দাম্পত্যে বিচ্ছেদ শুধু যে নারীর পক্ষে যন্ত্রণা তা নয়। বিচ্ছেদ পুরুষের পক্ষেও সমান ক্লেশের। ফলে বিচ্ছেদে শুধু নারীরই ক্ষতি আর পুরুষের লাভ, এমন বলছি না মোটেই। বলছি ব্যবস্থাটায় নিহিত চরম বৈষম্য আর নারীর চূড়ান্ত অবমাননার কথা।
পুরুষ তালাকের পর তালাক দিতে পারেন, ইচ্ছা হলেই এক নারী ছেড়ে অন্য নারীতে মন দিতে পারেন। নারী নিজের ইচ্ছায় ছাড়তেও পারেন না, ধরে রাখতেও পারেন না। এই তিন-তালাকি বন্দোবস্তে যদি নারীরও সমান অধিকার থাকত, চাইলে পুরুষকে ত্যাগ করার অধিকার যদি তাঁকেও দেওয়া হতো, বলার কিছু ছিল না। কিন্তু এ অধিকারে পুরুষের একাধিপত্য।
আসলে ধর্মের সঙ্গে কিন্তু এই ভারসাম্যহীনতার কোনও সম্পর্ক নেই। এর শিকড় সামাজিক আবর্জনার স্তূপের গভীরে। এর উত্স পুরুষতান্ত্রিকতার রাজধানীতে।
শঙ্কা ছিল, আপত্তি ছিল, বিরোধ ছিল। কিন্তু ওই ভয়ঙ্কর শব্দটার বিরুদ্ধে কোনও দ্রোহ সম্ভব হয়নি। বিষধর শব্দটার দাঁত-নখ ভাঙার জন্য কেউ রুখে দাঁড়াননি কখনও। এত দিনে একটা প্রতিরোধ শুরু হল।
মুসলিম মহিলাদের সংগঠন তিন-তালাকি বিচ্ছেদের বিরুদ্ধে সই সংগ্রহ শুরু করেছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হাজারে হাজারে সই করছেন ভারতীয় মুসলিমরা। সই করছেন সংখ্যালঘু গৃহস্থালীর হাজার হাজার কর্ত্রীও। যত জন মুসলিম নারীর কাছে সই চেয়েছেন আন্দোলনের সংগঠকরা, তাঁদের ৯২ শতাংশই সাগ্রহে সমর্থন জানিয়েছেন এই প্রথার অবলুপ্তির দাবিকে।
বদলের হাওয়া বইতে শুরু করেছে ভারতীয় জন-বৃন্তের দ্বিতীয় কুসুমে। অন্তর থেকে উৎসারিত এই বদলের হাওয়া। আগেও এই প্রথার বিলোপের প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু সে সবের অধিকাংশই বাইরে থেকে এসেছে। সংখ্যালঘুর অন্দরমহলে খুব একটা দানা বাঁধেনি সে সব দাবি-দাওয়া। এ বার অন্দরমহলেই ওলট-পালট হাওয়া। এই হাওয়াটাই রুপোলি রেখা এঁকে দিয়েছে আকাশের গায়ে।
এ রেখা উজ্জ্বল হয়ে উঠুক হীরকদ্যুতির মতো।