে, সময় কম থাকায় এ ক্ষেত্রে বাজেয়াপ্তও হতে পারে ‘সাইকেল’। এমনকী, ‘সমাজবাদী পার্টি’ নাম ব্যবহারেও জারি হতে পারে নিষেধাজ্ঞা। যার ফায়দা নেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছে বিজেপি ও মায়াবতীর বিএসপি। অখিলেশ শিবির কিন্তু এ দিনও জানিয়েছে, ভোটের আগে টিকিট বণ্টন থেকে দলীয় তহবিলের রাশ কোনও ভাবেই ছাড়তে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী। আর রামগোপালদের বক্তব্য, দলের দু’শোর বেশি বিধায়কের সমর্থন যখন অখিলেশের পক্ষে, তখন তিনি কেন শিবপাল-অমরদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন? নেতাজির হাতে ক্ষমতা গেলে শিবপাল-অমরদের কারণেই দল গো-হারা হারবে। এই পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারে ভাঙন রুখতে অখিলেশ গতকাল সকালেও অমরকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে সন্ধি প্রস্তাব দেন। অখিলেশ শিবিরের দাবি, মুলায়ম প্রথমে রাজি থাকলেও সৎমা সাধনা ও কাকা শিবপালের মন্ত্রণায় ফের ডিগবাজি খেয়েছেন। অবশ্য দলটির নাম সমাজবাদী পার্টি। শেষ মুহূর্তে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে, আঁচ করা অসম্ভব।

আপাতত মুলায়মের সমর্থনে বলীয়ান অমর রাতে ফের আক্রমণ শানিয়েছেন অখিলেশকে। বলেছেন, ‘‘আর কী চায় অখিলেশ! বাবা তো তাঁর জন্য সব কিছু করেছেন। এমনকী শিবপালও নির্বাচন লড়ছেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mulayam Singh Yadav Samajwadi Party
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE