সেনা প্রধান, বায়ুসেনা প্রধান, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো-র প্রধান এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’-এর প্রধান— বছরের শেষ দিনে চারটি পদই একসঙ্গে ফাঁকা হচ্ছে। কিন্তু একটি ক্ষেত্রেও উত্তরসূরির নাম ঘোষণা হয়নি। নোট বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যদের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জানতে দেননি নরেন্দ্র মোদী। এই সব গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ব্যাপারেও তাঁরা এখনও কিছু জানেন না।
সরকারের যাবতীয় পদে কোথায়, কাকে বসানো হবে, সেই সিদ্ধান্ত কার্যত মোদী নিজেই নেন। কারণ মন্ত্রিসভার নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটিতে তিনি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ছাড়া আর কাউকে রাখা হয়নি। ৩১ ডিসেম্বর বর্তমান সেনা প্রধান জেনারেল দলবীর সিংহ, এয়ার চিফ মার্শাল অরূপ রাহা একই সঙ্গে অবসর নিচ্ছেন। ওই দিনই মেয়াদ ফুরোচ্ছে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ডিরেক্টর দীনেশ্বর শর্মা এবং র’-এর প্রধান রাজিন্দর খন্নারও। প্রথা অনুযায়ী, সেনা বা বায়ুসেনা প্রধানের অবসরের অন্তত দু’মাস আগেই উত্তরসূরির নাম ঘোষণা হয়ে যায়। আইবি, র’-এর ক্ষেত্রেও এই প্রথা মানা হয়। যাতে তাঁরা কাজ বুঝে নিতে পারেন। এ বার তা হয়নি। সরকারের কোনও কোনও সূত্র বলছে, ১৬ ডিসেম্বর সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে পরবর্তী প্রধানদের নাম ঘোষণা হতে পারে।
কিন্তু পাকিস্তানের সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখায় পরিস্থিতি যখন যথেষ্ট উত্তপ্ত, সে সময় এই ধরনের স্পর্শকাতর পদে নিয়োগ নিয়ে এত টালবাহানা কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অন্দরমহল থেকে। সূত্রের খবর, বর্তমান আইবি-প্রধান দীনেশ্বর শর্মার মেয়াদ বাড়াতে চেয়েছিল মোদী সরকার। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল যখন আইবি-প্রধান ছিলেন, সে সময় তাঁর সঙ্গে কাজ করেছিলেন দীনেশ্বর। এখন তিনি নিজেই আর বাড়তি মেয়াদ থাকতে চাইছেন না। বিরোধীরা বলছেন, এ থেকেই মোদীর আমলে প্রশাসনের অন্দরের অবস্থাটা বোঝা যায়।
গত সপ্তাহে সিবিআইয়ের অতিরিক্ত অধিকর্তা রাকেশ আস্থানাকে অস্থায়ী ভাবে সংস্থার প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়েছে মোদী সরকার। এ ক্ষেত্রেও অনিল সিনহার অবসরের আগে তাঁর উত্তরসূরির নাম ঠিক হয়নি। উল্টে অনিলের অবসরের ঠিক আগে, সংস্থার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি স্পেশ্যাল ডিরেক্টর রূপককুমার দত্তকে বদলি করে দেওয়া হয়। আইবি-তেও তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে সংস্থার কেউ কেউ মনে করছেন। তাঁদের দাবি, দীনেশ্বর না থাকলে তাঁর জায়গায় মুম্বইয়ের পুলিশ কমিশনার দত্তাত্রেয় পাদসাল্গিকরের নাম ভাবা হচ্ছে। তার জন্য আইবি-র স্পেশ্যাল ডিরেক্টর রাজীব জৈনকে বদলি করে দেওয়া হতে পারে। কারণ তিনি দত্তাত্রেয়র তুলনায় সিনিয়র। অথবা আর এক স্পেশ্যাল ডিরেক্টর এস কে সিনহাকেও ডিরেক্টর পদে তুলে আনা হতে পারে।
সেনা বা বায়ুসেনার ক্ষেত্রে কী হবে, তা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল দলবীর সিংহ অবসর নিলে লেফটেনান্ট জেনারেল প্রবীণ বক্সী বাহিনীর প্রবীণতম অফিসার। এখন তিনি ফোর্ট উইলিয়ামে ইস্টার্ন কম্যান্ডের প্রধান হিসেবে কর্মরত। বায়ুসেনায় অরূপ রাহার পরে উপপ্রধান এয়ার মার্শাল বি এস ধানোয়া প্রবীণতম অফিসার হিসেবে শীর্ষ পদের দাবিদার। কিন্তু মোদী সরকার যে রকম শেষবেলায় নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, তা দেখে অনেকেই মনে করছেন, প্রবীণতম অফিসারদের বদলে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিয়ে মোদী এ ক্ষেত্রেও চমক দিতে চাইবেন। যেমন, সেনাপ্রধানের পদে বর্তমান উপপ্রধান লেফটেনান্ট জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে বসানো হতে পারে। বায়ুসেনার শীর্ষ পদে ওয়েস্টার্ন এয়ার কম্যান্ডের প্রধান এস বি দেও-কে দেখা যেতে পারে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, প্রবীণতম অফিসারকেই যে শীর্ষ পদে বসাতে হবে, এমন কোনও লিখিত নিয়ম নেই। প্রধানমন্ত্রী যাঁকে উপযুক্ত মনে করবেন, তাঁকেই দায়িত্ব দিতে পারেন। কিন্তু সীমান্তের পরিস্থিতি যখন স্পর্শকাতর, তখন সামরিক বা গোয়েন্দা বাহিনীতে শীর্ষ পদ নিয়ে টালবাহানার জেরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাতে ধাক্কা লাগতে পারে, এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy