Advertisement
১৭ মে ২০২৪

শিলচরে পৌঁছনোর পর উদ্বেগ কাটল সম্পর্কক্রান্তির যাত্রীদের

রাতের অন্ধকারে দুর্ঘটনায় পড়েছিল দিল্লি থেকে আসা সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস। রাত বাড়তে খবর মেলে, কেউ জখম হননি। ইঞ্জিনের সামনের দু’টি চাকা বেলাইন হওয়া ছাড়া ট্রেনের কোনও ক্ষতি হয়নি। তবু উৎকণ্ঠা কাটছিল না ট্রেনযাত্রীদের। দীর্ঘক্ষণ উদ্বেগে কাটাতে হয় তাঁদের পরিজনরাও।

ডিটকছড়া স্টেশনে সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস। রবিবার ছবিটি তুলেছেন ট্রেনের যাত্রী বিদিশা রায়চৌধুরী।

ডিটকছড়া স্টেশনে সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস। রবিবার ছবিটি তুলেছেন ট্রেনের যাত্রী বিদিশা রায়চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর ও হাফলং শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৪২
Share: Save:

রাতের অন্ধকারে দুর্ঘটনায় পড়েছিল দিল্লি থেকে আসা সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস। রাত বাড়তে খবর মেলে, কেউ জখম হননি। ইঞ্জিনের সামনের দু’টি চাকা বেলাইন হওয়া ছাড়া ট্রেনের কোনও ক্ষতি হয়নি। তবু উৎকণ্ঠা কাটছিল না ট্রেনযাত্রীদের। দীর্ঘক্ষণ উদ্বেগে কাটাতে হয় তাঁদের পরিজনরাও।

অবশেষে আজ বেলা সাড়ে ১২টায় যাত্রীদের নিয়ে শিলচর পৌঁছে যায় সম্পর্কক্রান্তি। স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন কয়েকশো মানুষ। কারও ভাই ফিরছেন ওই ট্রেনে, কারও মা-বাবা। মাইকে বারবার ঘোষণা করা হচ্ছিল, ট্রেন একের পর এক স্টেশন পেরিয়ে এগিয়ে চলছে। কিন্তু তর সইছিল না। ট্রেন শিলচর স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম ছুঁতেই কার আগে কে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরবে।

উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল জানিয়েছে, ডিটকছড়া ও বান্দরখালের মধ্যে ১২৯.২ কিলোমিটার পয়েন্টে সুড়ঙ্গমুখে জলস্রোত ও পাথর পড়েছিল। প্রবল ব্রেক কষে গাড়ি দাঁড় করান চালক কানুচন্দ্র দাস। গার্ড স্বপনচন্দ্র ধর বেলাইন ইঞ্জিন থেকে পুরো ট্রেনকে বিচ্ছিন্ন করেন। পরে পিছনের ইঞ্জিনে টেনে ট্রেন ডিটকছডা ফিরিয়ে নিয়ে যান আরেক চালক এম গগৈ। রেল সূত্রে খবর, গত রাতে জলস্রোত শুধু ওই সুড়ঙ্গমুখ নয়, আরও তিন জায়গায় লাইনের ক্ষতি করে। দামছড়া ও চন্দ্রনাথপুর এবং হারাঙ্গাজাও ও জাটিঙ্গার মধ্যে ধস নামে। নিউ জাটিঙ্গা ও লামপুরের মধ্যে ৫০ মিটার লাইন শূন্যে ঝুলে যায়। নিচ থেকে মাটি পুরো সরে গিয়েছিল।

সম্পর্কক্রান্তি দুর্ঘটনার খবরে জেনারেল ম্যানেজার এইচ কে জাগ্গি নিজে গত রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন। লামডিং এবং বদরপুর থেকে প্রচুর কর্মী নিয়ে যায় দু’টি রিকভারি ভ্যান। জেনারেল ম্যানেজারের উপস্থিতিতে সকলের প্রচেষ্টায় দ্রুত ধস সরিয়ে রেললাইন চলাচলের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ অফিসার পি জে গোস্বামী জানিয়েছেন, এ দিন পাহাড় লাইনে কোনও ট্রেন চালানো হয়নি। গত রাতে আলিপুরদুয়ারগামী যে বিশেষ ট্রেন শিলচর থেকে ছাড়া হয়েছিল, সেটিকে বদরপুর ফিরিয়ে এনে বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়। এ দিন সকালে শিলচর-গুয়াহাটি ট্রেন বাতিল করা হয়। গত রাতে গুয়াহাটি-শিলচর ট্রেনটিকে লামডিঙে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরে লামডিং-গুয়াহাটি পথে সেটিকে চালানো হয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসেরও গুয়াহাটি-শিলচর যাত্রা বাতিল হয়। আগামী কাল যে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ছাড়া হতো, এরও শিলচর-গুয়াহাটি চলাচল বাতিল হয়েছে। তবে গুয়াহাটি থেকে রুটিন মেনেই ট্রেনটি চলবে।

গোস্বামী আশাবাদী, আজ রাতের মধ্যেই লাইন ট্রেন চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠবে। প্রথমে মালগাড়ি চালিয়ে পরীক্ষা করা হবে। পরে যাত্রী রেলের অনুমতি দেওয়া হবে। তাঁর আশা, আগামী কালই যাত্রিবাহী ট্রেন চালানো যেতে পারে। শিলচর ফিরে সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেসের যাত্রীরা জানান, দু’দিকই দেখা দরকার। যাত্রীরা যেন ঝুঁকির মুখে না পড়েন। আবার দ্রুত ট্রেনও চালানো প্রয়োজন। চতুর্দিকে রাস্তাঘা্ট বন্ধ। স্টেশনে স্টেশনে অসহায় মানুষেরা ট্রেনের অপেক্ষায়। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সাগ্নিক চৌধুরী গত কাল গুয়াহাটি থেকে সম্পর্কক্রান্তিতে চড়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘বৃষ্টি হচ্ছিল। ফলে ডাইভারশন অংশ নিয়ে ভয় ছিল। ওই জায়গা পেরোতেই স্বস্তি মেলে। শৌচাগারে যাই। তখনই প্রবল ঝাঁকুনি। টাল সামলাতে পারছিলাম না। বেরিয়ে দেখি, আমাদের কামরার এক বয়স্ক যাত্রী আসন থেকে মেঝেতে পড়ে গিয়েছেন।’’ তিন মাসের শিশুকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন শিলচরের বিপ্লব ও বিদিশা রায়চৌধুরী। বিদিশা বলেন, ‘‘ব্রেক কষতেই প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাই। কী হল! কেউ কিছু বলতে পারছে না। কোলের শিশুকে নিয়ে সে যে কী অভিজ্ঞতা! ডিটকছড়ায় ফিরে দেখি, বাইরে একটুকু আলো নেই। ঝড়-তুফান, শিলাবৃষ্টি।’’

বাচ্চা নিয়ে ভোগান্তির কথা বললেন সোনাই রোডের শাহজাহান আলম বড়ভুঁইঞা ও সায়না বেগম। শিলচর তারাপুরের প্রবীর বিশ্বাস উদ্বেগে ছিলেন বাড়ির লোকেদের কথা ভেবে।

খাওয়ার সমস্যার কথা শোনালেন দুধপাতিলের বাসিন্দা নীলু সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে রেল দফতরের উচিত ছিল, বিনামূল্যে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা। কিন্তু প্যান্ট্রি-কার থেকে টাকা দিয়েই সব কিনতে হয়েছে। এমনকী, কিছু সময় পরে ১০ টাকার জলের বোতল ২০ টাকা, ২৫ টাকায় বিক্রি করা হয়।’’ রেল খাওয়ার ব্যবস্থা না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন দিল্লি থেকে আসা বিজয়কুমারও।

তবে তাঁদের জন্য শিলচর স্টেশনে সমস্ত ধরনের আতিথেয়তার ব্যবস্থা ছিল। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে রোটারি ক্লাব ও মারোয়াড়ি যুব মঞ্চ শিশুখাদ্য, ঠাণ্ডা পানীয়, বিস্কুট, জলের বোতল দেয়। আগে থেকে সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলার ডেভেলপমেন্ট কমিশনার মধুমিতা চৌধুরী ও ম্যাজিস্ট্রেট অনুরাগ ফুকন। দলবল নিয়ে হাজির ছিলেন ডেপুটি পুলিশ সুপার সুধাংশুকুমার দাস। শিলচর মেডিক্যাল কলেজও স্বাস্থ্যকর্মীদের মজুত রেখেছিলেন শিলচর স্টেশনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

somporkokranti express accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE