বিজেপি এবং কংগ্রেস— এই দুই প্রধান সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে ভবিষ্যতে একটি জাতীয় ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের প্রাথমিক চেষ্টা শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের পরে এই ফ্রন্ট তৈরির তৎপরতা বাড়তে পারে।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল— দুজনেই আলাদা আলাদা ভাবে এই প্রতিবেদককে একান্ত কথোপকথনে জানিয়েছেন, দিদিকে সামনে রেখেই তাঁরা আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে একটি বোঝাপড়ার কাজ শুরু করেছেন। নীতীশ কুমার বলেন, পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের আগে কে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হবেন, সেটি এখন বিচার্য বিষয় নয়। কিন্তু মোদী সরকারের ভ্রান্ত নীতির বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে জাতীয় মঞ্চে আওয়াজ তোলার জন্য আপাতত একটি সমন্বয় গড়ে তোলা প্রয়োজন।
একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন— প্রধানমন্ত্রী হতে চাই না, কিন্তু বন্ধুদের একত্রিত করার কাজে সক্রিয় হতে চাই। আগামিকাল ২৫ জুলাই সন্ধ্যায় মমতা দিল্লি পৌঁছচ্ছেন। এই দিন রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের এক নৈশভোজে উপস্থিত থাকছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাষ্ট্রপতি মমতার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, সেই নৈশভোজে তিনি থাকতে পারবেন কি না। মমতা জানিয়েছেন, পৌঁছতে পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে, নৈশভোজে বোধহয় থাকতে পারবেন না।
রাষ্ট্রপতির নৈশভোজে প্রধানমন্ত্রীর মুখোমুখি না হলেও রাজ্যের উন্নয়নের বিষয়গুলি নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করবেন মমতা। এ ছাড়া মমতা সংসদ ভবনে গেলে অরুণ জেটলি, বেঙ্কাইয়া নায়ডু, অনন্ত কুমার, পীযূষ গয়াল প্রমুখ নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
মমতা এ বারের দিল্লি সফরে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে একটি পৃথক বৈঠক করবেন। মমতার দ্বিতীয়বারের শপথ গ্রহণের সময় কলকাতায় গিয়েছিলেন নীতীশ। এ বারও মমতার সঙ্গে দেখা করতে তিনি এতটাই ইচ্ছুক ছিলেন যে এ মাসের শেষে কলকাতায় আসতে চেয়েছিলেন। মমতার আয়োজিত রাজ্য সরকারের কোনও অনুষ্ঠানেও তিনি হাজির থাকতে রাজি। মমতা তাঁকে জানিয়েছেন, ২৬ থেকে ২৮ জুলাই তিনি দিল্লিতে থাকছেন। আর নীতীশ দিল্লি পৌঁছচ্ছেন ২৬ তারিখ। কাজেই ২৬ বা ২৭ তারিখ অনায়াসে বৈঠক হতে পারে। নীতীশ নিজেই মমতার বাসভবনে এসে দেখা করতে রাজি। মমতা নীতীশকে জানিয়েছেন, তিনিও বিহার নিবাসে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। ২৬ তারিখেই এই বৈঠকের সম্ভাবনা বেশি।
শুধু নীতীশ নন, লালু প্রসাদ, অরবিন্দ কেজরীবাল, মুলায়ম সিংহ যাদব এবং ডিএমকে-এডিএমকের সাংসদদের সঙ্গেও মমতা দেখা করবেন। এমনকী শরদ পওয়ারের সঙ্গেও মমতার দেখা করার পরিকল্পনা আছে। এর আগে পওয়ারের বাসভবনে গিয়ে মমতা একবার বৈঠক করেছিলেন। সে বার ঠিক হয়েছিল, মাঝে মাঝেই দিল্লিতে সমমনোভাবাপন্ন নেতারা একত্রিত হয়ে ঘরোয়া ভাবে চা-চক্রে মিলিত হবেন। সে-ও হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু দিন। মমতার ইচ্ছে, এই ‘টি পার্টি’ আবার পুনরুজ্জীবিত করা।
মোদী বিরোধী মঞ্চে সিপিএমকে বাদ দিয়ে মমতা সবাইকেই আহ্বান জানাতে চান। এমনকী, সরাসরি ফেডারেল ফ্রন্টের কাঠামোয় না হলেও কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে কথা বলতেও তাঁর কোনও বাধা নেই। জাতীয় স্তরে বেশ কিছু কংগ্রেস নেতা এখনও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
মমতার এই উদ্যোগ জাতীয় রাজনীতির নানা বিষয়ে দেখা যাচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি নেতার কুরুচিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে মায়াবতীয় পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। গুজরাতে দলিত-নির্যাতনের প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে। আসলে মমতা বুঝতে পারছেন, সর্বভারতীয় রঙ্গমঞ্চে দু’বছরের মধ্যেই বিজেপি বেশ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। এর পাশাপাশি আছে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন। সম্প্রতি দিল্লি এসে আন্তঃরাজ্য মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনে রাজ্যের স্বাধিকারের প্রশ্নে সরব হয়েছেন মমতা। এ বারও মোদীর সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ মনোভাবের বিরুদ্ধে সওয়াল করবেন তিনি। কেন্দ্র-রাজ্য যুক্তরাষ্ট্রীয় বিবাদে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করছেন তিনি। কেজরীবালের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন। কেজরীবাল তাঁর হয়ে পঞ্জাবে নির্বাচনী প্রচারে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। আপাতত মমতার লক্ষ্য, অবিজেপি আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ককে গভীর করে তোলা। অর্থাৎ, ফেডারেল ফ্রন্ট এখনও ভবিষ্যতের ব্যাপার হলেও ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’-এর পথনির্দেশিকা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy