Advertisement
E-Paper

রাজ্যপাল পদ তুলে দিন, দাবি নীতীশদের

উত্তরাখণ্ড-অরুণাচলে কেন্দ্র মুখ পোড়ানোর পরে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ তোলার জমি তৈরিই ছিল। আরও এক ধাপ এগিয়ে আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠকে আজ মুখ্যমন্ত্রীরা দাবি তুললেন— রাজ্যপালের পদটাই এ বার তুলে দেওয়া হোক।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৬ ০৩:২১

উত্তরাখণ্ড-অরুণাচলে কেন্দ্র মুখ পোড়ানোর পরে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ তোলার জমি তৈরিই ছিল। আরও এক ধাপ এগিয়ে আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠকে আজ মুখ্যমন্ত্রীরা দাবি তুললেন— রাজ্যপালের পদটাই এ বার তুলে দেওয়া হোক। কারণ— তাঁদের মতে, রাজ্যপালদের কাজে লাগিয়ে রাজ্যে রাজ্যে বিরোধী দলের নির্বাচিত সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।

নীতীশ কুমার বলছেন— একান্তই যদি পদটি তুলে দেওয়া না যায়, রাজ্যপাল বাছাইয়ের সময় মুখ্যমন্ত্রীর মতামত নেওয়া হোক। অরবিন্দ কেজরীবাল অভিযোগ তুলেছেন, অরুণাচলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করাই অনুচিত হয়েছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, নীতীশ-কেজরীবাল যা বলেছেন, তাতে তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

দশ বছর পরে আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠক ডেকে আজ নিজেকে কেন্দ্র ও রাজ্যের সহযোগিতার পথপ্রদর্শক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়নে তাঁর সদিচ্ছা বোঝাতে ছয় বছরের পুরনো মদনমোহন পুঞ্ছি কমিশনের রিপোর্ট আলোচ্যসূচিতে রেখেছিলেন। এমনকী ওই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে কার্যকর করার জন্য রাজনাথ সিংহর নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরির সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেন মোদী। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে সইও হয়ে যায়।

কিন্তু বৈঠকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দেন, রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই এই কমিটি তৈরি হয়েছে। কমিটিতে যে সাত মুখ্যমন্ত্রীকে রাখা হয়েছে, তার মধ্যে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীই বেশি। বৈঠক শেষে মমতা বলেন, ‘‘কমিটিতে নবীন পট্টনায়ককে রাখা হয়েছে। উনি তো দিল্লিতে আসতেই পারবেন না! পঞ্জাবকে রাখা হয়েছে, যেখানে ক’দিন পরেই নির্বাচন। আমি বলে দিয়েছি, এই কমিটি মানছি না।’’ মমতার এই অবস্থান স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে ফেলেছে মোদী সরকারকে।

প্রথম ইউপিএ-সরকারের আমলে ২০০৭-এ বামেদের চাপে পুঞ্ছি কমিশন তৈরি হয়েছিল। ২০১০-এ এই রিপোর্ট পেশ হলেও এত দিন তা শিকেয় তোলা ছিল। সেটাই ধুলো ঝেড়ে বের করেছেন মোদী। পুঞ্ছি কমিশন এক দিকে যেমন রাজ্যপাল নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর মতামত নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিল, তেমনই রাজ্যের কিছু অংশে প্রয়োজনে শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি হলে জরুরি অবস্থা জারির কথাও বলেছিল— যাতে কেন্দ্র সরাসরি সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনীও পাঠাতে পারে।

আজকের বৈঠকের আগেই নীতীশ ও কেজরীবালের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছিলেন মমতা। পুঞ্ছি কমিশনের রিপোর্টের প্রসঙ্গ তুলেই আজ মোদীকে নিশানা করেন নীতীশ। যুক্তি দেন, বর্তমান কাঠামোয় রাজ্যপাল পদটির প্রয়োজন নেই। পদটি তুলেই দেওয়া হোক। কোনও কারণে সেটা সম্ভব না হলে রাজ্যপাল বাছাইয়ের সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর মত নেওয়া হোক। এ জন্য প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন হোক। মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেই বহু রাজ্যের রাজ্যপালকে সরিয়ে নিজেদের পছন্দমাফিক রাজ্যপাল বসিয়েছে। সে দিকে ইঙ্গিত করে নীতীশ বলেন, এ ক্ষেত্রেও সংবিধানে বদল এনে কেন্দ্রের ক্ষমতা খর্ব করা হোক। উত্তরাখণ্ড ও অরুণাচল— দুই রাজ্যেই নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দিয়েছেন রাজ্যপাল। সে দিকে ইঙ্গিত করে নীতীশ বলেছেন, ‘‘আমরা আশা করব, কেন্দ্র নিজের সাংবিধানিক গণ্ডির মধ্যেই থাকবে।’’ ২০০২-এ গোধরা-কাণ্ডের পরে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী গুজরাতে গিয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে রাজধর্ম পালনের উপদেশ দিয়েছিলেন। আজ তা নিয়ে খোঁচা দিয়ে নীতীশ বলেন, ‘‘কোনও রাজ্য সরকার তার রাজধর্ম পালন করছে না বলে যদি প্রতিষ্ঠিত হয়, কেবল সেই বিরলতম পরিস্থিতিতেই কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করুক। তা-ও সেটা হোক সংবিধান মেনে।’’

পুঞ্ছি কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রাজ্যের কোথাও আইন-শৃঙ্খলার অবনতিতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপও যে তাঁরা মানবেন না, তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা-নীতীশ। মমতা বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে কেন্দ্রকে নিজের ক্ষমতায় ভাগ বসাতে দেবে না রাজ্য।’’ আর নীতীশের যুক্তি, ‘‘আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা আর জরুরি অবস্থার মধ্যে যথেষ্ট ফারাক রয়েছে।’’ ত্রিপুরার মানিক সরকারও বলেছেন, ‘‘সংবিধান রাজ্যকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার অধিকার দিয়েছে। যে কোনও অজুহাতে কেন্দ্র তাতে হস্তক্ষেপ করবে, এটা চলতে পারে না।’’

মমতা, নীতীশ, কেজরীবাল, মানিকের পাশাপাশি আজ হিমাচল ও উত্তর-পূর্বের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীরাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ তাঁরা মেনে নেবেন না। উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ যাদব বা কর্নাটকের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার মতো অনেকে আবার বৈঠকে হাজির না-হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বৈঠকের শুরুতে মোদী দাবি করেছিলেন, তিনি কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতার পক্ষে বলেই আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন। ২০০৬-এর পর মনমোহন সিংহ আরও আট বছর গদিতে থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে এই বৈঠকে বসেননি। আজ সে দিকে ইঙ্গিত করেই মোদী বলেন, ‘‘আন্তঃরাজ্য পরিষদ কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সম্পর্ক এবং রাজ্যগুলির নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করার সব থেকে বড় মঞ্চ। কিন্তু ২০০৬-এর পর এত দিন এই বৈঠক হয়নি।’’

প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার পর থেকেই উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলিকে সহযোগিতার কথা বলেছেন মোদী। দাবি করেছিলেন, উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি রাজনীতি করবেন না। আজও একই সুরে কেন্দ্র ও রাজ্যের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজের কথা বলেছেন মোদী। জানিয়েছেন, কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতার নীতি মেনেই রাজ্যের হাতে অনেক বেশি অর্থ তুলে দিচ্ছে তাঁর সরকার। কিন্তু শুধু কথায় যে চিঁড়ে ভিজছে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা-নীতীশরা। চাপের মুখে জবাবি বক্তৃতায় মোদী বলেন— ঐকমত্য তৈরি হওয়ার পরেই সুপারিশ কার্যকর করা হবে।

Nitish Kumar Narendra Modi Government
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy