জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের ডাকা আফগানিস্তান সংক্রান্ত আটদেশীয় বৈঠকের পরে প্রকাশ্যেই সন্তোষ প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লি ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হওয়ার পরে রাতে সাউথ ব্লক সূত্র বলেছে, যা আশা করা হয়েছিল, এই বৈঠক তাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীর কথায়, “আফগানিস্তানের সন্ত্রাস পরিস্থিতি, সবাইকে নিয়ে সে দেশে সরকার গঠন, আফগানিস্তানবাসীর জন্য সহায়তা পাঠানোর মতো বিষয়গুলি নিয়ে আটটি দেশ দ্রুতই একমত হয়েছে। আর সেই কারণেই চটপট দিল্লি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে।”
কিন্তু কূটনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন, এই বৈঠকটি করে বাস্তবের মাটিতে কতটুকু এগোনো সম্ভব হল? প্রথমত, ডোভালের বৈঠকের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই ইসলামাবাদ এই একই বিষয়ে বৈঠক করল আমেরিকা, চিন এবং রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়ে। ডাকা হল না ভারতকে। বার্তা স্পষ্ট, আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনীতি এবং পুনর্গঠনের প্রশ্নে ইসলামাবাদ এখনও শেষ কথা। তারা আফগানিস্তানের সরাসরি প্রতিবেশী। তাদের টপকে আফগানিস্তানে বাণিজ্য, সংযোগ, ত্রাণ— কৌশলগত কোনও রকম প্রভাবই সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র নিজেই স্বীকার করেছেন, সাহায্য পাঠানোর জন্য কোনও রকম দরজা খুলছে না কাবুল। কবে খুলবে, সে ব্যাপারেও সাউথ ব্লক অনিশ্চিত।
তৃতীয়ত, তালিবান প্রশ্নে ভারত সবচেয়ে বেশি যে দেশের উপরে নির্ভর করছে, সেই রাশিয়াও সামান্য বেসুরে বেজেছে। বুধবার রাতেই ডোভালের ডাকা বৈঠকের পরে মস্কো একটি নিজস্ব বিবৃতি দিয়েছে, যার স্বর দিল্লি ঘোষণাপত্রের তুলনায় অনেকটাই হালকা। দিল্লি ঘোষণাপত্রে যে ভাবে আফগানিস্তানের মাটিতে জন্ম নেওয়া সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রবল ডঙ্কা বাজানো হয়েছিল, তা অনুপস্থিত রাশিয়ান বিবৃতিতে। ভারতের সভাপতিত্বে তৈরি হওয়া ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান যেন সন্ত্রাসবাদীদের ‘নিরাপদ স্বর্গরাজ্য’ না হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার বিবৃতিতে সন্ত্রাসবাদের নিন্দা থাকলেও এই গুরুত্বপূর্ণ শব্দ দু’টি নেই। ‘মৌলবাদ’, ‘চরমপন্থা’, ‘মাদক চোরাচালানে’-এর বিরুদ্ধে কোনও ‘সম্মিলিত সমন্বয়ের’ কথাও বলেনি রাশিয়া, যা কি না রয়েছে দিল্লির বিবৃতিতে। পাশাপাশি আফগানিস্তানের মহিলা, শিশু এবং সংখ্যালঘুদের অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে দিল্লি ঘোষণাপত্রে। সে ব্যাপারেও নীরব মস্কো।