Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৩

ভোটে ভরসা ভোলেবাবা! রাহুল-মোদী দু’জনেরই

নেপাল ছুঁয়ে কৈলাসে শিবের ঘরে চললেন রাহুল গাঁধী। আর সেই নেপালেই পশুপতিনাথ মন্দিরে শিবের আরাধনায় নরেন্দ্র মোদী।

করমর্দন: নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার কাঠমান্ডুর পশুপতিনাথ মন্দির চত্বরে। ছবি: পিটিআই।

করমর্দন: নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার কাঠমান্ডুর পশুপতিনাথ মন্দির চত্বরে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৬
Share: Save:

দোটানায় ভোলেবাবা।

নেপাল ছুঁয়ে কৈলাসে শিবের ঘরে চললেন রাহুল গাঁধী। আর সেই নেপালেই পশুপতিনাথ মন্দিরে শিবের আরাধনায় নরেন্দ্র মোদী।

ভোটের আগে দুই নেতাই শিবের শরণে। ভোলেবাবা কাকে পার করাবেন?

এ সমস্যা কৃষ্ণেরও হয়েছিল। সামনের লোকসভা ভোটও কৌরব-পাণ্ডবের লড়াই আখ্যা দিয়েছেন খোদ রাহুল গাঁধী। মহাভারতে আছে— কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় অর্জুন আর দুর্যোধন, দুই প্রতিপক্ষই কৃষ্ণের দ্বারস্থ হন। অর্জুন বসেন কৃষ্ণের পায়ের কাছে, দুর্যোধন মাথার কাছে। ঘুম থেকে উঠে অর্জুনকেই প্রথম দেখেন কৃষ্ণ।

ভক্তের প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে বর দেওয়ার অভ্যেস শিবের অবশ্য বহুদিনের। তার ফলে দেবতাদেরও বিপদে পড়তে হয়েছে। স্বয়ং রাবণ কৈলাস পর্বতে তপস্যা করে তাঁর বর পেয়ে বলীয়ান হয়েছিলেন। আবার নারদের কুমন্ত্রণায় সেই পর্বত উপড়ে ফেলে ছাতির জোর দেখাতে গিয়ে শিবের অভিশাপও কুড়োতে হয়েছিল তাঁকে। এ কালের নেতারা সে সব কাহিনি মনে রাখলে ভাল করবেন।

শিবভক্তির লড়াইয়ে অনেক আগে থেকেই নিজেকে এগিয়ে রেখেছেন নরেন্দ্র মোদী। তাই তিনি কেদারনাথের কপাট খুললে প্রথম দর্শনার্থী হতে চলে যান, ফের যাবেন অক্টোবরে। নেপালের পশুপতিনাথ মন্দিরে গিয়ে মঞ্জিরা বাজান।

কিন্তু গুজরাতের ভোট থেকে মন্দির-মন্দির যাত্রা শুরু করে নিজের রাজ্যে মোদীকে প্রায় কুপোকাত করে ফেলেছিলেন রাহুল। ফের ভোটের মরসুম আসতে হিন্দুধর্মের পথে নিজের পদচিহ্ন রাখতে চাইছেন কংগ্রেস সভাপতি। সদ্য ক’দিন আগেই সংসদে মোদীকে বলেছেন, ‘‘আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি আমাকে ধর্ম শিখিয়েছেন, শিবভক্তির মানে বুঝিয়েছেন, হিন্দু হওয়ার মানে শিখিয়েছেন।’’ মোদীও পাল্টা দিয়েছেন, ‘‘আজকাল শিবভক্তির অনেক কথা হচ্ছে। আমিও শিবের প্রার্থনা করি।’’

আরও পড়ুন: ২০ সেকেন্ড দেরি হলেই ভাঙত রাহুলের বিমান

আজ সকালেই কৈলাসের পথে রওনা দেন রাহুল। সনিয়া গাঁধীও সে সময় ছিলেন তাঁর বাড়িতে। কংগ্রেস বলছে, ‘‘বিমান বিভ্রাটে বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে ফিরেছেন রাহুল গাঁধী। তার পর শিবের ডাক এসেছে বলেই কৈলাসের সব থেকে দুর্গম পথ নিচ্ছেন তিনি। একবার শিব উদ্ধার করা শুরু করলে কারও ক্ষমতা নেই তাঁকে রোখার।’’ আর বিজেপির কটাক্ষ, ‘‘রাহুল তো পরিযায়ী হিন্দু। নরেন্দ্র মোদীর মজ্জায় হিন্দুত্ব। শিব তাঁর বড় ভক্তকেই আশীর্বাদ দেন।’’

শিব অবশ্য অনেক সময় পক্ষ নেন না, হাসেন। এক বার ব্রহ্মা আর বিষ্ণুর মধ্যে প্রবল তর্ক, কে বড়? তর্কের মাঝেই পৃথিবীতে উঠল স্বয়ম্ভূ শিবলিঙ্গ। মাথা প্রায় আকাশ ছাপিয়ে গিয়েছে, তলদেশ খুঁজে পাওয়া যায় না। ব্রহ্মা ও বিষ্ণু স্থির করলেন, যে আগে এই লিঙ্গদর্শন করতে পারবে, সে বড়। এক জন ঢুঁ মারলেন পাতালে, অন্য জন আকাশে। কোথাও অন্ত মিলল না। যুযুধান দেবতারা হাতজোড় করে বললেন, ‘বুঝেছি প্রভু, আমরা কেউ নই। আপনিই সকলের বড়।’

রাহুল গাঁধী না নরেন্দ্র মোদী, ভোট বৈতরনি পার হতে শিবের আশীর্বাদ পাবেন কে— এ সব প্রশ্ন তাই ভোটের হাওয়ায় ভাসবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE